ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সবুজে ঘেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. আজম খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবুজে ঘেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. আজম খান: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি দাঁড়িয়ে আছে কীর্তনখোলা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে।

বলা চলে এটিই বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যার দুদিকে দুটি নদী বয়ে চলেছে। আছে দুটি বৃহৎ সেতু, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে। তবে যদি সুন্দর সবুজ ক্যাম্পাসের কথা চিন্তা করি, তাহলে এটি অন্যতম। কারণ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় জেলা শহরের বাইরের পরিবেশে অবস্থিত। ফলে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, যার জাদু করা সৌন্দর্য এক মুহূর্তে আপনার মধ্যে কবি ভাবকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আজ যদি জীবনানন্দ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তার কবিতা ও সাহিত্যের অন্যতম জায়গায়টি হতো এই ক্যাম্পাস। কারণ প্রকৃতিকে এত কাছ থেকে উপভোগ করা যায়, সেটাও বোধহয় এই ক্যাম্পাসকে কাছ থেকে না দেখলেই নয়।

আপনি যদি নদী প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে এই ক্যাম্পাস আপনার জন্য। বরিশাল জেলার একমাত্র নদী কীর্তনখোলা এর পাশেই অবস্থিত। এর তীরে বসে আপনি আপনার নদী প্রেমকে তৃপ্তি সহকারে উপভোগ করতে পারবেন। আপনি যখন পড়ন্ত বিকেলে এর সৌন্দর্য উপভোগে করবেন, তখন হয়তো আপনার মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ জেগে উঠতে পারেন। এমন সৌন্দর্য যে সব কিছুকে হার মানাবে। আপনি এর তীরে বসে বিকেল বেলার সূর্য অস্ত দেখতে পাবেন। উপভোগ করতে পারবেন গোধূলি। বাতায়নে বসে পেতে পারেন শ্রেষ্ঠ উপহার দক্ষিণা হাওয়া।

এখানে বসেই দেখতে পারেন জেলে কীভাবে মাছ ধরেন। তারপর অসংখ্য নৌকা, যারা একের পর এক নদী ঘুরে বেড়িয়েছে। চাইলে নৌকা ভ্রমণ ও উপভোগ করতে পারেন। ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনাকে অন্য কোথাও যেতে হবে না।

 

 

আপনি ক্যাম্পাস বসেই উপভোগ করবেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের রূপ। আবার যখন প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে, আপনি বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুকেই খুব কাছ থেকে দেখতে পাবেন। যেমন গ্রীষ্মের কাঠ পোড়ানো রৌদ্র। যখন ধরায় বর্ষা আসবে, তখন বর্ষার সুন্দর আবহাওয়া ও কদম ফুলের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রম, কীভাবে সোনা ফলাচ্ছে মাঠে, বর্ষার নদীর প্লাবন, সেই সাথে উপভোগ করতে পারবেন শরতের সুন্দর আকাশ। এগুলো দেখে আপনার মনে হবে কে যেন আকাশে তুলো উড়িয়ে দিয়েছেন। সাথে কাশফুলের সৌন্দর্য তো আছেই, যা আপনার মনে জায়িগে তুলবে নতুন এক জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথকে।

যখন ধরায় হেমন্ত আসবে, তখন আপনি হেমন্তকেও কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন। আবার যখন ধরায় শীত আসবে, তখন উপভোগ করতে পারবেন হাড়কাঁপানো শীতের অনুভূতিকে। দেখতে পাবেন অনেক গরিব ও অসহায় মানুষকে, যা আপনার হৃদয়কে ব্যথিত করবে। এক মুহূর্তের জন্য আপনার মধ্যেও জন্ম নিতে পারে বিদ্রোহী নজরুল আর সুকান্ত। আর বসন্তের কথা নাই বা বলি। যখন ক্যাম্পাস সেজে উঠে এক নতুন সাজে। যেন দেখে মনে হয়, এ যেন মায়ের কোলে এক নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। কোকিলের কুহু কুহু ডাক আপনাকে আবার কোনো এক পাগল প্রেমিক বানিয়ে দিতে পারে। তাই বলা চলে, এভাবে প্রকৃতির ছয়টি ঋতুকে কাছ থেকে উপভোগ করতে ববির বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।

যদি শিক্ষার কথা বলি, তাহলে বলবো সেটাও অন্যদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হলো এটি। এর প্রমাণ ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে সবার কাছে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সব কিছুই এখানে রয়েছে। শিক্ষার কোনো কমতি আপনার এখানে হবে না বরং পরিপূর্ণভাবে তা গ্রহণ করতে পারবেন।

এ ছাড়া বিশ্বের সকল আধুনিক বিষয় নিয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগতো থাকছেই। আছে আবাসিক ব্যবস্থা। বই পড়ার জন্য বৃহৎ লাইব্রেরি, দক্ষিণ অঞ্চলের বৃহত্তম মসজিদ (নির্মাণ কাজ শেষের দিকে), ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি ভবন এখানে রয়েছে।

আয়তনে ছোট হলেও এর সৌন্দর্য এটিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে এক অনন্য রূপে। বলা যায়, এ যেন এক রূপকথার রাজ্যে সবুজ গালিচার বুকে দাঁড়িয়ে আছে। আপনাকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে তার থেকে জ্ঞান ও সৌন্দর্য নিতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।


রাইজিংবিডি/বরিশাল/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মো. আজম খান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়