ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কালীগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ১৪ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কালীগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ

কালীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধ কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়া

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়ার বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। সাতজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা দেখিয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত ভাতা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।



অভিযোগে বলা হয় অনৈতিকভাবে টেম্পারিং মুক্তিবার্তা ও গেজেট তালিকার সঙ্গে কোনো ধরনের মিল না রেখে ভুয়া নাম ও ভুয়া মুক্তিবার্তা নাম্বার এবং ভুয়া গেজেট নাম্বার দিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। আর এসব অভিযোগের কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়কমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বাবুল মিয়া নামে এক মুক্তিযোদ্ধা ।



কালীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা মো. বাবুল মিয়ার  অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার ৬৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা বিতরণ কার্যক্রমের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সে তালিকার মধ্যেই ১০ নং ক্রমিকে জজ পালমা সাময়িক সনদ নাম্বার ম-১৩২২৩৫ ও গেজেট নং- ১৫৯ দেখানো হয়েছে। ক্রমিক নং ১২ তে মো. ফয়েজ উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদ নং ম- ১০০১৯৩ এবং গেজেট নং ১৫৬ দেখানো হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে উক্ত গেজেট নাম্বার দুটি কালীগঞ্জ উপজেলার নয়। এ দুটি নম্বর গাজীপুর সদর উপজেলার। কাজেই এ দুটি নাম ও নম্বর কালীগঞ্জ উপজেলায় দেখানো মানেই ভুয়া।



তালিকার ২১ নং ক্রমিকে জাহাঙ্গীর আলম সাময়িক সনদ নং ম- ১৫১৫৫, মুক্তিবার্তা নং ০১০৬০৪০৫০৮ ও গেজেট নং ১৩৪৬ দেখানো হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে উল্লেখিত গেজেট ও মুক্তিবার্তা নাম্বারে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম হলো মেজবাহ উদ্দিন সরকার, পিতা মো. আব্দুল আহাদ, গ্রাম পিপলিয়া, ইউনিয়ন নাগরী, থানা কালীগঞ্জ ও জেলা গাজীপুর। তালিকার ২৮ নং ক্রমিকে ডেইজি রোজারিও নাম দেখানো হয়েছে। কিন্তু মুক্তিবার্তায় ১০৬০৪০৬০৯ ও গেজেট নাম্বার ১৬৯৭ তে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম মন্টু গমেজ, পিতা আন্তনি গমেজ, গ্রাম বড় সাতানিপাড়া, থানা কালীগঞ্জ, জেলা গাজীপুর। তালিকার ৪৭ নং ক্রমিকে ভুয়া নাম মো. রাসেল মাঝি, মুক্তিবার্তা নাম্বার ০১০৬০৪০২১৫, সাময়িক সনদ নম্বর ম- ১৭৬২৬৫ কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম নাসির উদ্দিন, পিতা. রজব উদ্দিন, গ্রাম কাপাইস, ইউনিয়ন জামালপুর, কালীগঞ্জ, গাজীপুর। তালিকার ৪৮ তালিকার এ মো. কাওসার শেখ সাময়িক সনদপত্র নং ১০০৪৫০, মুক্তিবার্তা নং ০১০৬০৪০২৭৩, গেজেট নং ১৬৭৭। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম মৃত হাসেন আলী, পিতা. সৈয়দ আলী, গ্রাম মাঝুখান, কালীগঞ্জ, গাজীপুর। তালিকার ৫১ নং ক্রমিকে ভুয়া আলীনূর ফাহাদ সাময়িক সনদপত্র নং- ৯৩৯৩১, মুক্তিবার্তা নং ০১০৬০৪০৫৯৮, গেজেট নং ১৬৪৫ দেখানো হয়েছে। উক্ত নম্বরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. ফজলুল হক মোল্লা, পিতা. আলমাছ মোল্লা, গ্রাম জাঙ্গালিয়া, কালীগঞ্জ, গাজীপুর। তালিকার ৫৬ নং ক্রমিকে ডা. শাহজাহান সাময়িক সনদ নং ১৬১৩৩০, মুক্তিবার্তা নম্বর ০২০৩০০৩০৯১০, তালিকার ক্রমিক নং ৫৭ তে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব জালাল এর স্ত্রী মেহেরুন্নেছা, ক্রমিক নং ৫ তে এম হামিদুর রহমান, উক্ত নামগুলির সঙ্গে মুক্তিবার্তার নাম্বার ও গেজেট নাম্বার গাজীপুর জেলার নয়। উক্ত নাম্বারগুলো কিভাবে তালিকায় এলো তা যাচাই ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগপত্রে।

 


অভিযোগে আরো বলা হয়, উপজেলার নতুন ৬৬ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিজনে ৫১ হাজার টাকা করে ভাতা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, তালিকার ৭ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম দেখিয়ে আরো ৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়া নিজের কাছে রেখে দেন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অনৈতিক কার্যকলাপ, দুর্নীতিবাজ, মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ এনে উপজেলা কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় ।


এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অতি সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি আরো বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তাদের কাছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নেই। ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় ছিল পরে সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাদের নামের তালিকা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

 


রাইজিংবিডি/গাজীপুর/১৪ আগস্ট ২০১৪/রফিক সরকার/শামসুল







রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়