ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর সাহিত্য পাঠ আমাদের দায়িত্ব: এলিস ওয়াকার

এমদাদ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ২৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর সাহিত্য পাঠ আমাদের দায়িত্ব: এলিস ওয়াকার

 

এলিস ওয়াকার মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখিকা এবং নারীবাদী আন্দোলনের সক্রীয় কর্মী, যিনি ‘ফেমিনিস্ট’ শব্দটির পরিবর্তে ‘উইম্যানিস্ট’ শব্দটি বেশি পছন্দ করেন। কেননা শুধুমাত্র বর্ণের কারণে আফ্রিকাতে কালো নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন শ্বেতাঙ্গ নারীদের কাছেও। এলিস ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কবি, তীব্রকণ্ঠ প্রতিবাদী মানুষ, তবে তিনি প্রথাগত অর্থে নারীবাদী নন। তাঁর বেশ কয়েকটি উপন্যাস আলোচিত এবং পাঠকপ্রিয় হয়েছে। তার মধ্যে একটি উপন্যাস; ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য কালার পার্পল’ ১৯৮৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করে। পরবর্তীকালে স্টিভেন স্পিলবার্গ এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। উপন্যাসটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। 
এলিস ওয়াকারের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায়। সমালোচকরা বলেন, এলিস নারীদের এমন কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কলম ধরেছেন, যা অনেক নারীবাদী লেখকেরও দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আফ্রিকার নারীদের যৌনাঙ্গ বিক্ষতকরণের বিরোধীতা করে তিনি লিখেছেন। বিষয়টিকে তুলে এনেছেন ‘পসেসিং দ্য সিক্রেট অব জয়’ উপন্যাসে। এটি আফ্রিকার নারীদের যৌনাঙ্গ বিক্ষত করার এক বেদনাময় আখ্যান।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ এলিস ওয়াকারের সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয় ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে তাঁর ‘টকিং দ্য অ্যারো আউট অব দ্য হার্ট’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অব্যবহিত পর। সাক্ষাৎকারটির ভূমিকায় লেখা এলিস ওয়াকারের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর সাহিত্য পাঠ করা আমাদের দায়িত্ব, যাদের দুঃখের কোনো শেষ নেই।’ ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলমান নিন্দা-প্রতিবাদে ২০১৪ সালে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে যে নোবেলজয়ী ও আন্তর্জাতিক শান্তিবাদীদের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে এলিস ওয়াকারের নামও ছিল।  ২০০৩ সালের মার্চে হোয়াইট হাউসের সামনে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়ে গ্রেফতার হন তিনি। সেখানে এলিস ওয়াকার উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি ইরাকি শিশু ও নারীরা আমাদের পরিবারের শিশু ও নারীদের মতোই মূল্যবান।’ সাংবাদিক এবং প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক বিল ময়ার্সের সঙ্গে এলিস ওয়াকারের এই কথোপকথন গড়ে উঠেছে নির্বাচিত কথামালার আদলে।

 

বিল ময়ার্স: খাটের পাশের টেবিলে কোন বইগুলো রেখেছেন?
এলিস ওয়াকার: এখন আমার পাশের টেবিলে আছে সোমালি ম্যামের বই ‘দ্য রোড অব লস্ট ইনোসেন্স’। বইটি লিখিত হয়েছে কম্বোডিয়ায় শিশুদের বিক্রি করে দেয়া, দাসত্ব, ধর্ষণ এবং বেশ্যাবৃত্তির জন্য মেয়েদের পাচার করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। বোমা বর্ষণে ধ্বস্ত এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে ট্রমাগ্রস্ত কম্বোডিয়া দিনে দিনে এমন একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে যেখানে শিশুদের পণ্য হিসাবে দেখা হয়, যেখানে শিশুরা এমনভাবে নির্যাতিত হয়, কোনো সন্ত্রাসী এবং চরম অধঃপতিত মানুষের সঙ্গেও কেউ এমন আচরণের কথা কল্পনা করতে পারে না। সোমালি ছিলেন অভিনেত্রী, নিজেকে যিনি একটা সময় আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন, জীবন বাজি রেখে বেশ কয়েকটি অল্পবয়সী মেয়েকে তিনি রক্ষা করতে পেরেছিলেন, যাদের ভয়ানক পরিণতি হতো। বইটি পড়ার পর বহুদিন আমি ঘুমাতে পারিনি, কিছুতেই পারিনি। বইটি পড়বার জন্য আমি এক ধরনের তাড়না অনুভব করছিলাম, দায়িত্ব মনে করেছিলাম, পড়তে পড়তে ভাবছিলাম-বিস্মৃতির আগেই আমাদের যুদ্ধের স্মৃতিকথা লিখে ফেলতে হবে। সেইসব দেশের সাহিত্য আমাদেরকে অবশ্যই পড়তে হবে যে-দেশগুলো দীর্ঘদিনের চলমান যুদ্ধে বিধ্বস্ত, যাদের আমাদের মতো দেশের কারণে আক্রান্ত হতে হয়েছে, কিংবা যে-দেশগুলো ‘কার্পেট-বোমা’য় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে; পুঁতে রাখা মাইনে যে-দেশগুলো আজ পর্যন্ত এক মৃত্যু ফাঁদ, আর যে-যুদ্ধ চলতে চলতে আজও শেষ হয়নি, তদের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।
পাশের টেবিলে আরো আছে ‘দ্য ট্রুথ শেল সেট ইউ ফ্রি’ বইটি, যেখানে ডেভিড আইক মহাবিশ্বের প্রেক্ষাপটে আমাদের অস্তিত্বের কথা ভাবছেন। বইটিতে, এমন এক অদ্ভুত ব্যক্তির কথা আছে যার স্বপ্নগুলো সত্য হয়ে ওঠে, আর আছে ড্যানিয়েল ব্ল্যাকের বই ‘পারফেক্ট পীস’; দক্ষিণের একটি ছেলেকে নিয়ে লিখিত বিস্ময়কর এই উপন্যাসটি আমাকে পুনর্পাঠ করতে হচ্ছে, ৮ বছর বয়স পর্যন্ত যে একটি মেয়ে হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। সম্পূর্ণ উপন্যাসটি জেন্ডার ইস্যু নিয়ে চমৎকার এক তদন্ত। আরও আছে মায়া অ্যাঞ্জেলু'র ‘মাম অ্যান্ড মি অ্যান্ড মাম’। অ্যাঞ্জেলু-লিখিত বইটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। মাতৃত্বের এক কঠিন, নির্ভীক, প্রলোভিত করতে পারার মতো গভীর উন্মোচন এই বইটি।

