ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

করোনার ভয়ে নয়, অর্থাভাবে মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না সন্তানরা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১০, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনার ভয়ে নয়, অর্থাভাবে মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না সন্তানরা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে সম্প্রতি সালেহা খাতুন (৬৫) নামের শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক বৃদ্ধাকে চাচার বাড়িতে রেখে গেছেন তার সন্তানরা। তবে, গুজব রটেছে যে, ওই বৃদ্ধা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে ফেলে গেছেন ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু বৃদ্ধার সন্তানদের দাবি, করোনার ভয়ে নয়, অর্থাভাবে মায়ের দায়িত্ব নিতে পারছেন না তারা।

নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের তশরা গ্রামের মৃত সামছুদ্দিনের স্ত্রী সালেহা খাতুন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজিজুল ইসলাম তাকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে পাঠান। তিন দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে আইসোলেশনে রাখার পর তার নমুনা গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহে পাঠানো হয়।

নান্দাইল উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে সালেহা খাতুনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তার মধ্যে করোনার উপসর্গ পাওয়া না গেলেও স্থানীয়দের চাপে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী, তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। অযথা গুজব ছড়ানো ঠিক নয়।

সালেহা খাতুনের ভাই আব্দুল মালেক জানান, ২০ বছর আগে সালেহা তার স্বামীকে হারান। এর কিছুদিন পর তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে শ্রীপুরের বর্মী এলাকায় চলে যান তিনি। সেখানে প্রথমে পোশাক কারখানায় এবং পরে বাসাবাড়িতে কাজ করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেন সালেহা। ছেলে-মেয়েদের সংসার আলাদা হয়। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ভালোই কাটছিল দিন। কিন্তু হঠাৎ এক ছেলে ডায়াবেটিস ও আরেক ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বর্তমানে সালেহার এক ছেলে ও তিন মেয়ে আছেন। ছেলে-মেয়েরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সালেহার থাকা-খাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। তাছাড়া তার সন্তানদের আর্থিক অবস্থাও ভালো না।

বড় মেয়েকে ফরিদপুরে, মেঝ মেয়েকে ঢাকায় এবং ছোট মেয়েকে বর্মীতে বিয়ে দিয়েছেন সালেহা। ছোট ছেলে বর্মীতে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মৃত দুই ছেলের স্ত্রী-সন্তানরা ঢাকায় থাকেন। দুই মেয়ে দূরে থাকায় সালেহা পর্যায়ক্রমে ছেলে ও ছোট মেয়ের কাছে থাকতেন। সর্বশেষ সালেহা খাতুন তার ছোট মেয়ের সঙ্গে ছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি তার মাকে চাচা নুরু মিয়ার কাছে রেখে যান।

বৃদ্ধার ছোট মেয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী হঠাৎ করে আমাকে ছেড়ে গেছে। এখন সন্তানদের নিয়েই চলতে পারছি না। তাই, কাকাকে বলে তার কাছে মাকে রেখে এসেছি।’

বৃদ্ধার ছেলের সঙ্গে মুঠোফেনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সালেহা খাতুন বলেন, ‘আমি প্যারালাইসিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী। আমার ছেলে-মেয়েরা নিজেরাই চলতে পারে না। তাছাড়া, তারা শ্বশুরবাড়িতে থাকে। তাই তারা আমাকে ভরণপোষণ করতে পারে না।’

নান্দাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম সুজন বলেন, ‘সালেহা খাতুনের বিষয়ে আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে সরকারি অনুদানের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করব।’


মিলন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