ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী থেকে বলছি

মো. ইয়ানুর হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী থেকে বলছি

মো. ইয়ানুর হোসেন : সকালের কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। এরই মাঝে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে, পথের দুই পাশে ফুলের বাগান। সাইকেলে করে বাজারে ফুল নিয়ে যাচ্ছেন চাষীরা। বিভিন্ন রঙের বাহারি ফুলের সঙ্গে কুয়াশার সৌন্দর্য তখন মুগ্ধ হওয়ার মতো রূপ ধারণ করেছে। বলছিলাম যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ফুল বাগানের কথা।

আমি ও আমার বন্ধু গালিব গিয়েছিলাম গদখালীর এই ফুল বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। চারদিকে কুয়াশার আচ্ছাদন আর রকমারি ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি সামনে দেখছি গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিয়াসসহ বিভিন্ন নাম না জানা ফুলের বাগান। এতদিন পর্যন্ত ফুলের সৌন্দর্য বলতে শুধুমাত্র ফুলের দোকানে সাজিয়ে রাখা ফুলগুলোকেই বুঝতাম। কিন্তু যখন নিজের চোখের সামনে ফুল বাগানের অসাধারণ দৃশ্য দেখছিলাম তখন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। বাতাসে ফুলের মিষ্টি সুবাস, মৌমাছির গুঞ্জন, প্রজাপতি উড়ে বেড়ানো আর রঙের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসই হতে চায় না আমাদের দেশে এত সুন্দর জায়গা আছে।

 


বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা হালকা হতে থাকে এবং অনেক দূর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। যতদূর দৃষ্টিসীমা ততটুকু শুধু বাহারি রঙের ফুলের জয়জয়কার। বিঘার পর বিঘা গাদা ফুলের হলুদ সমুদ্র, গ্রীনহাউজে সেড ভর্তি জারবেরার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, গোলাপের কলির সঙ্গে ভ্রমরের গুঞ্জন, রজনীগন্ধার মায়াবী ঘ্রাণ আর বিভিন্ন রঙের গ্লাডিয়াসসহ নাম না জানা বিভিন্ন ফুলের অপার্থিব সৌন্দর্য।

 


বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ ফুলের সরবরাহ হয় এখান থেকে। এখানে ফুল চাষের গোড়াপত্তন হয় ৮০ দশকের শেষের দিকে। এখন ফুল চাষই হচ্ছে স্থানীয়দের প্রধান জীবিকার মাধ্যম। বর্তমানে গদখালী ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন এখানে। পানিসারা, শার্শা, মনিরামপুরসহ আশাপাশের এলাকাগুলো এখন ফুলের স্বর্গরাজ্য। কেউ কেউ একে ফুলের রাজধানীও বলেন। বলবে নাই বা কেন- যেদিকে চোখ যায় শুধু মনে হয় রঙের খেলা। ফুলের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের সঙ্গে ফুল বাগানগুলোতে প্রায় সারাদিনই চলে ফুলচাষীর কর্মব্যস্ততা। বাগানের পরিচর্চা চলে বিকেল পর্যন্ত। শেষ বিকেলে চোখে পড়বে ফুল ওঠানোর দৃশ্য।

 


ফুল বিক্রির জন্য এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার।  প্রতিদিন সকালে জমে উঠে এই বাজার। সাইকেলে, ভ্যানে করে ফুল নিয়ে হাজির হন চাষী। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার জেলা থেকে এখানে ফুল কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ফুলের দাম এখানে খুবই কম। আমরা ৭৫ টাকা দিয়ে প্রায় ৩০০ গোলাপ কিনেছিলাম। দর্শনার্থীরা ভোরে এখানে গেলে অন্যরকম অভিজ্ঞতা পাবেন। সকাল আটটা পর্যন্ত স্থায়ী হয় এই বাজার।

 


যেভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান থেকে বেনাপোলগামী গ্রীনলাইন, সোহাগ, শ্যামলী, ঈগল পরিবহনের বাসে চড়ে ঝিকরগাছার গদখালী বাজারে নামবেন। সেখান থেকে অটোভ্যান বা রিকশায় ফুলবাগানে। বাস ভাড়া ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। চাইলে রাতে রওনা হয়ে সারাদিন ঘুরে রাতেই ঢাকা ফিরতে পারেন। ওখানে স্থানীয় হোটেলে ভালো খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। থাকতে চাইলে আপনাকে যশোর শহরে আসতে হবে। শহরে ভালো মানের অনেক হোটেল আছে থাকার জন্য।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়