বিল ময়ার্স: আপনার সব সময়ের প্রিয় ঔপন্যাসিক কে?
এলিস ওয়াকার: শার্লট ব্রন্টি'র সঙ্গে আমার যে-মানসিক বোঝাপড়া, যে-অনুভব, যে-আত্মিক সম্পর্কটি গড়ে উঠেছে তা কোনো দিনও শেষ হবার নয়।

বিল ময়ার্স: ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, সমালোচক, স্মৃতিচারক এবং কবিদের মধ্যে কাদের আপনি এই সময়ের শ্রেষ্ঠ লেখক বলে মনে করেন?
এলিস ওয়াকার: ভিয়েত থান গুয়েন, অরুন্ধতী রায়, ইয়া গাইসি, আইডা এডমিরাম, জোসেফ ও’কনর, হেলেন কুপার, ক্রিস হেজেস এবং এলিজাবেথ গিলবার্ট- এরাই আমার বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ।

বিল ময়ার্স: একটি বইয়ের কোন বিশেষ দিকটি আপনাকে আলোড়িত করে?
এলিস ওয়াকার: বই মহান আত্মার অবিরাম সাক্ষ্য; কাজের এক মহত্তম প্রেরণা; এমন এক যোদ্ধা যার মনের অস্ত্র তৈরি হয় হৃদয় ও বাতাসে, এবং যার আত্মা পরিপুষ্ট হয় স্বপ্ন ও নীরবতা দ্বারা। অন্যভাবে বললে, লেখকের সাহস।

বিল ময়ার্স: আপনার লেখালেখি শুরু হয়েছিল শৈশবে। আপনি কি এখনও মনে করতে পারেন লিখে কী বলতে চেয়েছিলেন?
এলিস ওয়াকার: আমি নিজের একটি ঘর চেয়েছিলাম। এ-কথা ভার্জিনিয়া উলফকেও বলতে শুনেছি, কয়েক দশক পর তার লেখা, তার চিন্তার সুন্দর দিকগুলো আমার মধ্যে এসে গিয়েছিল, কিন্তু আমি জন্ম থেকেই জানতাম- আমি কি চাই। মা শৈশবের যে-গল্পটা আমাকে বলেন তা হলো, আমি তখন কেবল হামাগুড়ি দিতে শিখেছি, তখন তিনি আমাকে দূর থেকে দেখতেন; হামাগুড়ি দিতে দিতে আমি প্রায়ই ঘরের পেছনে চলে যেতাম, তিনি আমাকে খুঁজে পেতেন ময়লা আবর্জনায় মাখামাখি হয়ে ছোট্ট ডাল দিয়ে মাটিতে কিছু লিখতে চেষ্টা করছি।

বিল ময়ার্স: আপনার লেখায়, আপনি আপনার পরিবার ও অন্যদের কণ্ঠস্বর তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।
এলিস ওয়াকার: হ্যাঁ, তাই তো করেছি। কারণ আমি চেয়েছিলাম তারা নিজেদের আলোয় নিজেদের দেখুক; নিজেদের মানবতাবোধে, নিজেদের সংগ্রামে, কঠোর পরিশ্রমের ভিতর দিয়ে নিজেদেরকে দেখুক তারা, যা ঠিক অন্যরাও করছে, অন্যরাও উপলব্ধি করছে।

বিল ময়ার্স: ভয়ে ভীত, ঘুমন্ত, গোপনে লুকায়িত জীবন প্রকাশ্য আলোয় নিয়ে আসবার জন্য কি আপনাকে শক্তি যুগিয়েছিল?
এলিস ওয়াকার: ১৩ বছর বয়সে, আমার বোন একটি মৃতদেহ দেখায়, সে সময় আমার বোন কসমেটোলজিস্টের (শল্যচিকিৎসকের) কাজ করতো; শেষকৃত্যের জন্যে লাশ সুন্দর-পরিপাটি করে সাজাতে হতো তাকে। এক দিন সে আমাকে এক নারীর লাশ দেখাল যাকে হত্যা করা হয়েছে। স্বামী তার মুখে গুলি করেছিল। এখন, অনেকেই আমার মাধ্যমে এই গল্পটি শুনবে, গল্পটিকে তারা তাকে বিভিন্নভাবে বিচার করবে, কাটাছেঁড়া করবে, শ্রেণিভূক্ত করবে, উপকথার জন্ম হবে; কেউ কেউ ঘরের এক কোণায় বাক্সবন্দী করে রেখে দেবে ঘটনাটিকে... কিন্তু আমিসহ এরকম গল্পগুলোকে যারা এভাবে বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে আসছি, তাতে করে সকলে বুঝতে পারছেন যে, নারীর প্রতি এই নিষ্ঠুরতা দেশ বা আঞ্চলিক এক রোগবিশেষ। এই রোগ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরাও জানতে পারছি তার প্রকৃত রূপ।

বিল ময়ার্স: মাত্র ১৩ বছর বয়সেই এমন অভিজ্ঞতা!
এলিস ওয়াকার: এর একটা বিশাল প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল। যাকে হত্যা করা হয় তার মেয়ে আমাদের সঙ্গে পড়ত; আমার দাদির নামে নাম ছিল তার, সে দাদিকেও একদিন গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি মনে করতাম, যখনই আপনি লেখালেখি শুরু করবেন, আপনার প্রায়ই মনে হবে যে, সবকিছু গ্রিকপুরাণের চরিত্রদের দিয়ে ঘেরা, সেখানে রাজকন্যা অ্যারিয়াডেন প্রেমে পড়ে যাবেন থিসিউসের; আপনার লেখা ধীরে ধীরে অ্যারিয়াডেনের সুতোর মতো ডিডেলাসের গোলকধাঁধায় প্রবেশ করবে, আপনি কখনোই জানতে পারবেন না. কখন কোন মিনোতর দানবের সঙ্গে (পুরাণে বর্ণিত সেই অর্ধমানব; যার শরীরের নিন্মাঙ্গ ষাঁড়ের, রাজার আদেশে ডিডেলাস যাকে গোলকধাঁধায় বন্দী করে রেখেছিলেন, মিনোতর পরে দানব হয়ে যায়, যার প্রধান খাদ্য ছিল মানুষ) আপনার সাক্ষাৎ হবে, কিন্তু প্রায় সময় এমন দুই-তিনটি দানব আপনি খুঁজে পাবেনই!

