ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গল্প

রূপকথায় প্রবেশ || অমর মিত্র

অমর মিত্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রূপকথায় প্রবেশ || অমর মিত্র

অলঙ্করণ : শতাব্দী জাহিদ

লোকটা শেষ রাতে উঠে প্রযুক্তির এই রূপকথায় প্রবেশ করে। যখন তার কলেজে পড়া পুত্র ঘুমোতে যায়, তখন লোকটা ওঠে। লোকটা যখন বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে, তখন বেহালার বোধিসত্ত্ব ঘুমোতে যায়। কেউ ঘুম ভেঙে উঠে আবার বিছানায় যায়। বাইরে তখন অন্ধকারে জ্বলে পথ প্রদীপ, ক্লান্ত হ্যালোজেন বাতি। পথের কুকুরগুলি ফুটপাতের উপর গুটিয়ে পড়ে থাকে পরস্পরকে ছুঁয়ে। মাঠের ধারে বসানো ঝুপড়ির সংসারের মানুষজনও তখন ঘুমিয়ে। ওর নাম বিরিঞ্চি। ডাক নাম। এ পাড়ায় সবাই ওকে বিরিঞ্চিবাবু, বিরিঞ্চি বলে জানে। অফিসের নাম, সার্টিফিকেটের নাম, ব্যাংকের পাস বইয়ের নাম অজিতেশ। বিরিঞ্চির অজিতেশ নামটি পাড়ার কেউ জানে না। তার ছেলে একদিন বলেছিল, বিরিঞ্চি নামটা বদলাও বাবা। এ পাড়ার কেউ কেউ তাকে শুধোয়, এই তোর বিরিঞ্চিবাবা বাড়ি আছে?

লোকটা জানে এসব কিছুই না। পরশুরামের বিরিঞ্চিবাবা আর সে এক নয়। দেবদাস কত জনের নাম। দেবদাস মানে কি পার্বতীর প্রেমে আকুল কেউ! প্রেম ছাড়া আর কিছু নেই তার জীবনে? এক প্রেম এত বছর টিকে থাকে! একরকম ভালোবাসা, কান্না, কিশোর-কিশোরী কি বড় হয় না। মানুষ কি জড়, মানুষ কি পাথর? লোকটা, বিরিঞ্চি বসুর মনে এইসব নানা কথা এসে ভিড় করে শেষ রাতে যখন ব্রহ্মা- ঘুমিয়ে রয়, বিরিঞ্চি একা জেগে ওঠে। অন্ধকার ফ্ল্যাট, বিরিঞ্চির পুত্র অনিকেত, অনি পড়ল আর ঘুমাল। বিরিঞ্চি উঠল আর জাগল। ছয় ফ্ল্যাটের এই সত্তর বছরের পুরোনো ফ্ল্যাটবাড়ির বাকি পাঁচটি ফ্ল্যাটের একজন জাগে এই সময় কোনো কোনোদিন। তার ট্রান্সপোর্টেও বিজনেস। শেষ রাতে গাড়িগুলি কোথাও পৌঁছোয়, কোথা থেকে যাত্রা করে। আবার মধ্যরাতে হয়তো খবর আসে হাইওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে তার কোনো একটি গাড়ি, বা পুলিশে ধরেছে বেআইনি মালসমেত। গোপালের কিন্তু একটি পুরোনো অ্যাম্বাসেডর আছে, ওইটি নিয়ে সে তার ব্যবসা আরম্ভ করেছিল। সেটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে রিটায়ার্ড বুড়োর মতো। লোকটা মানে বিরিঞ্চি বোসও ক’দিন বাদে রিটায়ার করবে। তার একটা গাড়ি কেনার ইচ্ছে আছে। ওই গাড়িটা। পুরোনো হলেও এখনো নাকি চলে ভালো। অন্তত ওর মালিক গোপাল জৈন তা বলে। জৈন বটে, কিন্তু বাঙালি হতে আর তার কিছুই বাকি নেই। বাড়ির বাইরে গিয়ে মাছ মাংস খেয়ে আসে সবাই। বলে, কী আর হবে আঙ্কেল, আমি কোনোদিন রাজস্থান যাইনি, আমরা বেঙ্গলের লোক।

