ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গবেষণার তথ্য প্রকাশে বিড়ম্বনা

মেশকাত মিশু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গবেষণার তথ্য প্রকাশে বিড়ম্বনা

মেশকাত মিশু, রাবি : গবেষণার তথ্য প্রকাশ নিয়ে আর্থিক বিড়ম্বনায় পড়েছেন দেশের গবেষকরা।

বিশ্বব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যাওয়ায় টাকা দিয়ে গবেষণা তথ্য প্রকাশের শর্ত আরোপ করছে পাবলিকেশন সংস্থাগুলো।

নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ না দিতে পারায় বিশ্বের প্রসিদ্ধ জার্নাল প্রকাশকদের কাছে দীর্ঘসময় আটকে থাকছে গবেষণার তথ্য। এতে গবেষণায় আগ্রহ কমছে গবেষকদের।

গবেষকরা বলছেন, এক বছর আগেও বিশ্বের প্রসিদ্ধ জার্নালগুলোতে তথ্য প্রকাশে এমন বিড়ম্বনা ছিল না । আগে এই জানার্লগুলোতে অর্থ ছাড়াই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সুযোগ ছিল গবেষকদের। কিন্তু এখন সর্বনিম্ন ৩৫০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত প্রকাশ খরচ করতে হচ্ছে। এতে আর্থিক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-গবেষকরা।

প্রসিদ্ধ জার্নালের মধ্যে স্প্রিঞ্জার, হিন্দাই, এসিএস, এমডিপিআই, বিএমসি। বিএমসি পাবলিকেশনের অধীনের জার্নালগুলোতে একটি গবেষণা পাবলিকেশনের জন্য বাংলাদেশি গবেষকদের খরচ পড়বে ২ হাজার ১৮৫ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৬৬ টাকা।

হিনদাই পাবিলেকশনের অধীনে প্রায় ১০০টি জার্নাল রয়েছে। যেগুলোতে খরচ পড়ছে সর্বনিম্ন ৫০০ ডলার বা ৪১ হাজার ৮ ০০ টাকা থেকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৬০ টাকা। স্প্রিঞ্জার পাবলিকেশনের অধীন জার্নালগুলোতে খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ১ হাজার ডলার।

এদিকে এসিএস পাবলিকেশনের অধীন জানার্লগুলোতে সর্বনিম্ন খরচ ৬২ হাজার ৭০৫ টাকা। এমডিপিআই পাবলিকেশনের অধীন দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে ৩৫০ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে ১ হাজার ৮০০ ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত। সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।

গবেষণায় এমন বিড়ম্বনার প্রভাব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজা বলেন, গবেষণালব্ধ তথ্য প্রকাশ না করতে পারলে গবেষকদের আগ্রহ কমবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং কমে যাচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অথবা মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতার দাবি করেন তিনি।

তার প্রশ্ন, একজন গবেষক সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। যদি দেড় লাখ টাকা দিয়ে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করতে হয়, তাহলে কীভাবে গবেষণা সম্ভব?

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘গত বছর ন্যাচার এর একটা গবেষণা প্রকাশ করতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ বহন করতে হয়েছে। সেগুলো আমাদের গবেষকদের নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর আবেদন করেও কোনো সাড়াশব্দ পায়নি। আমাদের চাওয়া হলো-কোনো গবেষক ভালো মানের জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই খরচটা বহন করা হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথ সংর্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই গবেষণা পাবলিকেশনের খরচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অথবা মন্ত্রণালয় থেকে বহন করা উচিত। ’

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ভালো জার্নালগুলোতে পূর্বে পাবলিকেশন খরচ না থাকলেও এখন প্রয়োজন হচ্ছে। একজন গবেষককে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে গবেষণা পাবলিকেশন করা সম্ভব না। গবেষণা করে পাবলিশ না করতে পারলে কোনো লাভ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগী না হলে গবেষকরা নিরুৎসাহিত হবেন। শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আমাদের দাবি, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ভালো জার্নালে পাবলিকেশনের খরচ বহন করা হোক।’


রাইজিংবিডি/রাবি/ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মিশু/ইভা 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়