ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিশ্বের প্রথম প্রসূতি হাসপাতালে আমাদের অভিজ্ঞতা

শাহরিয়ার পারভেজ, আয়ারল্যান্ড থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বিশ্বের প্রথম প্রসূতি হাসপাতালে আমাদের অভিজ্ঞতা

হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি নিয়ে আমি আগের পর্বে বলেছি। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলা হয়নি। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখসহ রোটুন্ডা হাসপাতাল থেকে চিঠি আসে- কবে ও কখন হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে হবে। প্রথম সন্তান, প্রথম অভিজ্ঞতা, আমরাও আসলে বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাবো হাসপাতালে। হাসপাতালের ওয়েবসাইট, অ্যাপসে সব উল্লেখ ছিল কী কী নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে।

মজার ব্যাপার হলো, তারা শম্পাকে কয়েকটা ট্রেনিং সেশনে অংশগ্রহণ করতে বলেছিলো ভর্তির কয়েক সপ্তাহ আগে। ট্রেনিং এর উদ্দেশ্য হলো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে কী কী করবে তা জানানো এবং শম্পাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখে মনে হতে লাগলো তাদের চিন্তা আমাদের চেয়ে বেশি। যথা সময়ে উপস্থিত হলাম হাসপাতালে, রিসেপশনে কিছু তথ্য দিলাম আর ভর্তি হলাম। আমাদের ওয়ার্ড দেওয়া হলো, ওয়ার্ডের কাছে যেতেই কয়েকজন নার্স খুশি মনে হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো আমাদের দিকে, পরিচয় দিলো তাদের এবং আমাদের বেড দেখিয়ে দিলো। মূলত এভাবেই তারা সব রোগীদের বরণ করে নেয়।

তাদের ব্যবহার আর খুশি দেখে এতটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হলো। মনে হলো আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখি সব ওয়ার্ডেই প্রচুর রোগী আমাদের মত যাদের সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ প্রায় একই দিনে। হাসপাতালের প্রধান উদ্দেশ্য বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি করানো। আগের রাত থেকেই তারা সেই রকমভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে, ওষুধ দিতে থাকে রোগীদের। যদি কোনো কারণে সমস্যা হয় তাহলে সিজারের অপশনে যায়। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত প্রসূতি হাসপাতাল এটি। কিন্তু তাদের সার্ভিস দেখে সত্যি আপনার কাছে মনে হবে আপনি একাই রোগী আর সবাই আপনাকে নিয়েই ব্যস্ত। বাইরের কোনো খাবার গ্রহণযোগ্য না, তারাই আপনাকে ঠিক সময় মত খাবার, ওষুধ সব দেবে। মোট কথা আপনি ওদের সিস্টেমে ঢুকছেন তো আপনার উপর আর নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই, তারাই সব ব্যবস্থা করে দেবে।  চমৎকার গুছানো সিস্টেম, নার্স, ডাক্তার যে যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ দেয়ার চেষ্টা করে। কারো প্রসব ব্যথা উঠলে নার্স এতো দ্রুত পদক্ষেপ নেয় যেন ব্যথা রোগীর না, নার্সের উঠে গেছে। পরদিন বিকেলে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের মেয়ে ইয়ানা জন্মগ্রহণ করে। অনুভূতি কেমন ছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। সব বাবাই জানেন কেমন অনুভূতি হতে পারে।

এখানে শিশু জন্ম নিলে হাসপাতাল তাদেরকে ২ সেট কুশিকাটার নিপুণ হাতের তৈরি করা রঙিন পোশাক দিয়ে বরণ করে নেয়। ইয়ানার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না। তারা ২ সেট কুশিকাটার তৈরি উলের রঙিন পোশাক দিলেন। এই পোশাকগুলো মুলত বয়স্ক যারা অবসরে চলে গেছেন তারা সময় কাটানোর উদ্দেশে চ্যারিটির জন্য তৈরি করে থাকেন। আর চ্যারিটি এই পোশাকগুলো পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতককে হাসপাতালের মাধ্যমে দিয়ে থাকে উপহার হিসেবে।

মা ও শিশুকে তারা একদিন ও রাত খুব পর্যবেক্ষণে রাখে, প্রয়োজনীয় সব কিছু চেক আপ করে তারপর বাসায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়। ইয়ানার সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু পরের দিন জন্ডিস ধরা পড়লো। ৪৮ ঘণ্টা ইয়ানাকে ইনকিউবেটর, লাইট এর নিচে রাখা লাগবে। সংবাদটা শোনার জন্য একেবারে অপ্রস্তুত ছিলাম। আমি শম্পা দুজনেই কিছুটা ভেঙে পড়লাম। যাই হোক সব চিকিৎসা একেবারে ঠিক করে নিশ্চিন্তে বাসায় যাওয়া ভালো। মনকে একটু শক্ত করলাম দুই জনে। ইয়ানাকে যেখানে চিকিৎসার জন্য রাখা হলো সেই রুমে গিয়ে দেখি ওর মত অনেক বাচ্চা সেখানে ভর্তি আছে, আর ওরা পরিবেশটা একদম বাচ্চাসুলভ ভাবেই বানিয়ে রাখছে। একদম অন্য রকম একটা পরিবেশ। ওরা এমনভাবে একেকটা বাচ্চাকে যত্ন করত দেখে মনে হতো ইয়ানা ওদের বাচ্চা আমরা দেখতে গেছি।

দুদিন পরে মেয়ে পুরোপুরি সুস্থ হলো তারপর বাসায় চলে এলাম। আমি সত্যিই অভিভূত হাসপাতালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্ভিস দেখে। তারা এখনো সুনামের সঙ্গে সেবা দিয়ে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। অবাক করা বিষয় হলো, এই দেশের নাগরিকদের এই হাসপাতালে মাতৃকালীন চিকিৎসা ও বাচ্চার চিকিৎসা একদম ফ্রি।

* বিশ্বের প্রথম ও চলমান প্রসূতি হাসপাতাল

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়