গোপাল তাকে আঙ্কেল বলে। গোপালের বাবা তার চেয়ে বছর দশেক বড়। ওরা ব্যবসা করত অসমে। সেখানে সুবিধে করতে না পেরে গোপালের বাবা রাধানাথ জৈন কলকাতা এসে নতুনভাবে শুরু করেন ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা। গোপালের ব্যবসা অবশ্য আলাদা। গোপাল আরম্ভ করেছিল ওই অ্যাম্বাসেডরে। সেই গোপাল এখন পাকা ব্যবসায়ী। তার বাবা এখন থাকে বাঙ্গুর এভিনিউ। তাদের ওই ব্যবসাটা তার ভগ্নিপতি দ্যাখে। গোপালের আগে তার দিদি চুমকি। ওই ব্যবসায় তার ভগ্নিপতির প্রবেশ, তার আগে তার পরের ভাই বংশীর সুইসাইড নিয়ে তার সঙ্গে তার বাবার মতবিরোধ চরমে উঠলে, বাবা চলে যায় মাকে নিয়ে। আসলে গোপাল তাড়াল। গোপালের বয়স বছর ৪৫, দুই মেয়ে এক ছেলের বাবা। কোনো এক ব্যাপারে গোপাল তার ভাই বংশীকে খুব মেরেছিল বাড়ির একঘর লোকের সামনে। বংশী বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা মেট্রো স্টেশন, তারপর তার মৃত্যু। তারপর কেন, এখনো গোপাল ওই ব্যাপারে সিঁটিয়ে থাকে। বুড়ো হয়ে যাওয়া বিরিঞ্চি বোস জানে, গোপালের কাছে আরো বুড়ো হয়ে যাওয়া নরেশ কু- ধার নেয় প্রায়ই, শোধ দেয় না। রেলের প্রাক্তন বুকিং ক্লার্ক নরেশ বাড়িতে সাতটা কুকুর নিয়ে বাস করে। তার ভিতরে কালো কুকুর একটা, তার গর্জন ভীষণ। তার ফ্ল্যাটের চারটি জানলায় চার কুকুর সব সময় মুখ বাড়িয়ে বসে আছে। কারণে অকারণে গর্জে যাচ্ছে যখন তখন। বউ, মেয়ে আর সাদা কুকুর, কালো কুকুর, বাদামি কুকুর সমেত নরেশ এখন ঘুমিয়ে। কুকুর হলো নরেশের আদিখ্যেতা। ও নাকি বাচ্চা পাড়ায় আর সেই বাচ্চা বাজারে বেচে। কুকুরের ভালো বাজার। ওর বাড়ি থেকে সব খরিদ্দারের কাছে চালান হয়ে যায়। এসব শোনা কথা। নরেশের কুকুর অতিষ্ঠ করে দেয় এই বাড়ির বাকি পাঁচ ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের। সকালে তারা বিষ্ঠা ত্যাগ করে যত্রতত্র। কে বলবে ওদের, যে বলবে পরে মদ্যপ নরেশ আর তার ছেলের কাছ থেকে অশ্লীল ভাষা শুনবে। এই নিয়ে ফ্ল্যাট বাড়ি। এর ভিতরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে পুবের দিকের ফ্ল্যাটটি নরেশের। উত্তর-পুব খোলা। ২৪ ঘণ্টা জল। টালার জল ট্যাঙ্কির ধারে কাছে ত্রিনাথ মজুমদার লেন।

এত কথা যে বলা হলো, এ তো কিছুই না। বিরিঞ্চি বোস তার ষাট বছরের মধ্যে ঊনষাট বছর এখানে। আগে বিরিঞ্চির ঘুম হতো অনেক, সাত ঘণ্টা আট ঘণ্টা। তার বড় শালি তার চেয়ে চার বছরের ছোট, বর চাকরি করে, সে বলে তার ঘুম আট ঘণ্টা। বিরিঞ্চি লজ্জায় বলতে পারে না, তার ঘুম চার থেকে সাড়ে চার, বড়জোর পাঁচ ঘণ্টা। বয়স যত বাড়ে, ঘুম তত কমে। বিরিঞ্চি রাত তিনটের সময় উঠে বাইরের ঘরে আসে। বিছানা থেকে সন্তর্পণে নামতে হয় তাকে, তার তিরিশ বছরের পুরোনো বউ গভীর ঘুমের ভিতর টের পেলে তাকে নিরস্ত করবে, শুয়ে থাকো, চেষ্টা করো ঘুমোতে, উঠে কী করবে? তখন বিরিঞ্চি ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে। বউ ঘুমের গভীরে গেলে নেমে আসে। জেগে ঘাপটি মেরে বিছানায় শুয়ে থাকা তার অভ্যেস নয়। পারে না। বাইরের ঘরে এসে গান শুনবে বিরিঞ্চি। দরবারি কিংবা ভৈরবী চালিয়ে ভূত অন্ধকারে বসে থাকবে। আবার ইচ্ছা হলে মালকোষ চালিয়ে দেয় ডি. ভি. পালুসকারের কণ্ঠে। তার বোন দিল্লি থেকে ফোন করে বলেছিল, অত সকালে উঠিস, প্রাণায়াম কর দাদা, ভোরটাকে কাজে লাগা, কী করিস উঠে?

