ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাজনীতিতে বিএনপির ‘কৌশলি’ চমক

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ৩০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজনীতিতে বিএনপির ‘কৌশলি’ চমক

এসকে রেজা পারভেজ : দেশে রাজনীতির ময়দান হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় সংসদে বিএনপির সাংসদদের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে। বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বিষয়টিকে দলের ‘কৌশলি’ চমক বললেও দলটির সূত্রগুলো বলছে, ভেতরের খবর হচ্ছে দলের শৃঙ্খলা রাখতে শপথের পক্ষে অবস্থান নিতে ‘উপায় ছিলো না’ দলটির। শপথের পক্ষে অবস্থান না নিলে নির্দেশ না মেনেই শপথ নিতেন বিএনপির সাংসদরা।

এদিকে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় খোদ দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি। তৃনমূল পর্যায় তো বটেই দলের অনেক নীতি নির্ধারকও বিষয়টি নিয়ে এতোটাই বিব্রত যে, এই মুহূর্তে তারা কেউই এই প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না।

তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি মানতেই হবে। এর বাইরে কিছু বলার নেই।’

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা যদি অতিউৎসাহ না দেখাতো তাহলে বিএনপি সংসদে শপথ নেয়ার দায়িত্বে অনড় থাকতো। বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ায় বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে বিএনপিকে। জাহিদুর রহমানের শপথের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকিদের শপথ নেয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকলে তাদেরকে একাধিকবার সতর্ক সংকেত দেয়া হয় দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

কিন্তু শপথ নেয়ার মেয়াদ কমতে কমতে শেষ মুহূর্তে চলে আসায় বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা শপথ নেয়ার বিষয়ে অতি উৎসাহ দেখায়। এই পরিস্থিতিতে রোববার বিএনপির নির্বাচিতদের নিয়ে বৈঠকে বসেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। সেখানে স্কাইপ-এ লন্ডন থেকে যুক্ত হন তারেক রহমান। নির্বাচিতদের দলীয় সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করিয়ে দেন দায়িত্বশীলরা।  তারেক রহমানও নির্বাচিতদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকিরা সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও পুন:নির্বাচনের কথা বলতে শপথ নেয়ার পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন।  শপথ নেয়ার বিষয়ে নির্বাচিত সাংসদদের এই অতি উৎসাহ দেখে পরে তারেক রহমানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেখানে তারা শপথ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে তারেক রহমানকে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেন। পরে দলের ‘শৃঙ্খলা এবং ভাবমুর্তি রক্ষা’য় তারেক রহমান শপথ নেয়ার বিষয়ে তার অবস্থান জানান বলে সূত্রের দাবি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে সংসদে কথা বলার সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংসদ ও রাজপথের সংগ্রামকে যুগপৎভাবে চালিয়ে যাওয়াকে আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করছি।

জাতীয় রাজনীতির এই সংকটময় জটিল প্রেক্ষিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের অংশ হিসাবে আমাদের দল সংসদে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আশা করি দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আমাদের এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় অবিলম্বে একটি অবাধ জাতীয় নির্বাচন আদায় করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রীসহ রাজনৈতিক দলের সকল বন্দিকে মুক্ত করে আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত জাতীয় ঐক্যমতের বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

এদিকে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় বিভিন্নপক্ষের সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গে খোদ দলের ভেতরেও সমালোচনা চলছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিমত, যদি খালেদা জিয়ার জামিন শর্তে শপথ নেয়া যেতো তাহলে বিএনপি লাভবান হতো। কিন্তু এভাবে সংসদে যাওয়ায় মানুষের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা কমলো। বিষয়টি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপরিপক্কতা এবং দলের চেইন অফ কমান্ড মেনে চলার বিষয়টি নিয়ে। বিএনপির নির্বাচিতদের সাংসদ হিসেবে শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নীতি নির্ধারকদের বড় একটি অংশ এতে অখুশি। যদিও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তারা কিছু বলছেন না। জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ায় এই বিএনপির নীতি নির্ধারকরাই তাকে বহিস্কার করেছেন এবং বলেছেন, বিএনপি একটি বট গাছ। এখান থেকে দু’একটি পাতা ঝড়ে গেলে কিছু হবে না। শপথ নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যে শপথ নিয়েছি এর জন্য অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন।  কিন্তু সময়ই প্রমাণ করবে শপথ নেয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কিনা। আগে আমরা শপথ নেইনি তার মানে এখন নেবো না, তা তো হতে পারে না। আজকে যে শপথ নিয়েছি সেটা ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করার জন্যই নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে রাজনীতি গরম হয়ে গেছে। এটা নিঃসন্দেহ চমকের মতো সংবাদ। রাজনীতিতে ইউটার্ন মনে করতে পারেন। আমাদের সিদ্ধান্ত অন্যরকম ছিল। একটি কথা যেটা আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে কোনও সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত থাকবে সেটি সঠিক নয়। তাই শপথের সিদ্ধান্তকে খুব খারাপ সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না। আমাদের ন্যূনতম স্পেসটাকে কাজে লাগাতে চাই। সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছু হয়। সময় ঠিক করে দেবে আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল নাকি সঠিক।’

এদিকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সকলে শপথ নিলেও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেকে রেখেছেন রহস্যে। শপথ নিতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও বিষয়টি তিনি নাকচ করে দেন।

নি‌জে শপথ গ্রহণের বিষয়ে স্পিকারকে কোনও চিঠি দেননি কিংবা সময় আবেদন করেননি বলে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমার শপথ নেয়ার বিষয়ে আমি কোনও চিঠি দেইনি। স্পিকারের কাছে কোনও সময়ও চাইনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কিছু কিছু পত্রিকা লিখেছে আমি শপথের জন্য সময় চেয়েছি। একটি পত্রিকা লিখেছে আমি আজ শপথ গ্রহণ করবো। এটা সাংবাদিকতার এথিক্সের মধ্যে পড়ে না।

সবাই শপথ নিয়েছে। কিন্তু আমি শপথ নেইনি। এটা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু হয় না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৯/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়