ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

টোটো কোম্পানির সাফল‌্যের গল্প

খালিদ সাইফুল্লাহ্ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টোটো কোম্পানির সাফল‌্যের গল্প

মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতার ফলে প্রতিনিয়ত দাম কমছে মোবাইল ফোনের, কিন্তু বাড়ছে সহজলভ্যতা। ফলে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নতুন স্মার্টফোন কেনার আগে প্রযুক্তি সচেতন ক্রেতারা ইউটিউবে বিভিন্ন ফোনের রিভিউ দেখে স্মার্টফোন পছন্দ করছেন। ইউটিউবে মোবাইল ফোনের রিভিউ দেখার জন্য বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে অ‌্যান্ড্রয়েড টোটো কোম্পানি (এটিসি) সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই ইউটিউব চ্যানেলের অন্যতম কর্ণধার আশিকুর রহমান তুষার। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও রাইজিংবিডির ক‌্যাম্পাস পাতার নিয়মিত লেখক খালিদ সাইফুল্লাহ্। আশিকুর রহমান শুনিয়েছেন টোটো কোম্পানির সাফল‌্য গাঁথা গল্প।

রাইজিংবিডি: অ‌্যান্ড্রয়েড টোটো কোম্পানির যাত্রা শুরু কীভাবে?

আশিকুর রহমান তুষার: অ‌্যান্ড্রয়েড টোটো কোম্পানির যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের শেষের দিকে, প্রায় ছয় বছর আগে। সেসময় আমরা সবাই স্কুলে পড়ি। তখন ফেসবুকে টেকনোলজি রিলেটেড বিভিন্ন গ্রুপের ক্রেজ ছিল যেমন- অ‌্যান্ড্রয়েড কথন, অ‌্যান্ড্রয়েড সমগ্র। তখন রাফিদ ইসলাম, আরিফুল ইসলাম ইমন, আকিব রাজ, তানভীর ইভানরা মিলে অ‌্যান্ড্রয়েড টোটো কোম্পানি (এটিসি) ফেসবুক গ্রুপ খোলে। ওদের মোবাইল ফোন এবং নতুন সব টেকনোলজি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে, নতুন নতুন মোবাইলের রিভিউ ভিডিও দেখতে ভালো লাগত। এটিসির গ্রুপ থেকেই এরপর ইউটিউব চ্যানেল খোলা হয়।

রাইজিংবিডি: চ্যানেলের নাম ‘টোটো কোম্পানি’ রাখার কারণ কী?

আশিকুর রহমান তুষার: আমরা প্রত্যেকেই খুব সাধারণ ঘরের ছেলে। আমরা যখন শুরু করেছিলাম, তখন একেবারেই শখের বশে শুরু করেছিলাম। আমাদের কোনো অফিস বা স্টুডিও ছিলো না। আমরা সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভিডিও শ্যুট করতাম। একটা কথা প্রচলিত আছে, যেসব ছেলেরা সারাদিন ঘুরে বেড়ায় বয়স্করা তাদের বলেন ‘টোটো কোম্পানি’। আমরা যেহেতু সারা দিন ঘুরে ঘুরে ভিডিও বানাতাম, তাই আমাদের চ্যানেলের নাম দেই টোটো কোম্পানি।

রাইজিংবিডি: আপনাদের চলার পথের গল্প জানতে চাই।

আশিকুর রহমান তুষার: ফেসবুক গ্রুপ এবং চ্যানেলসহ আমরা ২০১৪ সালে শুরু করি আমাদের পথচলা। তখন আমরা রিভিউ করার জন্য মিরপুর শাহ্ আলী প্লাজায় মোবাইলের দোকানগুলোতে গিয়ে দোকান মালিকদের থেকে অল্প কিছুক্ষণ ভিডিও করার জন্য ফোন চেয়ে নিতাম। তাদের দোকানেই ফোন বের করে ফোনের রিভিউ ভিডিও শ্যুট করতাম, আর বাসায় এসে ফুটেজগুলো এডিট করতাম। এভাবেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে দেশীয় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো আমাদের রিভিউ করার জন্য ডিভাইস পাঠাতে শুরু করে। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে এবং দর্শকদের ভালোবাসায় ইন্টারন্যাশনাল ফোন কম্পানিগুলো থেকেও রিভিউ ইউনিট পাই। এখন পর্যন্ত আমরা ৪৫০ এর বেশি ভিডিও বানিয়েছি। এখন প্রতি সপ্তাহেই গড়ে ৩ থেকে ৪ টি ভিডিও বানাই আমরা। বর্তমানে আমাদের চ্যানেলে সাত লাখ আশি হাজার সাবস্ক্রাইবার। এক বছর আগেও আমাদের চার লাখ সাবস্ক্রাইবার ছিল, অর্থাৎ গত এক বছরেই তিন লাখ আশি হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার বেড়েছে। এছাড়াও আমাদের ফেসবুক এটিসি অফিসিয়াল গ্রুপে তিন লাখের বেশি মেম্বার (সদস‌্য) রয়েছেন।

রাইজিংবিডি: অ‌্যান্ড্রয়েড টোটো কোম্পানির ইউটিউব চ্যানেল ছাড়া আর কি কি কার্যক্রম রয়েছে?

