ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রত্যাবাসন: দাবি মানলে ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ২০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রত্যাবাসন: দাবি মানলে ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারা

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার : আগামী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে ২১ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গার মতামত নিয়েছে জাতিসংঘ। তবে এসব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্মত হয়েছে কি না তিা জানায়নি জাতিসংঘ কিংবা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

রোহিঙ্গারা বলছে- দাবি-দাওয়া মানলেই তারপরই মিয়ানমারে ফিরবেন তারা। তবে ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে এখনও আশাবাদী বলে জানিয়েছেন ত্রাণ কমিশনার।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে টেকনাফের নয়া পাড়ার শালবাগানে শুরু হয় মিয়ানমার থেকে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা অনুযায়ী মতামত গ্রহণ। চলে বিকেল পর্যন্ত। যেখানে নিজ দেশে ফেরবার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারকে এই কাজে ১০টি ভাগে ভাগ হয় সহযোগিতা করছে ইউএনএইচসিআর।

নির্দিষ্ট ঘরে সর্তকর্তার সাথে মতামত জানতে চাওয়া হয় রোহিঙ্গাদের কাছে। শুরুতেই প্রশ্ন করা হয়, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে ইচ্ছুক কি না। যদি উত্তর না হয়, তার কারণও জানতে চাওয়া হয়।

প্রত্যাবাসনে তালিকায় থাকা রোহিঙ্গা নারী সেতেরা বেগম (৫০) বলেন, ইউএনএইচসিআরের ব্যক্তিরা আমার পরিবারে কতজন আছে সেটি জিজ্ঞেস করেছে। বলেছি বৃদ্ধ স্বামী, আমি টিবি রোগী ও যুবতী এক মেয়ে রয়েছে। তারপর তারা বলেছে; প্রত্যাবাসনের জন্য আপনাদের নাম তালিকায় এসেছে। তাই আপনাদের ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে ইউএনএইচসিআর যেতে বলেছে। আমি বলেছি; এখন অসুস্থ, স্বামীও বৃদ্ধ এবং যুবতী মেয়েকে একা কিভাবে অফিসে পাঠাবো। তাই যেতে পারবো না বলে দিয়েছি।

রোহিঙ্গা নারী রফিকা বেগম (২০) বলেন, ঘরে এসে আমাদের বলেছে মিয়ানমার ফিরে যাবো কি না? আমি বলেছি যাবো না। আর সাক্ষাতকার দেয়ার জন্য ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে যেতে বলেছে; সরাসরি বলেছি ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসেও যাবো না।

সাক্ষাতকার দিয়ে এসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা বলেন, মিয়ানমার ফেরত যাওয়ার জন্য তালিকায় নাম এসেছে। তাই ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে আসতে বলেছে অফিসে এসেছি। তারপর মিয়ানমার ফিরে যাবো কি না জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরে চারটি শর্ত মেনে নিলেই তারপর মিয়ানমারে ফেরত যাব বলে জানিয়েছি।

আরেক রোহিঙ্গা রফিক (৫৫) বলেন, ঘর থেকে ডেকে ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে নিয়ে আসে। তারপর ক্যাম্প ইনচার্জ জিজ্ঞেস করে মিয়ানমারে ফিরে যাবো কি না। তারপর বলি মিয়ানমারে ফিরে যাবো না। আর মিয়ানমারের সকল মুসলমানের অধিকার মেনে নিলে যাব।

এদিকে আগামী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ছাড়পত্র দিয়েছে তা সরকারের সফলতা। তবে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করার দাবি রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যে ছাড়পত্র দিয়েছে এটি বাংলাদেশ সরকারের সফলতা। এতে করে মিয়ানমার ভবিষ্যতে অস্বীকার করতে পারবে না যে রোহিঙ্গারা তাদের দেশের নাগরিক না। কিন্তু মিয়ানমার প্রত্যাবাসনে কতটুকু আন্তরিক এটা তো আমরা সন্দেহ মুক্ত হতে পারিনি।

আর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, আমরা আশা করেছিলাম প্রত্যাবাসনের জন্য আরও বেশি রোহিঙ্গা ইউএনএইচসিআরকে সাক্ষাতকার দেয়ার জন্য আসবে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২১ পরিবারের প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা সাক্ষাতকার দিয়েছেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে কি মতামত দিয়েছে সেটি এখনও জানা যায়নি।

তিরি আরও জানান, আমরা আশা করছি যে; বুধবার আরও বেশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের মতামত জানাতে সাক্ষাতকার দিতে আসবে। কারণ এটি নিয়ে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা, মৌলভী ও নারীদের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। ফলে কালকে রোহিঙ্গাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

উল্লেখ্য, পুরো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের কাজে সহযোগিতা করছে ইউএনএইচসিআর। বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই সংগঠনটির পক্ষ থেকে কেউ কথা বলেনি যদিও। তবে এরই মধ্যে মিয়ানমারের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা ফিরতে অসম্মতি জানিয়েছে।

তারা পূর্ণ নাগরিকতার অধিকার, কোন ট্রানজিট ক্যাম্প নয়, নিজ ভিটায় ফেরা, নিরাপত্তার খাতিরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের উপস্থিতি এবং অন্যান্য নাগরিকের মতই নিরাপত্তার দাবি করেন তারা।


রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২০ আগস্ট ২০১৯/ সুজাউদ্দিন রুবেল/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়