ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১১, ১৯ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান: দেখতে দেখতে দরজার কড়া নাড়তে শুরু করেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসর। বিশ্বকাপের এবার আয়োজনটা হচ্ছে জন্মভূমি ইংল্যান্ডের মাঠে। এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে অনেক আগের থেকেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেছে উন্মাদনা।

দশটি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। প্রত্যেকটা দল সবাই সবার মুখোমুখি হবে। সেরা চারটি দল খেলবে সেমিফাইনালে। এরপর ফাইনাল দিয়ে শেষ হবে এ আসর।  মাঠের ক্রিকেট উন্মাদনা ছড়ানোর আগে দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিকথা।

আজ থাকছে ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপের ইতিহাস।



বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরটি আদতে প্রথম বিশ্বকাপের অনুলিপি। ইংল্যান্ডের ছয়টি ভেন্যুতে আট দলের টুর্নামেন্ট। পৃষ্ঠপোষকও একই, প্রুডেনশিয়াল অ্যাসুরেন্স কোম্পানী। আর এবারও সেই ক্লাইভ লয়েডের হাতেই ওঠে ট্রফি। তবে পার্থক্যটা শুধু গড়েছে আইসিএলের মতো ক্যারি পেকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট। ১৯৭৭ সালে আইসিসির সঙ্গে অস্ট্রেলীয় ব্যবসায়ী ক্যারি পেকারের প্রবল মতবিরোধের জের ধরে আয়োজন করেন এ ওয়ার্ল্ড সিরিজ। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তাতে যোগ দেন বিশ্বের নামকরা সব ক্রিকেটাররা। আইসিসি তখন অস্তিত্ব সংকটেই ভুগছিল।
 


দিনের আলোয় আইসিসির সাদামাটা ক্রিকেট প্রদর্শনীর বিপরীতে ক্যারি পেকার সামনে নিয়ে আসেন চকচকে রঙ্গিন ক্রিকেটের প্রদর্শনী। সাদা পোশাকের জায়গায় আসে রঙ্গিন পোশাক। লাল বল বদলে আসে হলুদাভ সাদা বল। ফ্ল্যাড লাইটের আলোয় এক গাদা ক্যামেরার সামনে দিবারাত্রির ম্যাচ। চ্যানেল নাইন সে সময়ের খেলা সম্প্রচার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেরই প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায় ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট। ক্ষতির পরিমাণটা হয় অস্ট্রেলিয়ারই বেশি। মোহ কাটাতে পারেননি ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি, রডনি মার্শের মত তারকারা। ইংল্যান্ড থেকে যোগ দেন টনি গ্রেগ ও ডেরেকের মতো বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডাররা।

তবে ক্যারি পেকারের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে প্রথম আসরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব বলে স্বীকৃত 'আইসিসি ট্রফি'র দুই ফাইনালিস্ট শ্রীলঙ্কা ও কানাডার সঙ্গে ছয়টি টেস্ট খেলুড়ে দলের অংশগ্রহণে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত মহাযজ্ঞ। প্রথম আসরের মতো এবারও দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনুষ্ঠিত হয় রাউন্ড-রবিন লিগ। গ্রুপ ‘এ'তে ছিল অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও নবাগত কানাডা এবং ‘বি’ গ্রুপে খেলে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল খেলে সেমি-ফাইনাল। এরপর ফাইনাল।

ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান ম্যাচ ছাড়া গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচই ছিল একতরফা। আগের আসরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ হারে। এবারও এমনই একটি ম্যাচ হারে ইংলিশদের কাছে। ইংল্যান্ডের দেওয়া ১৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তারা থামে ১৫১ রানে। এছাড়া এ বিশ্বকাপে  ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৪৫ রানে গুটিয়ে যায় কানাডা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড হিসেবে এটা টিকে ছিল ২৪ বছর।

২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সেই কানাডাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অলআউট হয় মাত্র ৩৬ রানে। তবে আরেক নন টেস্ট প্লেয়িং দল শ্রীলঙ্কা বড় অঘটন ঘটায়। ভারতকে ৪৭ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে দলটি। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম আপসেট হিসেবে বিবেচিত হয় এ ম্যাচটিকে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দুই বছর পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

গ্রুপ পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলেও সেমি-ফাইনালে দুটি ম্যাচই বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। প্রথম সেমিফাইনালে ৮ উইকেটে ২২১ করে ইংল্যান্ড। জবাবে ওপেনার জন রাইটের ব্যাটে ভালো শুরুর পর মাঝে পথ হারায় কিউইরা। শেষদিকে ছোট ছোট ইনিংসে লড়াই করেছিলেন ওয়ারেন লিস, রিচার্ড হ্যাডলিও ল্যান্স কেয়ার্ন্স। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৯ রানের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের মধ্যে রোমাঞ্চকর লড়াই হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রান করে ফেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দলটি। অলআউট হয়ে যায় ২৫০ রানে।
 


সেমিফাইনালের মতো ফাইনালের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিও দারুণ রোমাঞ্চতায় ঠাঁসা। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৯ রান তুলতেই ডেসমন্ড হেইন্স, গর্ডন গ্রিনিজ, আলভিন কালিচরণ, ক্লাইভ লয়েডকে হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন ভিভ রিচার্ডস। খেলেন হার না মানা ১৩৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। তবে তার ইনিংসকে ম্লান করে দেন অখ্যাত এক খেলোয়াড় কলিস কিং। অফফর্মের কারণে তার ফাইনাল খেলা নিয়েও ছিল সন্দেহ। ৬৬ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় খেললেন ৮৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। তাতে ২৮৬ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় ক্যারিবিয়ানরা।

২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১২৯ রানের উদ্বোধনী জুটি পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেন দুই ওপেনার বয়কট ও ব্রিয়ারলি ধীর গতির ব্যাটিং করে। ৩৮ ওভারে আসে এ রান। এরপর রানের গতি বাড়াতে গিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ভেঙে পড়ে দলটি। মাত্র ৭ রান তুলতে শেষ ৭টি উইকেট হারায় দলটি। ৯২ রানের জয়ে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয় করে ক্যারিবিয়ানরা।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ওয়েস্ট ইন্ডিজের গর্ডন গ্রিনিজ। ৬২.৩২ গড়ে করেন ২৫৩ রান। তবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন সতীর্থ ভিভ রিচার্ডস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ১৩৮ রান। আসরে ২টি সেঞ্চুরির একটি করে করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ইংল্যান্ডের মাইক হেনড্রিক। ১০ উইকেট নেন তিনি। আসরের সেরা বোলিং ফিগারটি অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান হার্স্টের। ২১ রানের খরচায় পেয়েছেন ৫ উইকেট। সর্বোচ্চ ডিসমিসাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটরক্ষক ডেরেক মারের ৭টি।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়