বিরিঞ্চি বলেছিল, নেট খুলে বসি।

তার মানে কম্পিউটার, ও তো, ছেলেপুলেদের ব্যাপার, বুবাই তো রাত তিনটের আগে ঘুমোতে যায় না।

ফেসবুক করে?

হ্যাঁ, উঠবে বেলা দশটায়, উঠেই কলেজে ছোটে।

আমিও তো ফেসবুক করি। বিরিঞ্চি বলতে পেরে তৃপ্তি পেয়েছিল।

বিরিঞ্চি বোস রাত তিনটেয় ভৈরবী চালিয়ে, না হয় রামকেলি চালিয়ে ফেসবুক খুলে বসে। আহা কী সময়! কেউ নেই অনলাইন। নেই বললে কী হয়, আছে। তুরস্কের আঙ্কারা শহরে এক বন্ধু। বন্ধুই বটে, কিন্তু কোনো কথা হয় না কোনোদিন। শেষরাতেও হয় না। ও দেশে তখন রাত বারোটার মতো হবে। ওই রমজান হলো নিশাচর, সব দিনই ও থাকে। লোকটা যে কেন বন্ধু হয়েছিল কে জানে। এমনি। তুর্কি ভাষা ব্যতীত আর কোনো ভাষা ও জানে না, তবু তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। হায় রে। বিরিঞ্চি তার দিকে সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে রয়েছে। লিখল কেউ জেগে নেই, আমি বসে বসে ভৈরবী শুনছি বড়ে গুলাম আলি খানের, তোমরা ভোরের পৃথিবী দেখতে পাও না কেউ?

কেউ জেগে নেই। পথের কুকুরগুলোও না। রমেশ কিংবা গোপালও না। সুবোধ কিংবা সবুজও না। নব্বই বছরের উর্মিলা পিসিও না। উর্মিলা পিসির নাতি আর নাত বউও না। ছেলে তো রাতে অঘোরে ঘুমোয় নেশা করা শরীরে। জেগে আছে শুধু বিরিঞ্চি বোস। তার খোলা ফেসবুকেও কেউ জেগে নেই। এ ভুবন শূন্য হয়ে গেছে। শুধু তুরস্কের সেই তরুণ জ্বলছে সবুজ বিন্দু হয়ে। বিরিঞ্চি বোস লিখল, আমার আকাশে একটি তারা, তুরস্কের সেই রমজান ওজগেলিক। অ্যালফাবেট ধরে পড়লে নামটা অমন মনে হয়। তুর্কিরা যোদ্ধা জাত। ভূমধ্যসাগরের ওপার থেকে গ্রিকরা বারবার পার হয়ে এসেছে। তেজীয়ান তুর্কিরা ছাড়েনি কখনো। অটোমান সাম্রাজ্যের বিপুল বিস্তারের কথা মনে পড়ে? কোন ছেলেবেলায় পড়া, এই রমজানকে দেখে সেই ইতিহাস ছায়া নিয়ে আসে। এই বিরিঞ্চি তাদের ফেলে আসা পূর্ববঙ্গের সাতক্ষীরা ধূলিহর গ্রামের মানুষ খুঁজছিল ফেসবুকে। একদিন আচমকা খোঁজ পেয়ে গেল মুক্তা পারভিন, বাড়ি সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ। ভারি ফুটফুটে সেই কন্যাটি। সাতক্ষীরা তাঁদের মহকুমার শহর; সাতক্ষীরা থেকে তাদের গ্রাম ধূলিহর মাইল তিন। একটা গ্রাম ব্রহ্মরাজপুর, তারপর ধূলিহর, তারপর বুধহাটা, কপোতাক্ষ নদের কূল। মুক্তা পারভিন তার বন্ধুতার অনুরোধ অ্যাকসেপ্ট করল। বিরিঞ্চি তাকে লিখল, মেয়ে তুমি কি ধূলিহর চেনো? আমাদের বাড়ি ছিল ওই গাঁয়ে, সাতক্ষীরার গাঁয়ে। কোনো উত্তর এল না। হয়তো সে কম্পিউটারে বসে না। হয়তো সে তার দেশ থেকে চলে যাওয়া মানুষকে পছন্দ করে না। তারাই তো বেশিরভাগ ভূসম্পত্তির মালিক ছিল। সম্পত্তি ফিরে পেতে চায় নাকি শত্রু-সম্পত্তি আইন রদের পর। সে যাই হোক, সোমা পারভিনের সাইটের ওয়ালে তাঁর লেখাটি লাইক করেছিল এই তুর্কি রমজান। বিরিঞ্চি ভাবল, এ বোধহয় বাংলা জানে। বিরিঞ্চি রমজানের সাইট দেখল পোয়েট ফ্রম আঙ্কারা, টারকি- তুরস্ক। তুর্কি তার বেদনা অনুভব করেছে। সে তার বন্ধুতা চাইতেই রমজান গ্রহণ করল। সে ছিল এমন এক মধ্যরাত। সাড়ে তিনটে বাজে। ইস্তাম্বুলে তখন রাত একটা। যত পশ্চিমে যাও সময় পিছিয়ে থাকবে। পূর্ব গোলার্ধেই পড়েছিল প্রথম আলো, জ্যোতির্ময় হয়েছিল নিবিড় তমিস্রা।  

বিরিঞ্চি তাকে লিখেছিল, ডু ইউ নো বেঙ্গলি?

