ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা চা বাগানে কাজ পাচ্ছে না

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা চা বাগানে কাজ পাচ্ছে না

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি বাগানে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন দয়ানন্দ মালের পরিবারের এক সদস্য। কিন্তু ওই বাগানে তার কাজ জোটেনি।

তাই বাধ্য হয়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জীবিকার তাগিদে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করছেন তিনি। তার মতো আনেকেই চা বাগানে কাজ না পেয়ে দিনমজুরির কাজ করছেন।

দেউন্দি চা বাগানের বাসিন্দা প্রতীক থিয়েটার সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ১৯৮০ সালে দেউন্দি বাগানে ৮৫০ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত নতুন করে শ্রমিক বাড়ানো হয়নি। ৮৫০ জনের পরিবারে সদস্য এখন প্রায় ৬ হাজার। এরমধ্যে অনেকে লেখাপড়া করছে। আবার অন্যত্র চাকরি করছে অনেকে। কেউ কেউ ব্যবসা করছে। তারপরও বাকি প্রায় এক হাজার শ্রমিকের এ বাগানসহ অন্য চা বাগানে কর্মসংস্থান না হওয়ায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা গিয়ে দিনমজুরির কাজ করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে বাগান ছেড়ে বাইরে যাচ্ছে।

সুনীল বিশ্বাস বলেন, এভাবে বালিশিরা ও লস্করপুর ভ্যালির  আওতাধীন চুনারুঘাটের দেউন্দিসহ ২৪টি, বাহুবলের ১০টি, নবীগঞ্জের দুটি ও মাধবপুর উপজেলার পাঁচটি বাগানের চা শ্রমিকদের পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক বাগানের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন।

এ সকল শ্রমিকদের দাবি, তাদের পরিবারের সদস্যরা যে বাগানে কাজ করছেন, সেই বাগানে তাদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। 

চা বাগানের কয়েকজন শ্রমিক জানান, অনেক চা বাগানে করোনাভাইরাসের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়নি। এ মুহূর্তে তারা সরকারের কাছে ছুটি চেয়ে পর্যাপ্ত খাবার ও আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, এই জেলার কোনো বাগানে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। দাবি জানালে মালিকরা বলে থাকেন, প্রয়োজন হলে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে জীবিকা নির্বাহে চা বাগানের শ্রমিকদের পরিবারের অন্য সদস্যরা বাইরে গিয়ে কাজ করছেন।

নৃপেন পাল বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সারা দেশের মতো চা শ্রমিকদেরও সরকারি ছুটির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় ও চা বাগান মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশের চা সংসদের’ কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। 

লস্করপুর ভ্যালির আওতাধীন দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াদ উদ্দিন বলেন, ‘‘এ পরিস্থিতিতে আমরা চা শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, তাই করছি। তাদের মাঝে মাস্ক, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। শ্রমিকরাই বাগানের প্রাণ।’’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, তাদের নিয়োগবিধি আছে। এ চাহিদা অনুযায়ী বাগানগুলো শ্রমিক নিয়োগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের ছুটির ব্যাপারে সরকারিভাবে নির্দেশনা আসেনি। তবে শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা শ্রমিকদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

 

মামুন/ইভা/বকুল 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়