ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লিবিয়ার হতাহত দুই যুবকের বাড়িতে শোকের মাতম (ভিডিও)

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৩০ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
লিবিয়ার হতাহত দুই যুবকের বাড়িতে শোকের মাতম (ভিডিও)

লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসদুপুর উপজেলার যুবক সুজন মৃধা ও গুরুতর আহত হয়েছেন ওমর শেখ। ওই দুই যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

মুকসুদপুরের গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সুজন মৃধা। তিনি লিবিয়ায় যাওয়ার আগে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তেন। তার বাবা কাবুল মৃধা কৃষক। পরিবারের দারিদ্র দূর করার উদ্দেশ্যে চার মাস আগে লিবিয়ায় পাড়ি জমান সুজন। এজন্য একই ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী গ্রামের দালাল রব মোড়লকে দিতে হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। লিবিয়ায় মাসিক ৩৫ হাজার টাকায় চাকরি হওয়ার কথা তার।

কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর কাজ পাওয়া তো দূরের কথা, সুজনের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিন আগে সুজনকে ওই দেশের মানবপাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

২৬ মে পাচারকারীরা সুজনের কাছে আরো ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। ১০ লাখ টাকা চেয়ে পরিবারের কাছে ভয়েস কল পাঠাতে বলে। পরে ওই দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি আমীর দালালের মোবাইল ফোন থেকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভয়েস কল পাঠান সুজন। সোমালিয়ায় আহমেদ মোহাম্মদ আদম সালামের ব্যাংক হিসাবে (ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নং-০০২৫২৬১৫৮৩৭৪৪৯, সোমালিয়া, মোগাদিসু) মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বলা হয়। সুজনের বাবা তাদের কাছে ১ জুন পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু তার আগেই ওরা সুজনকে গুলি করে হত্যা করে।

সুজনের মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে আসলে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সুজনের লাশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

অপরদিকে, একই উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মো. কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখ (২২) ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে দালাল লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিলেন। বতর্মানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপোলি হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

নিহত সুজনের বাবা কাবুল মৃধা জানান, তিনি অভাবী মানুষ। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। প্রতিবেশী যাত্রাপুর গ্রামের রব মোড়ল ৩ লাখ টাকায় ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠানোর কথা বলেন। সেখানে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়। তখন তিনি স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ও কিছু জমি বন্ধক রেখে রব মোড়লকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন। জানুয়ারি মাসের শেষদিকে রব মোড়ল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মানবপাচারকারী জুলহাস শেখের মাধ্যমে সুজনকে লিবিয়ায় পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর চাকরি তো দেওয়া হয়নি বরং সুজনকে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সুজনের মা চায়না বেগম (৪৫) বলেন, ‘ছেলেকে আমার বুকে ফিরায় দেও। আমার ছেলেকে দালালরা ১৭ দিন কোনো খাবার দেয় নাই। মারপিট করেছে। পরে গুলি করে মারছে। আমি আমার সন্তানের লাশ চাই। দালালদের ফাঁসি চাই। যাতে তারা আর কোনো মায়ের কোল খালি করতে না পারে।’

আহত ওমর শেখের বাবা মো. কালাম শেখ ও মা শাহিদা বেগম তার আহত ছেলেকে ফেরত চেয়েছেন। একই সাথে তারা মানবপাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

একই দাবি জানিয়ে ওই গ্রামের জয়নাল সরদার (৬৫), লিটন মৃধা (৪৫), আকিজুল ইসলাম বাবুল (৬৫) বলেন, ‘এই দালাল চক্রের হাতে গোহালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আরো কিছু যুবক বন্দি আছে। আমরা তাদেরকে উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে দালালদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। পরে হতাহতদের পরিবারের সাথে কথা বলা হয়েছে। আমারা তাদেরকে সহাযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। এখন সমস্যা হলো—মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দালাল চক্রের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। এখন মনে হচ্ছে, আমাদের এখানে একটি সক্রিয় দালাল চক্র রয়েছে। এখন তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করব।’





গোপালগঞ্জ/বাদল সাহা/রফিক 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়