বিল ময়ার্স: আপনি প্রতিবাদী হিসেবে বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন, কিন্তু আপনি নির্জনতাও ভালোবাসেন। তো কীভাবে এটা সম্ভব হলো?
এলিস ওয়াকার: এ জন্য তো বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আগামী বছর আমি চুয়াত্তরে পা দেব, যার মধ্যে পঞ্চাশটি বছর আমি পার করেছি লেখালেখি আর বিভিন্ন আন্দোলনে প্রতিবাদে সক্রীয় থেকে; আসল ঘটনাটি হলো, আমার জীবনটা কেটে গেছে পর্বতের চূড়ায় চূড়ায় আর লোকের ভীড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে করে। আমার রাস্তা বহুমুখী রাস্তা... তবু বলবো, লেখালেখি, প্রতিবাদ, নির্জনতার কথা যতোই বলি না কেন, যা আমাকে কখনও তাড়িত করেনি, সে পথে আমি কখনওই পা বাড়াইনি।

বিল ময়ার্স: আপনার উপন্যাসগুলোয়, সত্য প্রকাশের ব্যাপারে আপনি সব সময়ই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকেন। এই শক্তিটি কি আপনাকে আরও সাহসী করে তোলে?
এলিস ওয়াকার: এটাই তো আমাদের একমাত্র আশা। সত্যই আমাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক। আজ যদি আপনি মিথ্যাকে লালন করেন, মিথ্যা জীবন যাপন করতে লেগে যান, তাহলেই আপনার পতন হবে। অবশ্যই এই গ্রহ থেকে আপনি পতিত হবেন।

বিল ময়ার্স: লেখালেখি থেকে আপনি কি এখনো অনেক আনন্দ পান?
এলিস ওয়াকার: তাই যদি না পেলাম তবে কেন লিখলাম! লেখালেখির পুরো ব্যাপারটিই প্রকৃত আনন্দের। এছাড়া আর কিছুই তো নয়। এভাবে ভাবাটাই হয়তো মানুষ ভুলে গেছে। এই পৃথিবী আমাদের আনন্দের জন্য।

বিল ময়ার্স: কোনো একটি নির্দিষ্ট কবিতার বই কিংবা নির্দিষ্ট কোনো কবি কি আপনাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন?
এলিস ওয়াকার: এমিলি ডিকিনসন, রবার্ট ফ্রস্ট, টিএস এলিয়ট, পল লরেন্স ডনবার, ল্যাঙস্টোন হিউজ- এই কবিরা আমাকে লিখতে উস্কানি দিয়েছেন। মার্গারেট ওয়াকারের ‘ফর মাই পিপল’ বইটি, বিশেষ করে তার ‘অক্টোবর জার্নি’ এবং ‘উই হ্যাভ বিন বিলিভার্স’ কবিতাগুলো আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আসলে, আমাকে কোনো কবি নন, মূলত দুঃখই লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে সবচে’ বেশি। এই দুঃখ আর এই যে আমার চারপাশের নিমগ্ন প্রকৃতি, এর মাঝে এমন একটা ব্যাপার আছে যা আমাকে সৃষ্টিশীল কাজের উস্কানি দিয়েছে... সম্ভবত, একটি সোনালি আর গাঢ় লাল রঙের পাতা, অথবা পিঠে শক্ত একটি খোলস নিয়ে কচ্ছপের চলাচল, কিংবা জলের তোড় সামলিয়ে ঘোড়ার পারাপার! এই হচ্ছে প্রকৃতির অপার বিস্ময়। খুব অল্প বয়স থেকেই আমি এই অনুভবটি করতে পারছিলাম যে, এই জাদুময় জগতে আমরা মানুষরা যেভাবেই হোক একদিন প্রাণ পেয়েছিলাম; এ-জগৎ সত্যিকার এক ওয়ান্ডারল্যান্ড, যে-বিশালত্বের কাছে আমার গভীর গভীরতম দুঃখও খুব সামান্য ব্যাপার!

বিল ময়ার্স: কোন কবিরা আপনাকে নিরন্তর প্রেরণা যোগান?
এলিস ওয়াকার: তাওবাদী কবিরা আমাকে সব সময়ই প্রেরণা যুগিয়েছেন। উইলিয়াম মার্টিনের ‘তাও তে চিং: এনশিয়েন্ট অ্যাডভাইস ফর এ মডার্ন রেভ্যুলেশন’ বইটি সাম্প্রতিক পড়া একটি বই; আমাকে দারুণ উজ্জীবিত করেছে। আর, সদা সর্বদা জালালুদ্দিন রুমি; আধুনিক কবিরাও আমাকে নিরন্তর অনুপ্রেরণা দেন, তাদের মধ্যে মেরি অলিভার আমার বিশেষ প্রিয়।

বিল ময়ার্স: লেখালেখি ব্যাপারটা কীভাবে বিকাশের পথ খুঁজে পেয়েছিল? পদ্ধতিটা কেমন ছিল?
এলিস ওয়াকার: পাঠকদের সঙ্গে আমি সব সময়ই সরাসরি যোগাযোগ করতে চেয়েছি, কথা বলতে চেয়েছি। সে জন্য আমি কোনো নতুন লেখাও সরাসরি আমার ব্লগে প্রকাশ করি, কখনও মাসে মাসে নতুন লেখার টুকরো টাকরাও তুলে দিই।
আসলে, সবসময়ই আমি একদম হৃদয় দিয়ে পাঠকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছি। তাদের সঙ্গে ভাবনা বিনিময় করতে চেয়েছি। পাঠকদের আমি মাঝে মাঝে বলতে চেয়েছি, যদি কখনও চারপাশের জিনিসগুলোকে অন্ধকার দেখায়, সেই অন্ধকার মুহূর্তের দৃশ্যটিও সৌন্দর্যহীন নয়, চূড়ান্তও নয়।

বিল ময়ার্স: আপনাকে যদি এমন একটি বইয়ের নাম নিতে বলা হয় যে-বইটি আজকের এলিস ওয়াকারকে তৈরি করেছে, তাহলে কি হবে সেই বইটির নাম?
এলিস ওয়াকার: সেই বইটি সম্ভবত ‘গালিভার্স ট্রাভেলস’। প্রথম যখন বইটি পড়ি তখন আমার বয়স ১১, আর এই বইটি তখনই আমাকে এই বিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করেছিল যে, এই পৃথিবী ভরে আছে অতিকায় এবং আকর্ষণীয় এবং অবিশ্বাস্য সব প্রাণিতে। পরবর্তীকালে এই সত্য তো আমি আবিষ্কারই করেছি। তাতে হয়েছে কী, যখনই আমি কোনো কিছুর প্রেমে পড়েছি, তার ভেতরকার কোনো সমস্যাই আমার কাছে সমস্যা বলে মনে হয়নি, যা হয়ত অন্যদের কাছে উদ্ভট মনে হয়েছে।