নো।

হোয়াই ডু ইউ লাইক মাই কমেন্ট?

সে একটি স্মাইলি উপহার দিয়েছিল, তার অর্থ হতে পারে, এমনি, এমনি।

তখন বিরিঞ্চি বোস ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ, দাঙ্গা, উদ্বাস্তুর স্রোত... তার পরিবারের পূর্ববঙ্গ ত্যাগ, তারপর পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম সব লিখেছিল ইস্তাম্বুলের যুবকটিকে। সে লিখল, ভেরি স্যাড।

তারপর থেকে সে বন্ধু হয়ে আছে। বন্ধু কিন্তু এই শেষরাতেও বিরিঞ্চির সঙ্গে তার কোনো কথা হয় না। কোন ভাষায় তারা প্রাণের কথা বলবে? ইস্তাম্বুল ও কলকাতা শেষরাত ও মধ্য রাত। বিরিঞ্চি অনেকদিন ধরে দেখেছে এই রাতে শুধু তার এই বন্ধুই থাকে। কোনো কোনোদিন রুশ লুদমিলা বা আমেরিকান অ্যাঞ্জেলিনা ডেভিস। এরা একটি দুটি কথা বলে, হ্যালো হাই করে চুপ করে যায়। কথা হয় না আর। কী করে হবে, বিরিঞ্চির ভুবনে কেউ না থাকতে পারে, তার ভুবনে, ইস্তাম্বুল, আঙ্কারায় আছে। রুশদেশে জেগে আছে কতজনা, আরো পশ্চিম জেগে আছে। আরো পশ্চিমে এখন দ্বিপ্রহর। জনকোলাহলে পূর্ণ ভুবন। কিন্তু তারা তার বন্ধু নয়।

এখন এই শেষ প্রহরে বিরিঞ্চি বোসের মনে পড়ল, তার বাবা তাকে আলেকজান্ডার আর পুরুর কথা বলতেন। বলতেন আসলে ডি.এল. রায়ের চন্দ্রগুপ্ত নাটকের কথা। আলেকজান্ডার তো ভূমধ্যসাগর পার হয়ে এশিয়ার পথে যাত্রা করল তুরস্ক হয়ে। একজনকে দেখা গেল এই নিস্তব্ধ ভুবনে। তরুণী লেখিকা শারদে অ্যাঞ্জেলিনা ডেভিস। এর সঙ্গে কথা বিশেষ এগোয়নি। সে একদিন বলছিল, সাহিত্যের নতুন এক লিখন পদ্ধতি নিয়ে। বিরিঞ্চি সাহিত্য পাঠ করে। কিন্তু ওই সব লিখন পদ্ধতির সে কী জানে। কথা থেমে গেল। বিরিঞ্চি দেখতে পেল পাশের বাড়ির বাথরুমে আলো। এই সময় কেউ না কেউ ওঠে। ও বাড়ির রামদাস চক্রবর্তী এখন সাতাত্তর। যন্ত্রপাতি বিকল হতে আরম্ভ করেছে। এর ভিতরে একবার নার্সিংহোম থেকে ঘুরে এসেছে। রাতে এই সময় একবার ওঠে। ঘণ্টাখানেক বাদেও ওঠে একবার। রামদাস সেল ট্যাক্সে চাকরি করে। বছরখানেক আছে। শোনা যায় দুটো ফ্ল্যাট কিনেছে, বড় বোলেরো গাড়ি তো ওর বাইরেই রয়েছে, জেন। বাড়ির সামনের ফুটপাথ ব্যবহার করা হয় ওর গাড়ির রাত্রিবাসে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, সে থাকে বর্ধমান; ছেলে নাকি নকশাল। বাড়ি থাকে না। যখন থাকত বাবার সঙ্গে খুব লাগত। কী নিয়ে, না দিনান্তে বাবার ঘুষের টাকা নিয়ে। তার বাবা প্রচুর উপরি আয় করে, এতেই ছেলে বাবার বিরুদ্ধে হয়ে গিয়েছিল। সেই গোলমাল থেমে গেছে। ছেলে চাকরি নিয়ে চলে গেছে হায়দরাবাদ। এসব কথা বিরিঞ্চি শুনেছে তার বউ শর্মিলার কাছ থেকে। সে শুনেছে ও বাড়ির কাজের বউ লালির মায়ের কাছ থেকে। লালির মা সব খোঁজ রাখে ও বাড়ির। বলে একদিন পুলিশের লোক এসে খোঁজ নিয়ে গেল ছেলের। কী ব্যাপার ধরা যায় না। ছেলে তো চাকরিতে, নাকি নকশাল। ছেলেটার কথা হঠাৎ করে মনে এল বিরিঞ্চির। সেই তার সঙ্গে কখনো সখনো কথা বলত। খুব বই পড়ত ছেলেটা। তার কাছ থেকে কতদিন বই নিয়ে গেছে। শেষ নিয়েছিল তারাশঙ্করের ‘কবি’। ছেলে চলে যেতে ও বাড়ির গোলমাল কমেছে। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। রামদাস চক্কোত্তির এখনো বছর দুই চাকরি আছে, দু’বছরে অনেক কামাবে। বলে, কাজটা তাকে করতে হবেই, টাকাটা পার্টি খুশি হয়ে দেয়, এটা ঘুষ নয়।