আশিকুর রহমান তুষার: আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও এটিসি অফিসিয়াল গ্রুপ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, ফেসবুক পেজ আছে এবং এটিসিটোটো ডটকম নামে একটি টেক ব্লগ আছে। আমাদের গ্রুপে মানুষ ফোন বা টেক রিলেটেড যে কোনো পোস্ট করতে পারেন, যেমন ফোনের দাম, ল্যাপটপের দাম, ক্যামেরার দাম, কম্পেয়ার, এই বাজেটে কোন ফোন বেস্ট হবে, ফোনের কোনো সমস্যা বা টিপস সংক্রান্ত পোস্ট ইত্যাদি। গ্রুপে ৩ লাখের বেশি মেম্বার আছে এবং গ্রুপটি খুবই একটিভ। গ্রুপ পরিচালনা করার জন্য ১৫ জনের বেশি ডিজিটাল টিম মেম্বার আছেন।

রাইজিংবিডি: এটিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আশিকুর রহমান তুষার: এটিসির ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো একটি পরিপূর্ণ টেক কমিউনিটি গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব ভিডিওর পাশাপাশি রিটেন ব্লগ, পডকাস্ট, টেক নিউজ, ফেসবুক গ্রুপ সবকিছুই থাকবে। আমরা এর খুব সামান্যই পেরেছি। আপাতত চ্যানেলের দিকেই সম্পূর্ণ মনোযোগ।

রাইজিংবিডি: মোবাইল ফোন রিভিউর কোন দিকগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়?

আশিকুর রহমান তুষার: রিভিউগুলোতে আমরা ফোনের নেগেটিভ দিককেই প্রাধান্য দেই, কারণ আমাদের কাজটাই সমালোচনা করা। ফোনের প্রশংসা শুনতে চাইলে কোম্পানি, বিজ্ঞাপন, সেলসম্যান থেকেই শুনা যায়। আমাদের কাজ হচ্ছে ফোনের নেগেটিভ বা কমতিগুলো খুঁজে বের করা। ফোনের ভালো-খারাপ উভয় দিকই তুলনামূলক তুলে ধরা, যাতে কাস্টমারের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয় কোন ফোনটা তার জন্য উপযুক্ত হবে।

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশে এটিসি এত জনপ্রিয় কেন?

আশিকুর রহমান তুষার: আমাদের স্ট্রেটকাট কথাবার্তা দর্শকদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বাংলা ভাষায় টেক কন্টেন্ট নিয়ে আমরাই ধারাবাহিকভাবে বহু বছর ধরে কাজ করছি। এজন্য আমাদের উপর মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে। এ জন্যই এটিসি জনপ্রিয় হয়েছে বলে আমি মনে করি।

রাইজিংবিডি: আপনারা এখন পর্যন্ত কি কি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন?

আশিকুর রহমান তুষার: প্রথম অবস্থায় রিভিউ ইউনিট ম্যানেজ করা অনেক কঠিন ছিল। সবসময় নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ফোন কিনে বা শপে গিয়ে শপ থেকে ফোন নিয়ে রিভিউ বানানো সম্ভব না। প্রায় এক দেড় বছর ধরে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো রিভিউ ইউনিট দেয়ার ফলে এ সমস্যা আর হয় না। এছাড়া বাংলাদেশে ইউটিউব অ‌্যাডসেন্স থেকে ইনকাম খুবই কম, একদম নামমাত্র বলা চলে। এজন‌্য আমাদের বড় টিম চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। আশা করি, সামনে থেকে আমাদের জন্য এই বিষয়গুলো আরো সহজ হয়ে যাবে।

রাইজিংবিডি: ফোন বা টেক ইউটিউবিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কী ধরনের সুযোগ আছে?

আশিকুর রহমান তুষার: টেক বা গ্যাজেট/ডিভাইস রিলেটেড ইউটিউবিং এর ক্ষেত্রে দেশে প্রচুর সুযোগ আছে। কারণ, এখন মানুষ লেখালেখির চেয়ে ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করেন। সবাই পড়তে চান না, দেখতে চান। এখান থেকে ভালো আয়ের উৎস বের করে আনা সম্ভব, তবে লেগে থাকতে হবে কয়েক বছর একটানা।

রাইজিংবিডি: ফোন কোম্পানিগুলোর নিকট থেকে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

আশিকুর রহমান তুষার: বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো তারা যাতে নিয়মিত আমাদের রিভিউর জন্য ডিভাইস প্রেরণ করে। বাইরের দেশের ইউটিউবারদের ফোন রিলিজের কয়েক সপ্তাহ আগে রিভিউ ইউনিট দেয়া হয়, এরকম সুযোগ আমাদেরও দেয়া হোক। শুধু আমাদেরই না, বাংলাদেশের ছোট বড় অন্য ইউটিউবারদেরও যাতে দেয়া হয় এই প্রত্যাশা করি।

রাইজিংবিডি: আপনাকে ধন‌্যবাদ।

আশিকুর রহমান তুষার: আপনাকে এবং রাইজিংবিডি ডটকমকেও ধন‌্যবাদ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।


এনএসইউ/খালিদ সাইফুল্লাহ্/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