বিল ময়ার্স: এ পর্যন্ত যতগুলো বই আপনি লিখেছেন, সে বইগুলোর মধ্যে আপনার প্রিয় বা ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনটি?
এলিস ওয়াকার: ‘দ্য টেম্পল অব মাই ফ্যামিলিয়ার’ বইটিই আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং আমার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি যেখানে যে-জলহাওয়ার বেড়ে উঠেছি আর যে-পূর্বপুরুষেরা আমার সঙ্গে রয়েছেন, আমার রক্তে রক্তে প্রবাহিত হচ্ছেন, এই সবকিছু আমাকে সর্বক্ষণ ঘিরে রয়েছে। আমার লেখালেখির যাত্রা শুরুর কথাগুলোই আমি লিখতে চেয়েছিলাম। তারপর লিখে ফেলেছিলাম ‘দ্য টেম্পল অব মাই ফ্যামিলিয়ার’, কিন্তু সেই মন্দিরটিকে আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না কিন্তু নীলকান্তমণি আর প্রবালের রঙে আমি যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম, এসব আমাকে পীড়িত করছিল; আর আমি এসব রঙ সর্বত্র দেখছিলাম- বালি থেকে মেক্সিকো, মেক্সিকো থেকে দুনিয়ার সর্বত্র! উপন্যাসে যে-গল্পটি আমরা বলি, সে-গল্প ধারণ করে হাজার বছরের কথা, আর সেই গল্পটা শুরু হয় অজানা কোনো একটি স্থান থেকে।

বিল ময়ার্স: আপনি লেখক এবং সক্রীয় কর্মী। কীভাবে নিজের জীবনের সঙ্গে এই দু'টি বিষয়ের মেলবন্ধন ঘটাতে পারলেন? দু'টোই কি এক সঙ্গে শুরু হয়েছিল?
এলিস ওয়াকার: আমি লেখালেখিটাই শুরু করেছিলাম, এর পেছনের কারণটি সম্ভবত, আমি এসেছি এমন বিশাল একটি পরিবার থেকে, যে-পরিবারটি দারিদ্র্যে জর্জরিত। তাছাড়া, নিজেকে দেখার জন্য, বোঝার জন্য, ভাবার জন্য আমার একান্ত নিজের কোনো জায়গা ছিল না। একচিলতে জায়গায় আমি কোনোমতে বেঁচে থাকতাম। বাবা-মা'র আট সন্তানের মধ্যে আমি জন্মেছিলাম সবার শেষে। হ্যাঁ, আজ আমার মনে হয় নিজের একটি ঘরের জন্যই আমি একদিন কবিতা লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম। কারণ, সেই সলিচিউড! কোথাও একটু একাকীত্ব, নির্জনতা...এসব খুঁজছিলাম। একান্ত সেই ভুবন চাইছিলাম যেখানে নিজেকে নিজে প্রকাশ করতে পারব, ভিতরের আইডিয়াগুলো বের করতে পারব, যেসব কথা আমাদের পরিবারের কেউ এতদিন ভাবেনি, কারণ আর কেউই লিখত না। কবিতায় সেইসব প্রগাঢ় একাকীত্বের কথাগুলো আমি লিখে রাখছিলাম।

বিল ময়ার্স: কোনো একটি ধারাবাহিক গদ্যলেখার কথা মনে পড়ছে, যেখানে আপনি আপনার মা'র উপহার দেয়া স্যুটকেস এবং একটি টাইপরাইটারের কথা বলেছেন। এই উপহারের মাধ্যমে আপনাকে ঘুরে বেড়াতে আর লিখতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল!
এলিস ওয়াকার: হ্যাঁ, মাঝে মাঝে আমি তাদের কথা ভুলেই যাই। এখন মনে পড়ছে, মা'র সেই উপহারের মধ্যে ছিল একটি টাইপরাইটার, একটি স্যুটকেস আর ছিল একটি সেলাই মেশিন, যা দিয়ে আমি আমার জামাকাপড়গুলো বানিয়ে নিতাম। মা ভাবছিলেন আমাদের সংসারের যৎসামান্য আয় উপার্জনের কথা, তারপর এই জিনিসগুলো উপহার দিয়েছিলেন এই অনুভব থেকে যে, নানা প্রয়োজনে আমাকে নিজেদের শহর থেকেও দূরের শহরে যেতে হবে, সেসব জায়গা অত্যন্ত বর্ণবাদী, অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া, আমরা যেখানে আমরা থাকতাম, সেই জায়গাটির চেয়েও অনেক বাজে লোকের বাস ছিল সেখানে। এইসব অভিজ্ঞতা আমার কবিতাতে চলে এসেছিল। কবিতায় আমার মা'র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা, এবং অবশ্যই বাবার প্রতিও আমার শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছিল। এইসব কথাই ছিল আমার সেদিনের কবিতায়। তারা আমাকে লেখাপড়া শিখবার জন্য এমন এক জগত উপহার দিয়েছিলেন, যেভাবেই পারেন দিয়েছিলেন, এ আমার পরম ভাগ্য।