টং করে বেজে ওঠে ইন্টারনেট, গান শুনছেন?

কে? বেহালার বোধিসত্ত্ব।

এখনো ঘুমোওনি?

ঘুমোতে যাব স্যার, হঠাৎ দেখি আপনি বসে আছেন, গুড নাইট স্যার, গুড মর্নিং অলসো, ভালো কয়েকটা গান খুঁজে দিন, সকালে উঠে শুনব, আপনার পছন্দ আমার পছন্দের সঙ্গে মিলে যায়।

আবার বিরিঞ্চি একা। এবার তার নিস্তব্ধ ভুবনে সে চোখ রাখল। তিনজন বন্ধুতার অনুরোধ জানিয়েছে। তার ভিতরে একজন বাংলাদেশ থেকে, একজন বহরমপুর, আর একটি মেয়ে থাকে বসিরহাট, ‘সীমান্তের বুলবুল’ তার নাম। আসল নাম গোপন করেছে, নাকি বুলবুল তার নাম। প্রোফাইলে পিকচার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট, দূর বহুদূরের কোনো নারী, কতকাল আগের তা বলা যাবে না, মনে হলো চেনা মুখ, পঞ্চাশ বছর আগের পুরোনো বাংলা ছবির নায়িকা তন্দ্রা বর্মণ... অতল জলের আহ্বান, ভুল সবই ভুল, ভুল... এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা আছে ভুল... গানটি উদ্ধার করেছে বিরিঞ্চি বোস। উদ্ধার করে কদিন আগে তা বিলি করেছে সে কতজনকে। মুম্বাইয়ের শমীক, দোলন, চন্দ্রানী, উদয়ন, মৌসুমীকে, বনগাঁর শ্রাবন্তী আর অশোকনগরের অভি আর বেহলার বোধিসত্ত্বকে। বন্ধুতা গ্রহণ করল বিরিঞ্চি। যারা চেয়েছে সম্পর্ক, তারা সবাই এখন ঘুমিয়ে। সে এবার দেখতে লাগল যারা জেগে ছিল তারা কী বলে গেছে। ঝাড়খণ্ডের যদুগোড়ার কথা লিখেছে হিন্দোল। অনেকবার লিখেছে। যদুগোড়া গিয়েছিল সে। সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছে। ইউরেনিয়াম খনির মজুর হয়ে আদিবাসী-অন্ত্যজ মানুষ কীভাবে একটু একটু করে মৃত্যুর কাছে পৌঁছে গেছে সেই কথা। পড়তে পড়তে বিরিঞ্চি টের পায় ভোরের আলো ফুটতে বুঝি দেরি হবে। এই হিন্দোল প্রায়ই লেখে জীবিতের পৃথিবীতে মানুষের মরণ কীভাবে ঘনিয়ে আসে কোথাও। আবার এমন একটি ফোটো পোস্ট করছিল, পাইপের ভিতর সংসার, মা তার কন্যাকে স্কুল ইউনিফর্ম পরাচ্ছে। এইসব ছবি প্রথম কে তুলেছিল ধরা যায় না, ছড়িয়ে গেছে সমস্ত ভুবন। কী সুন্দর ফোটো! ভোরবেলায় হিন্দোলের সাইট দেখে বিরিঞ্চি আগে।

মাথার উপরের দেয়াল ঘড়িতে চারটে কুড়ি। কাক ডাকেনি এখনো। দূরে আজানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রমজান মাসের আজ সতেরো দিন হবে। হিসাবটা তিনি রাখেন কৌতূহলে। এখন ট্রাম লাইনের ওপারে মুসলমান মহল্লার সকলে জেগে উঠেছে। ভাত চেপে গেছে অভাবের সংসারেও। আলো ফোটার আগে খেয়ে নিয়ে সমস্ত দিন, রোজা-উপবাস, সন্ধ্যায় উপবাস ভঙ্গ। বিরিঞ্চি বোস কাল শুতে যাওয়ার সময় ভেবেছিল, একদিন শেষরাতে মুসলমান মহল্লায় গিয়ে পৌঁছবে।

কেন?

