ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা: মাদারীপুরের ১৩ যুবকের খোঁজ মিলছে না

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ২৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা: মাদারীপুরের ১৩ যুবকের খোঁজ মিলছে না

নিখোঁজ মানিক হাওলাদার ও নিখোঁজ জুয়েল হাওলাদার

লিবিয়ায় থাকা মাদারীপুরের ১৩ যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। লিবিয়ায় যে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ওই ১৩ জন ছিলেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

লিবিয়ায় ওই হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশি দালাল রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের মজিদ শেখের ছেলে জুলহাস শেখের বাড়িতে হামলা করে নিখোঁজ যুবকদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এ খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। জুলহাস শেখ পুলিশের কাছে দাবি করেন যে, তিনি করোনা রোগী। পুলিশ তাকে মাদারীপুর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে।

নিখোঁজ যুবকরা হলেন- রাজৈর উপজেলার হোসেনপুরের আবদুর রহিম, বিদ্যানন্দী গ্রামের জুয়েল হাওলাদার (২২) একই গ্রামের মানিক হাওলাদার (২৮), টেকেরহাট এলাকার আসাদুল, মনির হোসেন ও আয়নাল মোল্লা, ইশিবপুর এলাকার সজীব ও শাহীন, সদর উপজেলার জাকির হোসেন, জুয়েল হোসেন, সৈয়দুল, ফিরোজ ও দুধখালীর শামীম।

অনেক পরিবারের লোকজন জানেন না, তাদের সন্তান বেঁচে আছে কি না। অনেকে হত্যাকাণ্ডের খবরও শোনেনি। নিখোঁজ যুবকদের সঠিক পরিচয় না পাওয়ায় তাদের পরিবারকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

হোসেনপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিখোঁজ জুয়েল হাওলাদারের বাবা রাজ্জাক হাওলাদার ও মা রহিমা বেগম বলেন, ‘দালালরা আমাদের ছেলেসহ রাজৈরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজনকে লিবিয়ায় নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে নিয়ে যায় ৩/৪ মাস আগে। তারপর লিবিয়ার ত্রিপোলিতে না নিয়ে তাদেরকে বেনগাজির এক গ্রামে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। এরপর ভয়েস রেকর্ডে নির্যাতনের শব্দ পাঠিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা হোসেনপুরে জুলহাস শেখ নামের ওই দালালের বাড়িতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আসি। মানুষের কাছে শুনতে পাচ্ছি, লিবিয়ায় গুলি করে অনেক বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ছেলে বেঁচে আছে কি না তাও জানতে পারছি না। এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো খোঁজ পাই নাই।’

একই গ্রামের নিখোঁজ মানিক হাওলাদারের বাবা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলে মানিককে লিবিয়ায় নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজিতে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি। এখন আমার ছেলের খোঁজ পাচ্ছি না।’

রাজৈর থানার ওসি শওকত জাহান বলেন, ‘লিবিয়ায় লোক নেওয়া দালাল জুলহাস শেখের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা করেছে। আমরা ওই বাড়িতে গেলে জুলহাস বলে, আমার করোনা হয়েছে। করোনার কথা শুনে আমরা জুলহাস শেখকে মাদারীপুর সদর হসাপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করি।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিদের হত্যার কথা শুনেছি। তাদের মধ্যে মাদারীপুরের লোকজনই বেশি। মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে, এ তথ্য আমি এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাইনি। মন্ত্রণালয়ে আমি যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে, মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে সে তথ্য আমাদের দেবে। লাশ দ্রুত কীভাবে দেশে আনা যায়, আমি সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি।’


মাদারীপুর/বেলাল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়