ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভাইস চেয়ারম‌্যানের ক্ষমতার দাপট!

যশোর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাইস চেয়ারম‌্যানের ক্ষমতার দাপট!

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিনারা পারভীন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দোকান ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নির্দেশ বা নোটিশ ছাড়া ও ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে গত শনিবার দুপুরে উপজেলার চেঙ্গুটিয়া বাজারে অনুগত ব‌্যক্তিদের নিয়ে এ ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন তিনি।

অভয়নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নওয়াপাড়া পৌর মেয়রসহ কোনো বৈধ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে মিনারা পারভীন ৫০ বছরের পুরনো পাকা দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অভয়নগর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

১৯৭২ সাল থেকে অভয়নগরের মহাকাল মৌজার ১৮ নম্বর খতিয়ানের ৩০ শতক জমির মধ‌্যে শূন্য দশমিক ৫০ শতক জমি কিনে ভোগদখল করে আসছেন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ইসারত মোল্যা। ওই জমি মহাকাল গ্রামের আজিজুর রহমানের কাছ থেকে কিনেছিলেন তিনি।

ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির অন্যতম উত্তরাধিকারী ইসরাত মোল্যার নাতি রবিউল ইসলাম বাবু বলেন, আমার দাদা ওই জমি কেনার পর সেখানে পাকা দোকান নির্মাণ করেন। বাবা প্রয়াত ওহাব মোল্যা সেখানে কাঠের ব্যবসা করতেন। পরে তিনি ব্যবসা বন্ধ করে ঘরটি ভাড়া দেন। সেভাবেই আমি চুক্তিপত্র সাপেক্ষে ইদ্রিস গাজীর কাছে দোকানটি ভাড়া দিই। ভাড়াটিয়া ওই দোকানে গ্রিল নির্মাণের ব্যবসা করছেন।

রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি মহাকাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খান এ মজলিস ওই জায়গাকে বিদ্যালয়ের জমি দাবি করে এক সপ্তাহের মধ্যে দোকানটি সরিয়ে নিতে চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে কলেজের সভাপতি মিনারা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৌখিকভাবে সময় চাওয়া হলে তিনি বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় দেয়া যাবে না। এক সপ্তাহে সরিয়ে নেয়ার চাপ পেয়ে বিষয়টি সুরাহার জন্য সেখানকার অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। দুই দিন না যেতেই গত শনিবার দুপুরে মিনারা পারভীন অনুগতদের সঙ্গে নিয়ে আমার ভাড়া দেয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেন।

ইসরাত মোল্যার নাতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফি কামাল বলেন, 'আমাদের পরিবারের সবাই মহাকাল কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলের উন্নয়নের পক্ষে আমরা। এজন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত। তবে এভাবে একজন জনপ্রতিনিধি আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না।'

দোকানের ভাড়াটিয়া মো. ইদ্রিস আলী গাজী বলেন, দুপুরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে যাই। এ সময় অন্য ব্যবসায়ীরা আমাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে খবর দেন। এসে দেখি, দোকানের পেছনের ওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। দোকানে থাকা টাকাও তারা নিয়ে গেছে।

মহাকাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খান এ মজলিস বলেন, শনিবার যশোর শিক্ষা বোর্ডে দাপ্তরিক কাজে গিয়েছিলাম। দোকান গুঁড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে কিছু জানি না। এ বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন।

এ বিষয়ে মিনারা পারভীন বলেন, 'বিদ্যালয়ের সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে চেয়েছি। আমি একা নই, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ওই জমি দখলমুক্ত করেছি। যেহেতু বিদ্যালয়ের সম্পত্তি, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি, তাই আমি সঙ্গে থেকে উচ্ছেদ করেছি।'

অভয়নগর থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। দুই পক্ষকেই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছি। ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা হওয়ায় আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন বলেন, 'শনিবার ঘটনা ঘটলেও আমি আজ জানতে পেরেছি। যেকোনো স্থাপনা সরাতে গেলে মালিকপক্ষকে সময় দেয়া উচিত।'

চেঙ্গুটিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আবু জাফর বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক জামির হোসেন বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান মিনারা পারভীন আমাদের কিছু না জানিয়েই ৫০ বছরের পুরোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছেন। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। এ দাবিতে আমরা বাজারে ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


যশোর/রিটন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়