এমনি। এমনি কি কোনো কাজ হয় না?

বিরিঞ্চির ছেলে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি অত ভোরে উঠে ফেসবুকে কাকে পাও বাবা?

লুদমিলা, রমজান, অ্যাঞ্জেলিনা, একজন রুশ, একজন তুর্কি আর মুক্তা, শুক্তি, সোমা, পল্লবী, তহমিনা, মৌসুমী, ঐশিকা... ৫০, ৪৫, ৩৫, ২৫, ২০, ১৮...কত রকম বয়সের বন্ধুরা তার জন্য কথা রেখে ঘুমতে যায়। তার কথা শুনে হেসেছিল তার বউ, আড়ালে বলেছি, বুড়ো বয়সে সিগারেট ছেড়েছ, এখন ওই নেশা, তোমার তো সব মেয়ে বন্ধু, রাশিয়ান মেয়ে ইংলিশ জানে?

না। মাথা নেড়েছিল বিরিঞ্চি।

তবে কী করে কথা বলো?

বলি না।

তাহলে কীসের বন্ধু?

আমার বারোশ’র উপরে বন্ধু, বেশিরভাগকেই চিনি না, নামও ভুলে গেছি।

তোমার মেয়ে বন্ধু বেশি।

হেসেছিল বিরিঞ্চি, কোনো কথা বলেনি। কথাটা তো অসত্য নয়। ছোট শালি জিনিয়া তার ফেসবুকের বন্ধু। রিপোর্টটা তার। বলেছিল, বিরিঞ্চিমশায় তো আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না, তার কত গার্লফ্রেন্ড।

বিরিঞ্চি বলেছিল, কথা বলব কখন, তখন তো তুমি ঘুমিয়ে খুকি।

সন্ধ্যেয় কি বসেন না আপনি?

না, বয়স হয়েছে তো, খুব ভিড় হয়ে থাকে, তাল রাখতে পারি না, একসঙ্গে পাঁচজন কথা বলতে শুরু করে।

কী করেন তখন?

তোর দিদির সঙ্গে লুডু খেলি।

উফ বিরিঞ্চিবাবা, তুমি এমন বলো না, লুডু তাস পাসা তুমি এ জীবনে খেলেছ?

ছেলেবেলায় আর এই বুড়োবেলায়, দ্যাখ আমার সঙ্গে ফ্র্রেন্ডশিপ করতে আসে যারা, তারা লেখে আমাকে কী মিষ্টিই না দেখতে! আমি কী করি বল?

গুল গুল গুল, দিদি তোর বরের পাখনা হয়েছে, তুরস্ক, মাদাগাস্কার না কী পটুয়াখালি, মস্কো, ম্যানিলা বাই বাই ব্যাংকক চলে যায় ভোরবেলা।

বিরিঞ্চির বউ মল্লিকা হাসে। বলে, ওদের সঙ্গে কী কথা বলেরে, ভাষা তো বোঝে না।

জিনিয়া বলে, আমার জামাইবাবুটা অদ্ভুত, কে একটা ছেলে, সিলেট থাকে, তার নামটা কী বিরিঞ্চিবাবু?

ইলিয়াস তপু।

সে ওঁর ছেলে হতে চেয়েছিল, বলে আব্বু, ভোরবেলায় আমাকে যদি গল্প বলো, তবে আমি আসি।

ওই জন্য ভোরবেলায় ওঠা, কী জানি কোথায় কী করে বসে আছে তোর বিরিঞ্চিবাবা। খিলখিল করে হাসে জিনিয়া। বলে, আরে আমাকেও ‘আম্মা’ বলে ডাকতে আরম্ভ করেছিল। তাই ওকে ব্লক করে তবে রেহাই। ছেলেটা সবসময় ফেসবুক খুলে রাখে। ও সিলেটেরই ছেলে। কেন না সুরমা নদীর কথা বলে বলত, চল আব্বু, নদীর পাড়ে গিয়ে তোমার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনি, হাতেম তাই-এর গল্প জানো তুমি, আরব্য রজনী?

