আবার ফিরে আসুক সুন্দর পৃথিবীর প্রাণ
মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে || রাইজিংবিডি.কম
করোনাভাইরাসে থমকে গেছে পৃথিবী। থমকে গেছে প্রিয় মাতৃভূমিও। এত দ্রুত মানুষের জীবনচিত্র ভিন্নরূপ নেবে যা আমরা কখনো কল্পনাই করিনি।
কভিড-১৯ প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বের অনেক দেশে সচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের দেশেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার এখন পর্যন্ত একমাত্র উপায় হোম বা সেলফ কোয়ারেন্টাইন।
দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো আমাদের দেশ প্রযুক্তি কিংবা অর্থনৈতিকভাবে ততটা উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারেনি। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হলেও বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার কারণে তারা এখন চাপে আছে। মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই আগের চেয়ে দরিদ্র হয়েছে। আজ এই করোনাভাইরাসের কারণে ভয়ের চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা অনেক বেশি। আর এ জ্বালাটা উচ্চবিত্তদের বুঝতে অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে দিনমজুররা পড়েছেন বিপাকে। দিন এনে দিন খাওয়া লোকদের সংসার চলছে টেনে টুনে। দীর্ঘদিন এমন সংকট চলার শঙ্কাও রয়েছে তাদের। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে তাদের কাছে তিনবেলা খাবার পাওয়া বড় চিন্তা। অবশ্য যারা দিনমজুর রিকশা চালিয়ে চালিয়ে সংসার চলে, তারা এটাও জানে রাস্তায় এখন জনমানবশূন্য। তবুও চালের টাকার জন্য কিছু পয়সা জুটলে আলহামদুলিল্লাহ।
দেখা গেছে, কিছু কিছু সামাজিক সংগঠন করোনাভাইরাসের কারণে যাদের জীবন চালাতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য এগিয়ে এসেছে। যাদের এখন কোনো আয় নেই এমন পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দব্য বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের সাধ্যের মধ্যে অসহায়দের জন্য চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু এবং লবণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যতটুকু পেরেছে ততটুকু করছে। তবে দেশের বড় বড় সব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে হয়তো কিছুটা কষ্ট মোচন হতো দিনমজুরদের। দরিদ্র মানুষকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। সামর্থ যাদের নেই প্রয়োজনের সময় তাদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই নিশ্চয়তা যদি তারা না পায় তাহলে হোম কোয়ারেন্টাইন কখনও সম্ভব না। তারা জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে আসবেই। যা এখনকার সময়ের জন্য বিপজ্জনক। তাই নিজেদের সুরক্ষায় এসব মানুষের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারসহ দেশের বড় প্রতিষ্ঠান মালিকদের।
করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে সরকার স্কুল, কলেজ, অফিস আদালত বন্ধ করে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কিছু মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বের হতেই পারে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দুই সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। এই দুই ফটোসাংবাদিক হলেন, বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক দেশ জনপদ–এর সাফিন আহমেদ ও দৈনিক দখিনের মুখ–এর নাসির উদ্দিন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন আহত দুই ফটোসাংবাদিকও। নগর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি রাখতে হবে।
করোনা যখন চীনের উহান থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়, তখন অনেকেই বলেছেন আমাদের দেশে কিছুই হবে না। সামান্য সর্দি–জ্বরের মতোই বিষয়। অনেকে নানান ফর্মুলা দিলেন। বাজার থেকে নাই হয়ে গেল থানকুনিপাতা। হঠাৎ বেড়ে গেলো কালো জিরার দাম। ডব্লিউএইচও, সিডিসিসহ বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থা গবেষণা, জার্নাল, তথ্য–উপাত্ত ইত্যাদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের খেয়াল–খুশিমতো হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়ে প্রচারে নেমে গেলেন, যে গরমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। তাই বাংলাদেশের কোনোই ভয় নেই। বাংলাদেশে এলেও গরমে মরে যাবে। করোনা অদৃশ্য ভাইরাস। আমরা মহান সষ্ট্রার কাছে পার্থনা করি আল্লাহ যেন এমন ভয়াবহ মহামারি থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করে। আবার আগের মতো সবাই কর্মব্যস্ত সচল হোক, আবার ফিরে আসুক সুন্দর পৃথিবীর প্রাণ।
মোহাম্মদ হানিফ: লেখক ও সাংবাদিক,
দক্ষিণ কোরিয়া/হানিফ/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন