ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘কাজে না আসলে বাড়িতে চুলো জ্বলে না’

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কাজে না আসলে বাড়িতে চুলো জ্বলে না’

দিনমজুর শীলা দত্ত। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের বিলে চিনাবাদামের জমিতে কাজ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে জমিতে কাজ করার সময় কথা হয় তার সঙ্গে।  রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন,  ‘করোনার ব্যাপারে আমরা শুনছি এই রোগে মানুষ মারা যায়। একজন থেকে অন্যজনের মধ্যেও ছড়ায়। কিন্তু বাড়িতে থাকলে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে? কাজে না আসলে বাড়িতে চুলো জ্বলে না।  ছেলে-মেয়ে না খেয়ে থাকে।  তাই আমাদের বাধ্য হয়ে কাজে আসতে হচ্ছে।’

শীলা দত্ত বলেন, ‘আমরা কাজে না আসলে না খেয়ে থাকবো। কেউ আমাদের বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসবে না।  তাছাড়া আমরা যেসব লোকের জমিতে কাজ করি, এই সময়ে কাজ না করলে সেসব জমির ফসলও নস্ট হয়ে যাবে।  তাই ফসলের কথা চিন্তা করে এবং নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে বেরিয়েছি।’

শুধু দিনমজুর শীলা দত্তই নয়, একই কথা বলছিলেন দিনমজুর সঞ্জিত সরকার, রেনুকা সরকার, ভানু কির্ত্তনীয়া, দাউদ মোল্লা, মমতাজ বেগমসহ আরো অনেকেই।

সকালে ওই এলাকায় সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন জমিতে অন্তত দুই শতাধিক দিনমজুরকে কাজ করতে দেখা যায়।  তারা একে অন্যের কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছিলেন। বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই চলছে তাদের জীবন।  সকাল থেকেই জমিতে কাজ শুরু, দুপুরে সকালের রান্না করা খাবার খাওয়া আর কাজ শেষে বিকালে বাড়ি ফেরা।

শুধু করপাড়ার এই বিলেই নয় জেলার সব বিল এলাকার এসব দিনমজুর পরিবারের জীবনযাপন।  এদের নেই কোনো আতঙ্ক।  নেই কোনো সচেতনতা।  তারপরেও চলছে কাজের ব্যস্ততা।

তবে করোনা থেকে বাঁচতে সব শ্রেণিপেশার লোকজনকে ঘরে থাকার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  সরকার সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করেছে। করোনা প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা মেনে চলা উচিৎ তা কেবল মাত্র শহর বা বড় বড় বাজারগুলোতে মানতে দেখা গেলেও গ্রামে কিন্তু এর প্রভাব পড়েনি। সচেতনার অভাব, আর্থিক অনটন, কোথাও কোথাও ধর্মীয় গোড়ামি ও অন্যান্য নানা কারণে গ্রামাঞ্চলে এসব নিয়ম কানুনের খুব একটা চোখে পড়েনা।  আড়ালে আবডালে বসে আড্ডা দেওয়া, চায়ের দোকানে চা বিক্রিসহ আগের মতো জীবন স্বাভাবিক গতিতে চলছে গ্রামাঞ্চলে।  করোনা যদি গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা মহামারি আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এসব দিন মজুরদের বক্তব্য, করোনা সম্পর্কে তারা জেনেছে, আর দশ জনের কাছেও শুনেছে, চারিদিকের পরিবেশ সম্পর্কেও তারা জানেন, কিন্তু, তাদের কিছুই করার নেই।  পেটে মানেনা, জন বিক্রি না করলে বাড়িতে হাড়ি জ্বলবে না, না খেয়ে মরতে হবে—এজন্যই তারা কাজে বেরিয়েছেন।  এছাড়া তারা বছরব্যাপী যেসব মহাজনের জমিতে জন বিক্রি করে খায়, তাদের ফসল নস্ট হচ্ছে, পরিষ্কার না করলে ফসল হবে না সেটাও তদের দেখার দরকার আছে।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আমরা জনগনকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি।  আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরমর্শ দিচ্ছেন।  ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, ইউপি মহল্লাদাররাও কাজ করে যাচ্ছেন। তারপরও পুরোপুরি আমরা মানুষকে ঘরে রাখতে পারছি এমনটি নয়।  তবে আজ থেকে সেনাবাহিনীও মাঠে কাজ করছে।

তিনি যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করার অনুরোধ জানান। 


গোপালগঞ্জ/বাদল/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়