ইলিয়াস তপু ভোরের নিস্তব্ধতা নষ্ট করত। শেষরাতে উঠে খুব ডিসটার্ব করত। মনে হয় ছেলে কিংবা বুড়ো যে-ই হোক, হয় তার মাথায় গোলমাল, না হয় সে ফেসবুকে বসে এই খেলাতে মজা পেত। এ বড় বিচিত্র জগৎ। একদল লোক আছে, বেশির ভাগ ফেক আইডেনটিটি, তারা কেউ কাউকে টার্গেট করে তাকে অতিষ্ঠ করে। নৈতিকতা, বেদনাবোধ, কোনোরকম সহমর্মিতা তাদের ভিতর নেই। এদের একজন এমবিএ থাকে বেঙ্গালুরু, লাখ দুই পায় পার মান্থ, সে তার বন্ধু ছিল। বিরিঞ্চি তার বাড়িতে ২৭ বছর ধরে কাজ করা বৃদ্ধার মৃত্যুসংবাদ দিয়েছিল কোনো ভোরে। ভোরে সেইজন তাকে চা করে দিয়ে আবার শুয়ে পড়ত। এত বছরের লোক তাদের সংসারের একজন হয়ে গিয়েছিল। সকালে উঠে সেই ম্যানেজমেন্টবাবু লিখে দিয়েছিল, ভোরের চায়ের জন্য আপনার কষ্ট হচ্ছে না নিশ্চয়।

কী চমৎকার রসিকতা মানুষের মৃত্যুসংবাদে। তার অর্ধেক বয়স ওই নির্দয় টাকাওয়ালার। কাজের লোক, তার জন্য কীসের শোক। আর একটি লোক তাকে লিখেছিল, সরকারি কাজ করতেন, খুব উপরি পেতেন নিশ্চয়, উপরির জন্য অবসরের পর কষ্ট হবে নিশ্চয়।

একটি লোক তার নাম প্রফেসর শঙ্কু, সত্যজিৎয়ের আঁকা শঙ্কুর রেখাচিত্র ব্যবহার করেছিল নিজের প্রোফাইলে, সে লিখেছিল, মশায়, আপনি এত মূর্খ কেন, বলুন তো দেখি, দেবদাসের ঠাকুদ্দার নাম কী?

এদের পরিহার করতে করতে এখন অনেক নিশ্চিন্তে ভোরের পৃথিবীতে থাকে বিরিঞ্চি বোস। সে কোনো উত্তর দিত না। এক কুমড়ো পটাশ না রামলালকে বলেছিল আমার নামে যত কুৎসা গাইতে পারেন, গান, আমি কোনো উত্তর দেব না।

লোকগুলোর ক্লান্তি নেই। মাঝে মাঝে খোঁচা মারত। তাদের দুজনকে ব্লক করে দেওয়ায় এখন চুপচাপ। দম নিচ্ছে। ফেক নামের লোক আবার একটি নতুন নাম নিয়ে ঢুকে পড়বে তার বন্ধুতায়। বিরিঞ্চির ভোরে তারা ঘুমিয়ে থাকলেও, সমস্তদিন বিরিঞ্চির অনুপস্থিতে তারা আসে বিষ্ঠা ছেটাতে। বিরিঞ্চি শুনল পাশের ফ্ল্যাট থেকে অবিরাম কাশির শব্দ। নরেশ কাশছে। এই সময় ওই কাশি শুরু হয়। বাইরে একটি দুটি কাকের ডাক শোনা যাচ্ছে। নরেশের শরীর আচমকা ভেঙে গেছে, শরীরের সঙ্গে দাপটও। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে এই রমেশের কী দাপট। পুলিশের ইনফর্মার ছিল। এ পাড়ার চারটে ছেলের খবর ও পুলিশের কাছে পৌঁছে দেয়। হিরু, সমু, নীলু আর প্রভাত। প্রভাত আর নীলু থাকত দক্ষিণ পাড়ার বস্তিতে। খুব গরিব। হিরু আর সমু ছিল বিরিঞ্চির ক্লাস ফ্রেন্ড। পরে তারা ভর্তি হয় তিন কলেজে, হিরু যাদবপুর। নরেশ তখন থানায় গিয়ে বসে থাকে। নকশালের খবর দিয়ে ভালো টাকা কামাই করে। চারজনকেই পুলিশ ফৌত করে দিয়েছিল, তুলে আর ফেরত দেয়নি। হিরু আর প্রভাতকে তুলেছিল বাড়ি থেকে। শোনা যায় বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিল এই নরেশ। বাকি দুজনকেও নরেশ ধরিয়ে দিয়েছিল এক ডেরা থেকে।