বিল ময়ার্স: কবিতা ও প্রবন্ধ থেকে শুরু করে উপন্যাস এবং ছোটদের জন্য লেখাগুলোয় যেভাবে আপনার কাজ পূর্ণতা পেয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনি নিজে কীভাবে মূল্যায়িত করবেন আপনার কাজকে? 
এলিস ওয়াকার: আমার কাজের মূলে থাকে- অপেক্ষা। আমি ততোক্ষণই অপেক্ষা করতে চাই, যতক্ষণ না কোনো কিছুর আভাস কিংবা অবয়ব নিজের ভিতরে তৈরি না হচ্ছে। ঠিক ততোক্ষণ আমার অপেক্ষা। কিন্তু আমি দৃঢ় থাকি যাতে কোনোভাবেই কোনো কিছুর পেছনে ছুটতে না হয়। হয়তো ফলভারে নুয়ে থাকা গাছটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকব কিন্তু ছুটে গিয়ে কাঁচা ফলগুলোকে খেতে শুরু করব না, তাদেরকে পাকতে দেব, তারপর খাবো। সুতরাং যতক্ষণ না ভাবনাটি আমার ভিতরে প্রকাশ হতে উম্নুখ হয়ে ওঠছে, কোনো আঙ্গিক বা ফর্মের আকার না নিচ্ছে ততোক্ষণই আমার অনন্ত অপেক্ষা। আর, এই অপেক্ষাটিই জরুরি। কারণ, অপেক্ষা ছাড়া মাঝে মাঝে লোকে এমন কিছু সৃষ্টি করে ফেলে যে সৃষ্টির আদৌ কোনো দরকার ছিল না কিংবা, এর আগেও হাজারবার সেটা সৃষ্টি হয়েছে!
হ্যাঁ, আমার কবিজীবনও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ; কবিতাযাপন আমার জীবনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে। কবিতা আমার উপশম, মুক্তি আর উদযাপন, কারণ কবিতা এমন কিছু যা নিজেই নিজের ভিতরে পূর্ণ, বলা যায় সে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কবিতা নিজে থেকেই লিখিত হতে চায় কিংবা আমাদের ভাবতে বলে, কারণ সে স্বয়ং কবিতা, আর একমাত্র কবিতাই কিছুটা স্বাধীনতা দাবি করে। কিন্তু উপন্যাস শেষ হতে হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। ফলে আমাকে পরিকল্পনা করতে হয়-কাজটা কীভাবে করব, কখন শেষ করব, আদৌ লিখে উঠতে পারবো কি না, ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রবন্ধকে আমি গড়ে তুলি, কারণ আমি সেখানে কিছু প্রকাশ করছি কিংবা বিস্তৃত করে দেখতে চাইছি।
যখন ছোটদের জন্য লেখার কথা আসে, তখন চিন্তা করি, আমাদের জীবনে এমন কিছু দিক থাকে ছোটদের কাছে যে-দিকগুলোকে ঠিক মতো প্রকাশ করা হয় না, তাদের সেসব বুঝতে দেয়া হয় না, উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, যুদ্ধের কথা। ছোটরা টেলিভিশনে সব সময় যুদ্ধ দেখে অথবা তারা বড় হয়ে যুদ্ধের বিষয়ে পড়তে পারে; তখন তারা আর শিশু থাকে না, কিন্তু যুদ্ধ তখনও খুব রহস্যময় থেকে যায়, যুদ্ধের ইতিহাস পড়ে তারা বিভ্রান্ত হয়। তাদেরকে বলা হয়, এটাই সঠিক ইতিহাস। এটাই শিখে নাও। তাদের খেলনা বন্দুক কিনে দেয়া হয়, এবং তারা ট্যাংক নিয়েও খেলে। কিন্তু লোকে যদি আমাকে লেখক হিসেবে পছন্দ করে, আমার লেখাগুলোকে বাচ্চাদের সঙ্গে নিজেরাও পড়ে, কেবল তাহলে তারা বুঝতে পারবে আসল যুদ্ধ ব্যাপারটি কেমন! আমরা লেখকরা শিশুদের কাছে এই কথাটিই বলতে চাই যে, মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানে ব্যাঙের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হয় জলে, হ্রদের ওপর, পাহাড়ে, পর্বত শিখরে! কিছুই রেহাই পায় না, বাঁচতে পারে না যুদ্ধ শুরু হলে। এ ব্যাপারগুলো শিশুরা কখনওই ভাবতে পারবে না। তারা মনে করতে পারে যে, পৃথিবীও জীবিত নয়, যুদ্ধে মরে গেছে। যুদ্ধ সম্পর্কে তারা অজ্ঞাতই থাকে বেশিরভাগ সময়। বাবা মা পিতামহ যারা এই পৃথিবীর শিশুদের সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন, আমিও তাদের পাশে থেকে শিশুদের বাস্তবের উল্টো পিঠের বাস্তবতার ছবিগুলো দেখাতে চাই।

বিল ময়ার্স: এরকম কখনও মনে হয়, সাহিত্য আমাদের শিল্পের সঙ্গে, ভাবনার সঙ্গে আত্মনিবিষ্ট হতে, আমাদের ভিতরে সহানুভূতি ও সমবেদনার বোধ জাগিয়ে দিতে পারে?
এলিস ওয়াকার: নিশ্চয়ই জাগায়, কারণ সাহিত্যের সে ক্ষমতা আছে। সাহিত্য যদি আমাদের ভিতরে প্রণোদনা না দেয়, আত্মনিবিষ্ট না করে, সহানুভূতি ও সমবেদনার বোধ জাগিয়ে দিতে না পারে, তাহলে সাহিত্য কার্যত নিরর্থক হবে। এ কারণে সাহিত্যকে আমি মনেপ্রাণে ভালোবেসেছি, সাহিত্যের শক্তিতে আস্থা রেখেছি আজীবন, কেননা সাহিত্য আমাকে আমার বাইরে নিয়ে গেছে, আমাকে আমার ভেতর থেকে মুক্ত করেছে। সংকীর্ণ আমিত্ব থেকে, নিজের সমস্ত ক্ষুদ্রতা থেকে টেনে তুলেছে; তারপর আমার সামনে সমগ্র জগত খুলে দিয়েছে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছে অন্য মানুষের আবেগ এবং তাদের নিজেদের আকাঙ্ক্ষার রূপের সঙ্গে। আর তাই তো আমার মনে হয়, চার্লস ডিকেন্স ছাড়া জীবন হয়ে পড়বে নিঃস্ব, জীর্ণ; শেক্সপিয়র, এমনকি ফকনার ছাড়াও আমাদের জীবন অসহায়, তাদের পড়েই আমি যুদ্ধ করে টিকে থাকি; এভাবে ডরিস লেসিঙ এবং আলবেয়ার কামু'র কথাও বলবো। এইসব মানুষ আমাদের বহু কিছু দিয়েছেন, এখনও তারা চোখের সামনের দরোজাগুলো খুলে দিচ্ছেন একের পর এক, অবিরত খুলছেন; জানালার পর জানালা খুলে দিচ্ছেন তারা; আমাদের জন্য এ এক উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা।

