ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এখনো তালিকাভুক্ত হননি দুই মুক্তিযোদ্ধা!

চাঁদপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখনো তালিকাভুক্ত হননি দুই মুক্তিযোদ্ধা!

মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের মাস্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী

চাঁদপুরের হাইমচরের দুই মুক্তিযোদ্ধা অজ্ঞাত কারণেই তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।

তারা হলেন- ওই উপজেলার পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের মাস্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী।

তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুদাম পাহাড়া দিয়েছিলেন এবং প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

অথচ বিএলএফের এই দুই সদস্য অদৃশ্য কারণেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে পারছেননা। জীবনের শেষ সময়ে এসে বেঁচে থাকাকালীন মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান প্রকৃত এই দুই মুক্তিযোদ্ধা।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, হাইমচর উপজেলার তৎকালীন পশ্চিমচর কৃষ্ণপুর গ্রামের আবুল খায়ের মাস্টার, মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী, গোলাম রাব্বানী, বশির উল্লাহ বেপারী এবং আ. রাজ্জাকসহ পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুদাম পাহাড়া দিয়েছিলেন। 

তৎকালীন প্রথমে গন্ডামারা গ্রাম থেকে আলগী বাজারের উত্তর পার্শ্বে সোনা মিয়া সরদার বাড়ি ও সর্বশেষ অমর চান মাস্টারের বাড়ির অস্ত্রগুদাম রাতদিন পালাক্রমে পাহাড়া দিয়েছেন।

ঐ সূত্রে আরো জানা যায়, বাগরা বাজারের উত্তর পার্শ্বে ডাকাতিয়া নদীতে পাক হানাদার বাহিনীর অস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় তৎকালীন চাঁদপুর দক্ষিণ অঞ্চল কমান্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুর, সহকারি কমান্ডার আবুল হোসেন ঢালীর নেতৃত্বে জীবন বাজি রেখে অক্টোবরের শেষের দিকে আক্রমণ করেন এবং পাক সেনাদেরকে পরাজিত করেন। আর এতে অংশ নেন দুই বিএলএফ সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধারা।  তারা পাক সেনাদের অস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী জব্দ করে যা পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক শক্তিকে আরো তরান্বিত করেছিলেন।

তৎকালীন সময়ে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মনি। আর শেখ ফজলুল হক মনির অধীনে সৈয়দ আবেদ মুনছুরের নেতৃত্বে এই আবুল খায়ের মাস্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেন ও অস্ত্রগুদাম পাহাড়া দেন।

দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসেন। তখন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারী কমান্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হাতে নিজের ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেন।

আরো জানা যায়, দেশ স্বাধীন হলে মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী বাংলাদেশ বিমানে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ও আবুল খায়ের মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ে যোগদান করে দেশ সেবায় মনোনিবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ ফজলুল হক মনি স্বাক্ষরিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতির সনদ প্রাপ্ত হন।

অন্যদিকে, আবুল খায়ের মাস্টার বাংলাদেশ মুক্তি ফ্রন্ট চাঁদপুর থানা শাখাকর্তৃক মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সনদ প্রাপ্ত হন। যার নম্বর-২৭৬। এই ২ মুক্তিযোদ্ধার সহযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী ও বশির উল্লাহ বেপারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে তালিকাভুক্ত হন। অপর সহযোদ্ধা আ. রাজ্জাক মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেয়ে মনোকষ্টে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে, গেলো ২০১৭ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই শুরু করলে এই দুই মুক্তিযোদ্ধা প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যাচাই বাচাই কমিটির নিকট জমা দেন। তাদের নাম সহ হাইমচর থেকে ৩০ জনের এক নামের তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পর্যন্ত পাঠানো হয়।

সেখানে যাচাই বাচাই তালিকাতে আবুল খায়ের মাস্টারের নম্বর- ১১ এবং মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারীর নম্বর- ১২। তবে ওই তালিকা কী অবস্থায় রয়েছে তার কোন হদিস নেই। শোনা যাচ্ছে, আবারও এই তালিকা হতে নতুন করে যাচাই বাচাই করা হবে।

এতে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার দাবি, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন কামন্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুর দেশে থাকলে তিনি রাজ সাক্ষী হতেন। আমরা যেই যেই বাড়িতে অস্ত্র গুদাম পাহাড়া দিয়েছিলাম, সেই বাড়িগুলোর মধ্যে অমর চান মাস্টার এখনও জীবিত রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও সাক্ষী দিবেন। ’

অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমর চান মাস্টার জানান, ‘মোহাম্মদ আলী ও আবুল খায়ের মাস্টার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তারাসহ পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা আমার ওই ঘরটিতে অস্ত্র রেখে পালাক্রমে পাহাড়া দিয়েছেন। আমার দুঃখ হয় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ এই পাঁচজনের মধ্যে বেঁচে থাকা দুইজন আজও স্বীকৃতি পাননি।’

এ সম্পর্কে মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধকালীন জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করলাম, অস্ত্রগুদাম পাহাড়া দিলাম।কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলাম না। শেষ বয়সে এসে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি, তিনি যেনো আমাকে মৃত্যুর পূর্বে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেন।’

আবুল খায়ের মাস্টার বলেন, ‘আমার সহযোদ্ধা পাঁচ জনের দুইজন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়ে দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার একটাই চাওয়া। তার হাত ধরেই যেন আমাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।’

 

জয়/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়