ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভোলায় নৌযান সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

ফয়সল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১৯ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভোলায় নৌযান সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

ভোলায় প্রতিদিন এইভাবে চলাচল করছে লঞ্চ

ভোলা প্রতিনিধি : ভোলার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীকে ঢাকা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে হয় নৌপথেই।

ভোলায় যাতায়াতের জন্য সড়ক পথ যা আছে সেখানেও যুক্ত রয়েছে নৌপথ। এখানে ভরসা ফেরি ও সি-ট্রাক। কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফেরি ও সি-ট্রাক বিকল হয়ে যায়। রয়েছে ফেরি সংকট। জোয়ারের পানিতে ঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের। বিশেষ করে ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার ২৫টি রুটে সারা দেশের সঙ্গে ভোলা ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষা হয়ে থাকে। এর মধ্যে নৌপথে ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-বরিশাল, ভোলা-পটুয়াখালী, ভোলা-নোয়াখালী রুট গুরুত্বপূর্ণ। রয়েছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর-বরিশাল ফেরির রুট। কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখা যায়, এসব রুটে ফেরি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। তখন যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকদের অভিযোগ, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে রয়েছে মাত্র দুটি ফেরি। তাও আবার প্রায়ই বিকল হয়ে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের সমস্যা তো রয়েছেই।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জোয়ারের কারণে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উভয় পারেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ রুটে আরো একটি ফেরি দিলে সমস্য কিছুটা কমত। নিরাপদ লঞ্চ চলাচল না করায় সি-ট্রাকের ওপরই নির্ভর করতে হয় যাত্রীদের। তাই এ রুটে আরো সি-ট্রাক প্রয়োজন।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোলা-বরিশাল ফেরি রুটে চারটি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ফেরি ২৪ দিন ধরে বিকল। মেরামত না করায় যাত্রীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

একজন ঘাট কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ জুলাই থেকে দোলনচাপা ও ২৮ জুলাই থেকে কৃষ্ণচূড়া নামের দুটি ফেরি বিকল রয়েছে। হাসনাহেনা ও অপরাজিতা নামের অন্য দুটি ফেরি চলাচল করছে। বিকল ফেরি দুটি কবে চালু হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সমস্যা রয়েছে ভোলার দৌলতখান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চ ঘাটেও।

এক বছর ধরে ঘাটটি জরাজীর্ণ থাকলেও অবস্থা উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ঘাটের ইজারাদার মাকসুদুর রহমান।

এদিকে ভোলার ২০০ কিলোমিটার নৌপথকে ঝুঁকিপূর্ণ (ডেঞ্জার জোন) হিসেবে চিহ্নিত করে ওই এলাকা দিয়ে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত আট মাস সব ধরনের অনিরাপদ (৬৫ ফুটের কম দীর্ঘ) নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এই রুটে শুধু সি-ট্রাক চলাচলের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব রুটে ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব ছোট লঞ্চেই নদী পাড়ি দিচ্ছে হাজারো মানুষ।

২০০ কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে চরফ্যাশন-ঢালচর-মনপুরা-কুকরি-মুকরি, লালমোহন-কালাইয়া, তজুমদ্দিন-মনপুরা-চর জহির উদ্দিন-হাতিয়া, বোরহানউদ্দিন-বরিশাল-চর জহির উদ্দিন-মনপুরা-আলেকজান্ডার, দৌলতখান-আলেকজান্ডার-মনপুরা-হাজিরপুর, ভোলার তুলাতলী-রামগতি-মাঝের চর, ভেলুমিয়া-ধুলিয়া, ইলিশা-লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী-রামদাসপুর রুট বেশি ঝুকিপূর্ণ। এসব রুটে ছোট ছোট লঞ্চ ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলাচল করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে তজুমদ্দিন-মনপুরা ও ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুটে দুটি সি-ট্রাক চলাচল করছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব রুটে আরো অন্তত সাতটি সি-ট্রাক প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নৌযান চলাচল করছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অনিরাপদ লঞ্চ যাতে চলাচল করতে না পারে তা পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষক দল। তারা মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে ছোট ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ডেঞ্জার জোনে নিরাপদ নৌযান চলাচল না করলে ঝুঁকি থাকে। এ মৌসুমে নতুন কোনো সি সার্ভে চালুর পরিকল্পনা নেই। বরিশাল জোনে চারটি সি-ট্রাক চালু আছে। প্রয়োজনে আগামীতে আরো সি-ট্রাক দেওয়া হতে পারে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ আগস্ট ২০১৪/ফয়সল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়