বিল ময়ার্স: আপনি বলেছিলেন- পৃথিবী আনন্দের জন্য ছিল। নিজেকে সে-আনন্দে যুক্ত করো, তাহলে তুমি চিরদিন তাতে পূর্ণ থাকবে।
এলিস ওয়াকার: হ্যাঁ, তা তো সত্যিই। এই উপলব্ধিটি আমাকে এটা বুঝতে সাহায্য করে যে, জগতের আনন্দযজ্ঞ আমার কষ্টগুলো, যন্ত্রণাগুলো দূরে সরিয়ে দেয়, তারপর আনন্দের অংশটিকে জীবনের সমান করে তোলে; তাতে জীবনের ওপর মানুষের বিশ্বাস জন্মায়, ভিতরে এক প্রশান্ত মন তৈরি হয়। অন্যদিকে, তুমি যদি যাতনা থেকে, ক্লেদ থেকে মুক্তি পেতে লজ্জা বোধ করো, তাহলে কোনোভাবেই সেই আনন্দের সন্ধান মিলবে না; কখনো না। সুতরাং, আমি তোমাকে নিজের জীবনের ক্লেদ, দুঃখ, যাতনার দিকে ফিরে তাকাতে উৎসাহিত করবো; এও জীবনপথের দিকে যাত্রার এক অংশ, এবং সে যাত্রা অবশ্যই শ্রেষ্ঠ এক যাত্রা।

বিল ময়ার্স: সাহিত্য কি আমাদের জাগাতে পারে?
এলিস ওয়াকার: হ্যাঁ, পারে, সাহিত্য আমাকে সত্যিই জাগিয়েছিল, আর জাগিয়ে দেয়াটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের শিল্পীরা তা করতেও পারেন। সমাজের সেই অংশ, যারা লেখক, চিত্রকর, নৃত্যশিল্পী, যারা গান গাইতে পারেন এবং পারেন আমাদের ভালোবাসতে, তারাই আমাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষক। এ আসলে এক গভীর ধ্যান। আমাদের লিখিত বইগুলোতে জগতের বিষাদের কথা, যন্ত্রণার কথা থাকলেও পাতায় পাতায় পরমানন্দের কথাও বলা হয়, সুসমাচার থাকে। দুঃখ সর্বত্রই আছে, দুঃখ নিত্য প্রবহমান কিন্তু আমরা তার প্রবহমান ধারাকে রোধ করতে নিজেদের তৈরি করতে পারি, জগতের গভীর একাকীত্বের দিকে আমরা তাকাতে পারি, মহাবৃক্ষদের দিকে তাকিয়ে আনন্দ উপলব্ধি করতে পারি।

বিল ময়ার্স: আজকাল কোন লেখকদের কাছে আপনার প্রত্যাশা বেশি? আপনি বিভিন্ন দেশের লেখক শিল্পীদের কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে কারা আপনাকে বেশি উৎসাহ যোগান?
এলিস ওয়াকার: নাইজেরিয়ার একজন অসাধারণ লেখক আছেন, নাম চিগোজী ওবিওমা, যিনি ‘দ্য ফিশারম্যান’ বইটি লিখেছেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, নাইজেরিয়া বহু লেখকের জন্ম দিয়েছে যারা অসাধারণ সব গল্প, উপন্যাস লিখেছেন; মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি- কীভাবে এটা সম্ভব হলো!

বিল ময়ার্স: একজন নিরলস কর্মী, একজন দক্ষ লেখক, একজন বক্তা হিসেবে আপনি কঠোর পরিশ্রম করেন। এতকিছুর জন্য নিজেকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করেন? আপনার শক্তির উৎসটি কী?
এলিস ওয়াকার: সেই শক্তির নাম- প্রেম। আমার হৃদয়টি প্রেমে পূর্ণ হয়ে আছে। আর সব সময়ই আমার এই কথাটি মনে হয়েছে যে, আমি জন্মগত বিপ্লবী। কুম্ভরাশির জাতকরা নাকি এমনই হয়ে থাকে; এমনকি রোনাল্ড রেগানও মনে করেন, তিনিও বিপ্লবীদের একজন। আমি তীব্রভাবে অনুভব করি যে, কোনো কিছু অনেক বেশি ভালো হয়ে ওঠে যখনই তা কিছু মানুষের জন্য না হয়ে অনেকের জন্য হয়, আর শুধু মানুষের জন্যই সবকিছু নয়, সমস্ত সৃষ্টির জন্য, সব প্রাণির জন্যই সবকিছু। তাহলেই জিনিসটি আর কারও একার থাকে না, পুরো পৃথিবীর হয়ে ওঠে। আমার গভীরতম ইচ্ছা মানুষ এবং এই জগত সুখী হোক। আমি এ-কথা বিশ্বাস করতে চাইবো যে, এটা সম্ভব, আর তাই আমাদের হাতে হাত মেলাতেই হবে, সবার সক্রীয়তা ছাড়া জগতে আনন্দ যজ্ঞ অসম্ভব। আমি বিশ্বাস করি আমাদের পক্ষে তা সম্ভব, আর সেজন্য আমি আরও শিখতে চাই। মানুষের দিকে তাকানোটা খুব ভালো করে শিখে নিতে চাই। আর এ কারণেই আমি জগতের প্রতিটি শব্দ, শব্দরাশি, প্রতিটি কণ্ঠস্বরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মমতা অনুভব করি।

বিল ময়ার্স: ‘বাই দ্য লাইট অব মাই ফাদার’স স্মাইল’ উপন্যাসে, আপনি একটি ইমাজিনারি গোত্র (ট্রাইভ) সৃষ্টি করেছেন, তাদের নাম দিয়েছেন ‘মুন্দো’, যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই, আপনার ইমাজিনেশনে তারা কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
এলিস ওয়াকার: ওহ্‌ আচ্ছা, ভালো কথা তুলেছেন; এটি এমন একটি উপন্যাস, যা প্রধানত চেষ্টা করেছে বাবাদের বোঝাতে যে, তারা যেন তাদের কন্যাদের যৌনতাকে আশীর্বাদ করেন। এ হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির গভীর ক্ষতগুলির মধ্যে একটি যেখানে বাবারা তাদের কন্যাদের যৌন জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এবং যদি একবার ব্যাপারটি তারা করে ফেলতে পারেন, তাহলেই তারা জীবনের প্রতি মেয়েটির সমস্ত বিশ্বাস ধ্বংস করে দেন। আর, তারপরই, পিতৃপুরুষ ও কন্যাদের মধ্যে এক মহান বিচ্ছিন্নতার জন্ম হয়, বাবাদের এবং মেয়েদের চোখের জল আর কোনো দিন শুকোয় না।  উপন্যাসটি লিখবার আগে এই ব্যাপার আমাকে ভাবিয়েছে। লিখতে চাইছিলাম এই বিষয়ে; এবং একজন লেখক হিসেবে উপন্যাসটির জন্য একটি বিশেষ আঙ্গিকের দরকার হয়ে পড়েছিল। ফলে মেক্সিকোতে বসবাসরত এক কাল্পনিক জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে হয়েছিল আমার। এই জনগোষ্ঠীরই নাম উপন্যাসে মুন্দো। মুন্দোরা আফ্রিকান এবং মেক্সিকো'র আদিবাসী ইন্ডিয়ান। তাদের জীবনধারা এমনভাবে প্রবাহিত হয়ে চলেছে যেখানে বাবা তার মেয়েটির যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে না, যৌনতাকে জীবনের পক্ষে এক অমোঘ আশীর্বাদ বলে মনে করে, মেয়েদের যৌন-জীবনকে হত্যা করা হয় না, পবিত্র ও মহিমান্বিত হিসেবে দেখা হয়; আর এভাবেই নারী-পুরুষ সকলের যৌনতাকে, শারীরিক আকাঙ্ক্ষাকে পবিত্র ও মহিমান্বিত করা হয়, সম্মানিত করা হয়, এবং উদযাপনও করা হয়, যা জীবনেরই এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেভাবেই হোক, স্বাভাবিকভাবে মানুষের যৌনতাকে আশীর্বাদ করার জন্য, শরীর নিয়ন্ত্রণ করার বদলে উপাসনা ও আরাধনার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