বিরিঞ্চি বোস দেখল, সেই তুরস্কের রমজান এখনো জেগে, ওদেশে রাত আড়াইটে পৌনে তিনটে হবে। বিরিঞ্চি কী মনে করে ওস্তাদ আমির খান সায়েবের কণ্ঠের ভৈরবী রাগ রমজানের ওয়ালে পাঠিয়ে দিল। রাগ-রাগিণীর তো আর ভাষা নেই, ওস্তাদের কণ্ঠধ্বনিরও ভাষা নেই। এখন ভোর হয়ে আসছে এই পূর্ব দেশে। ভোর হচ্ছে পাখির ডাকে আর তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নরেশের কাশির শব্দ। ভয়ার্ত সেই কণ্ঠধ্বনি। রক্ত উঠে আসবে যেন। ওই কাশির শব্দের ভিতর চিৎকার করতে করতে নামছে গোপাল তার মেয়ে দুটিকে নিয়ে। তিনটি মেয়ে তার, একটির চার মাস। এই দুটিকে নিয়ে গোপাল স্কুল বাসের জন্য নিচে নামছে। একটি মেয়ে কাঁদছে। এখনো ভালো করে আলো ফোটেনি। গোপাল গজরাচ্ছে আর ভয় দেখাচ্ছে দুটিকেই, এইসা মারে গা, চোপ শালি, চোপ, বাসওয়ালাকে বলে দেব, স্কুলে যেন আটকে রাখে।

গোপালের খুব সাধ একটি পুত্রের। পরপর তিন মেয়ে। মেয়েগুলোকে শুধু ধমকায় আর মারে। ধমকাতে ধমকাতে নামছে। তার কণ্ঠের কর্কশতা ডুবে গেল ভৈরবীর আলাপে। জানালার বাইরে নীলচে আভা প্রকৃতির গায়ে... এ নভোম-ল মুক্তা ফলবৎ হিম নীলাভ... কমলকুমার মজুমদারের কণ্ঠস্বর মিশে গেল আমীর খানের কণ্ঠ সুধায়। এই কণ্ঠ বেজে উঠেছে দূর আঙ্কারায়। এ যেন আশ্চর্য এক রূপকথা। দূর আঙ্কারার মধ্যরাতে যখন বাজবে দরবারি, বাজল ভৈরবী। এখন সেই নগরের নভোমণ্ডল মুক্ত ফলবৎ হিম নীলাভ। এ এক একুশের রূপকথা। প্রযুক্তির একুশ শতকের।

আচমকা তার কম্পিউটারের মনিটরে, তার ফেসবুকের সাইটে ভেসে উঠল ভয়ানক এক ছবি। রমজান পাঠিয়েছে, তার নিচে তুর্কি ভাষায় কী যেন লেখা। হাড়জিরে এক কৃষ্ণাঙ্গ শিশু বসে আছে বুনো ঝোপের পাশে, তার কয়েক হাত দূরে একটি শকুন... শিশুটি মরছে তা টের পেয়েছে সে। মরলেই শকুন তাকে স্পর্শ করবে। দুর্ভিক্ষ পীড়িত সুদান ১৯৯৩। মনে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার  ফোটো জার্নালিস্ট কেভিন কারটার পরে ২০০২-এ অনুশোচনায় আত্মহত্যা করেন। আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে থাকল বিরিঞ্চি বোস। তুর্কি ভাষায় রমজানের লেখাটি যেন পড়তে পারছে... আমাকে বাঁচতে দাও... কোন সংগীত ওকে বাঁচাবে হে ভারতীয়; এর কথা কে জানে?

বিরিঞ্চি পরিষ্কার বাংলায় লিখল, আমি কী করব রমজান, আমির খান শোনো, শিশুটির কথা আমি জানাচ্ছি সকলকে।

রমজান কী লিখল তুর্কি ভাষায়, লিখল কী? অ্যা গুড ম্যান, কিন্তু সংগীত করবে কী?

নিশ্চল বিরিঞ্চি বোস। আমির খান গাইছেন। মনে হলো ভৈরবীর মূর্ছনা যেন নবীন আলোর বলয় গড়েছে ক্ষুধার্ত কঙ্কালসার শিশুটির চারদিকে। আলো ফুটছে। হে সেইসব আত্মজনেরা যারা চিরঘুমে গিয়েছ দুর্ভিক্ষে, মড়কে, একের পর এক চলে গিয়েছ একে একা রেখে, তোমরা জেগে উঠে ওকে পাহারা দাও। খাঁ সাহেবের ভৈরবী তোমাদের জাগাবে... প্রাণ দেবে। বিরিঞ্চি বোস বাংলায় লিখে দিল রমজানের সাইটে। রমজানও কী একটা লিখল, বিরিঞ্চিও। বাংলা আর তুর্কিতে... ছবিতে ছবিতে, যদুগোড়া চলে গেল আঙ্কারায়... স্তব্ধ হয়ে বসে থাকল বিরিঞ্চি বোস নিজের লেখা কথাগুলির দিকে তাকিয়ে। এ কি আর এক রূপকথা হবে রে বিরিঞ্চি, বাবা বিরিঞ্চি? পাখিরা তো ডাকল। মানুষের গলার স্বর শোনা গেল।


কলকাতা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়