ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বড় গ্রামের বড় দিঘি কমলা রানী

কাজী আশরাফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বড় গ্রামের বড় দিঘি কমলা রানী

কাজী আশরাফ: দিঘি যে এত বড় হতে পারে নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। স্থানীয়রা কি এ কারণে এর নাম ‘সাগরদিঘি’ রেখেছেন? আশপাশে জনবসতি আছে। দিঘির এক পাশ দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। সেই পথ শান্ত, শীতল, ছায়াঘেড়া। দিঘির জলও কি এমন শীতল? হতে পারে। দিঘির অপর প্রান্তে একদল ছেলেমেয়ে জলে নেমেছে, তারা হাত-পা ছুড়ে আনন্দে মেতেছে। এই তো কৈশোরকালের ছবি, কিশোর-কিশোরীর দুরন্তপনা দেখতে ভালো লাগছিল। এমন সময় মনে এলো কথাগুলো।

এ দেশে বেশ কিছু দিঘি আছে যেগুলো খুব বিখ্যাত। দিঘিগুলো ঘিরে রয়েছে নানা গালগল্প। সব হয়তো গল্প নয়, কিন্তু এই সময়ে এসে সতত্য নির্ণয় করা কঠিন বটে! আমরা সেটা চাইও না। আপাতত এই দিঘির পেছনের গল্প জানতে চাই। বয়স্ক এক ব্যক্তির পথ আটকালাম। কারণ সেই গল্প বয়স্করাই ভালো বলতে পারবে। তিনি বাজারে যাচ্ছিলেন। নাম জমিরউদ্দিন হাওলাদার। আমরা ঢাকা থেকে গিয়েছি শুনে অবাক হলেন না। উল্টো আমরাই অবাক হলাম তার কথা শুনে। এই দিঘি দেখতে দূর থেকে অনেক লোক আসেন। অনেকে দিঘির জলে নেমে গোসল করবেন এই আশায় সঙ্গে অতিরিক্ত জামাকাপড়ও নিয়ে আসেন। আমরা সঙ্গে কিছু নেইনি। অবশ্য দিঘির পারে ড্রেস চেঞ্জের কোনো ব্যবস্থা দেখতে পেলাম না। সত্যি বলতে সেখানে একটা টিনের সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। কিন্তু জমিরউদ্দিন দিব্য চোখে যেন দেখতে পাচ্ছিলেন এমনভাবে বলতে শুরু করলেন সেই গল্প।

রাজার মেয়ের নাম কমলা। রাজা তার আদরের এই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন তারই সেনাপ্রধানের সঙ্গে। হঠাৎ রাজ্যে পানি সংকট দেখা দিল। উপায় না পেয়ে রাজা বিশাল বড় জায়গা নিয়ে একটা দিঘি খনন করেন। অথচ কি আশ্চর্য! দিঘিতে এক ফোঁটা পানি নেই। রাজা একদিন স্বপ্নে দেখলেন তার মেয়ে যদি একটানা সাতদিন দিঘিতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে পানি উঠবে। প্রজার কল্যাণে সেকথা কমলাকে জানানো হলো। তিনি রাজি হলেন এবং দিঘিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। একটু একটু করে পানি উঠতে শুরু করল। পঞ্চম দিন কমলার বুক সমান পানি উঠল। ষষ্ঠ দিন পানি নাক ছুঁইছুঁই। শর্ত ছিল সাত দিন পার না হলে কমলা উঠে আসতে পারবে না। ফলে সপ্তম দিনের শুরুতেই কমলা পানিতে ডুবে প্রাণ বিসর্জন দিলো। এই হলো কাহিনি।
 


মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় রাজা দিঘির নাম দিলেন কমলা রানীর দিঘি। লম্বা এই দিঘির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষগুলো ছোট ছোট দেখা যায়। জমিরউদ্দিন আরেকটি মজার ঘটনা জানালেন। আমরা এর আগে অবশ্য তাকে বাজারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কথা বলতেই যেন বেশি মজা পাচ্ছিলেন। বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে বললেন, দাদার আমলে নাকি তিনি শুনেছেন, মানুষের যার যা কিছু প্রয়োজন তার কিছু অংশ দিঘির পারে সন্ধ্যায় রেখে দিলে পরদিন সকালে সেই জিনিস অলৌকিকভাবে দিঘির পারে দেখা যেত। আমরা তার কাছে জানতে চাইলাম, এখন আর ওঠে না কেন? তিনি সেই ব্যাখ্যাও দিলেন। একদিন নাকি কোনো এক মহিলা দিঘির পারের সেই জিনিস চুরি করেছিলেন তারপর থেকে আর ওঠে না।

যাই হোক, কথা শুনতে শুনতে আমরা কখন দিঘির পারে বসেছিলাম বুঝতে পারিনি। ভালো লাগে পুরনো দিনের কথা শুনতে, জানতে। কিন্তু এতবড় একটা দিঘি। মানুষও দেখতে আসে। তাহলে এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই কেন? অন্তত এর ইতিহাস তো কোথাও লিখে রাখা যেত যাতে পর্যটক সেগুলো পড়ে দিঘির ইতিহাস জানতে পারত। তাহলেই আর জমিরউদ্দিনকে আমাদের পেছনে এতটা সময় নষ্ট করতে হতো না। আমরা এসবই ভাবছিলাম। ‘দিঘির জলে কার ছায়া’ একটি উপন্যাসের নাম। কে লিখেছেন মনে পরছে না। সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদ। দিঘির জলে গাছের লম্বা ছায়া দেখে চমকে উঠলাম। আরে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। এবার সত্যি ফেরার পথ ধরতে হবে। আমরা ফিরে এলাম হবিগঞ্জ শহরে।

সত্যি বলতে একথা বলা হয়নি, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ইউনিয়নে এই দিঘির অবস্থান। শুনেছি এই ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়। এত বড় দিঘি আছে যার বুকে তাকে তো বড় হতেই হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়