বিল ময়ার্স: আপনার সৃষ্টি করা মুন্দোদের সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের সঙ্গে কি কোথাও আপনার আদি অর্থাৎ, রক্তের সম্পর্ক আছে?
এলিস ওয়াকার: এই মুন্দোরা কেল্টিক, আফ্রিকান এবং চেরোকি।

বিল ময়ার্স: আচ্ছা, তারাও চেরোকি! আমারও রক্তে কিছু চেরোকি ব্যাপার আছে। কোনো এক কালে আমার এক চেরোকি ঠাকুমা'র একটি ছবি খুঁজে পেয়েছি, আর আমার স্ত্রীও তাই। ফলে বলা যায়, আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই মুন্দোদের যোগ আছে। আপনি কী মনে করেন?
এলিস ওয়াকার: হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি। আর আমার মনে হয় আমাদের এখন দরকার আবারও হারিয়ে যাওয়া সেই শিকড়ের সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপন করা। কারণ আমরা এমন একটা কিছুর দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছি যা সত্যিকার অর্থেই ঠিক আমাদের নিজস্ব নয়। যে-সমাজে আমরা বাস করছি সেটা জোরজবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা, পিতৃতান্ত্রিক এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু আমাদের অন্যান্য শিকড়ও আছে। আমাদের এমন সব শিকড় আছে, এমন সব মানুষ আছে, সমাজ আছে, যেখানে আমাদের যৌনতা শ্রদ্ধা ও সম্মানের বিষয়, নারীরা সেখানে বন্ধনমুক্ত, শিশুরা সেখানে ঊর্বর ভূমিতে বেড়ে ওঠে, লোকে সেখানে ধনবান হয়, তাতে সকলেই পেট ভরে খেতে পায়। কেউ যদি ব্যধিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তাকে অবশ্যই সেবা করতে হবে, শুশ্রূষা করতে হবে। আমি বলতে চাইছি, এটাই হচ্ছে আদিবাসীদের প্রজ্ঞার অংশ। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সকলেই কিন্তু আদিবাসী।
এখন আমরা যদি খুঁজতে খুঁজতে বহুদূর পেছনের পথ ধরে হাঁটতে থাকি, তাহলে দেখব যে, আমরা মূলত প্যাগানদের থেকেই এসেছি। এবং এটাই আমাদের সাথে সংযোগ তৈরি করে। এই সেই সত্যিকার পরিচয় যার সঙ্গে আমরা আবারও দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হবো; এবং এটাই আমাদের সকলকে মিলিয়ে দিবে; কেউ আর বিচ্ছিন্ন হবো না।
যখন লিখতে বসি, ঠিক তখনই আমি আমার পূর্বপুরুষদের সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়ি। তখন তাদের আমি আমার ভিতরে অনুভব করি; তাদের আমি কখনও ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে ভাগ করে ফেলি না। বলতে চাইছি, আমি আসলে এরকমই এক লেখক।  প্রকৃতপক্ষে, আমি সাদা না কালো, ক্যাল্টিক, স্কটিশ আইরিশ না ইংলিশ, যে-পরিচয়টিই বহন করি না কেন, আমি সবকিছুকেই রূপান্তরিত করে ফেলি, পরিচয়ের বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। মিশে যেতে চাই।

বিল ময়ার্স: জীবন এবং কাজের কেন্দ্রে আত্ম-উপলব্ধি কি আধ্যাত্মিক দর্শন হিসেবে কাজ করেছে?
এলিস ওয়াকার: আত্ম-উপলব্ধির দর্শন নিশ্চিতভাবেই আমার ভিতরে আছে। অবশ্যই সেই সত্যিকার আত্ম-উপলব্ধির বোধ, দর্শন জন্ম নেয় সকলের সঙ্গে আমাদের সংযোগ থেকে, পরস্পরের সঙ্গে আমাদের যে বন্ধন তার ভিতর থেকে। আত্মার সঙ্গে আত্মার এবং সকলের সঙ্গে সংযোগের উপলব্ধি- এসব থেকেই এই দর্শনের জন্ম হয়। আপনি কিছুতেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে পারবেন না, কেননা আপনি জগতের সঙ্গে ইতিমধ্যেই অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছেন। এই গভীর বোধটি ভিতরে ভিতরে আমাদের বলতে থাকে যে, তুমি আর কেউ নও, তুমি মৃন্ময়, এই পৃথিবীর কাদামাটি থেকেই তুমি উঠে এসেছ, তুমি ক্যানাডিয়ান, আফ্রিকান, আমেরিকান কিংবা ইন্ডিয়ান, তুমি এইসব পরিচয়ের উর্ধ্বে। আর কেবল তখনই আমি নিজেকে এইসব দেশজ পরিচয়ের বাইরের, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড, সমগ্র সৃষ্টি ও স্রষ্টা আর তার সমস্ত আয়োজনের সঙ্গে মিশে যাওয়া একজন হিসেবে মনে করতে পারি। কেন আমরা এমন কিছু হতে পারি না যেখানে ভাবতে পারব যে- আমরাই সব, আমরাই আদি, আমরাই অনাদি, আমরাই সমগ্র?
নিঝুম রাতে, আমরা যদি বাইরে গিয়ে বসি, যদি বৃক্ষগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে স্পষ্টতই জানতে পারব যে, একদিন না একদিন আমিও তাদের মধ্যে বিলীন হয়ে যাব। হাল্লিলূয়া (জেহোভার জয় হোক)!

বিল ময়ার্স: আগামী দিনের শিশুদের জন্য আপনার কি কোনো বিশেষ প্রার্থনা আছে? আপনি কোন পরিবর্তনটি দেখতে চান?
এলিস ওয়াকার: কোথাও তাদের জন্য ভয় অপেক্ষা করে থাকবে না, দারুণ ঊর্বরাশক্তিতে তারা বেড়ে উঠবে পৃথিবীর রসে, নিজেদের তারা নিজেদের মতো করেই প্রকাশ করতে পারবে, যা আমি কখনো করতে পারিনি। তারা এমনভাবে নিজেদের প্রকাশ করবে ঠিক যে-রকম মুক্তির আনন্দ ও স্বাধীনতায় একটি নাশপাতি কিংবা আপেল গাছ নিজেকে বিস্তার করে, যেন শিশুরা ঠিক তাদের মতো হতে পারে। দেশে দেশে এমন এক পরিবেশ থাকবে যেখানে তাদের কোনো বৈরিতার মুখোমুখি হতে না হয়; এবং তারা বেঁচে থাকবে আর বেঁচে থাকবে এই পৃথিবীর পথে পথে সমাজে রাষ্ট্রে; পরিপূর্ণ বেঁচে থাকার আনন্দেই তারা তাদের জীবন নিয়ে বেড়ে উঠবে। আর ঠিক তখনই আপনি আধ্যাত্মিক আনন্দের অনুভূতি পাবেন। মানুষ ছাড়া অন্য কোথাও, অন্য কিছু হিসেবে সেই পরমানন্দ আপনি পাবেন না। জীবনকে অবশ্যই আনন্দময় হতে হবে। আপনি জানেন, যদিও প্রতিটি মিনিটে নয়, তবুও আপনার জীবনে আবশ্যিকভাবে পর্যাপ্ত আধ্যাত্মিকতা থাকতে হবে, ধ্যান থাকতে হবে।

বিল ময়ার্স: আপনার জীবনের অর্জনগুলোর মধ্যে কোনটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করেন?
এলিস ওয়াকার: দীর্ঘ সময় ধরে লেখালেখিতে টিকে থাকাটা নিজের মধ্যে সুখের অনুভূতি তৈরি করে। ব্যাপারটি তো আমার ক্ষেত্রে সত্যিই...হা হা। এই যে বেঁচেবর্তে আছি, এই থাকাটা, অসংখ্য দুর্যোগময় পরিস্থিতি পার করেও বেঁচে থাকতে পারা এবং আজ পর্যন্ত ধরণীমাতার রূপে মুগ্ধ হওয়া আসলেই এক অপার্থিব আলোর মতো ব্যাপার।

বিল ময়ার্স: ‘দ্য কালার পার্পল’ প্রকাশের ৩০ বছর হয়ে গেছে। মনে হয় না, অনেক দিন?এলিস ওয়াকার: না, এরকম কখনও মনে হয়নি; কারণ সময় সবসময়ই বর্তমান; যে-কোনোভাবেই হোক না কেন, এমন কিছু পাঠক এখনও আছেন যারা এইমাত্র উপন্যাসটিকে আবিষ্কার  করেছেন, আর তারা সেই একইরকম অনুভূতির উত্তাপ নিয়েই আমাকে লিখছেন, যে-উত্তাপ নিয়ে ৩০ বছর আগে আমাকে অন্যরা লিখতেন...আর, এভাবেই, গল্পটি বেঁচে আছে; যদিও আমি সে-উপন্যাসের পর আরও কয়েকটি উপন্যাস লিখেছি আর সেভাবে হয়তো খুব কমই চিন্তা করেছি যেভাবে একজন নতুন পাঠক বইগুলো সম্পর্কে ভাবছেন। আসলে, এটাই উপন্যাসের বেঁচে থাকা, তার উপস্থিতি এবং তার বর্তমান।

বিল ময়ার্স: আপনার বুক শেলফে কোন বইগুলো দেখে আমরা বিস্মিত হবো?
এলিস ওয়াকার: রিচার্ড ইয়েটসের উপন্যাসগুলো দেখলে হয়তো বিস্মিত হবেন; প্রাক্তন স্কুলের দিনগুলো নিয়ে লেখা তার বইটি ছাড়া প্রতিটি উপন্যাসই এখানে আছে। ইয়েটসের উপন্যাস থেকে নির্মিত ‘রেভ্যুলশনারি রোড’ চলচ্চিত্রটি দেখে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। কেট উইন্সলেট এবং লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও'র (আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজন ‘দ্য উল্ফ অব ওয়াল স্ট্রিট’ ছবিতেও সে দক্ষতার প্রকাশ দেখেছি) দক্ষ অভিনয়ে ছবিটি অসাধারণ হয়ে উঠেছে। আমি বুঝতে পারি না, কেন ইয়েটসের বইগুলো ইংল্যান্ডের প্রতিটি ঘরে পঠিত হয় না। আমি তো মনে করি, তিনি হেমিংওয়ে কিংবা ফিটজিরাল্ডের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় জাদুশক্তির অধিকারী, যাদের লেখাপত্র আমি খুবই পছন্দ করি। কিন্তু ইয়েটস যেন একটু বেশি আনন্দ দেন, এবং অবশ্যই তার পাঠকদের পাগল করে ফেলেন। দারুণ সব উন্মোচনে ভরপুর হয়ে থাকে তার প্রতিটি উপন্যাস। আর আপনারা আমার শেলফে আরও খুঁজে পাবেন জর্জ অরওয়েলের ‘ডাউন অ্যান্ড আউট ইন প্যারিস অ্যান্ড লন্ডন’ বইটি; এবং তার ‘এনিমেল ফার্ম’, ‘নাইন্টিন এইটটি ফাইভ’ উপন্যাস দু'টি, অরওয়েলের প্রবন্ধ সংগ্রহ এবং ভ্রমণ বিষয়ক লেখাপত্র; প্রবন্ধ সংগ্রহের গভীর একটা প্রভাব আমার ওপর পড়েছে বলে মনে করি। ‘ডাউন অ্যান্ড আউট ইন প্যারিস অ্যান্ড লন্ডন’ বইটি অসাধারণ, আনন্দোচ্ছল, অদ্ভুত সব চরিত্র ও ঘটনায় পরিপূর্ণ।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুন ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়