ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘আমি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ভালোবাসি’

রায়হান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২০, ৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ভালোবাসি’

বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত এক প্রবীণ বটবৃক্ষ ঢাকা কলেজ। বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ঢাকা কলেজের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করেছেন দেশের অনেক বরেণ্য কিংবদন্তি। তাদের লেখনীতেও ঢাকা কলেজের চিত্র ফুটে উঠেছে।

কিন্তু এখানকার ছাত্রদের বরাবরই বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে লেখাপড়া করে সাফল্য অর্জন করতে হয়েছে। ঢাকা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রথমে অডিটোরিয়ামে রিডিং রুম চালু করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে রিডিং রুমের অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ ও ২ নম্বর রুমে স্থায়ী রূপ পেয়েছে।

ঢাকা কলেজের রিডিং রুমে পড়েছে কিন্তু নাছির ভাইকে চেনে না এরকম ছাত্র পাওয়া খুবই কষ্টকর হবে।

মুন্সীগঞ্জে পৈত্রিক নিবাস হলেও বাবার চাকরি সূত্রে ঢাকা কলেজেই জন্ম লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের। তাদের পরিবারের প্রায় সবাই ঢাকা কলেজের সাথে যুক্ত। তারা চার ভাই ঢাকা কলেজে চাকরি করছেন। তবে দুইজন মারা গেছেন এবং তারা দুইজন বর্তমানে ঢাকা কলেজে চাকরিরত আছেন। সহযোগী লাইব্রেরিয়ান মো. নাছির উদ্দিন ২০০৮ সালে ঢাকা কলেজে চাকরিতে যোগদান করেন।

নাছির উদ্দিন সকাল ৮টায় কলেজে আসেন এবং রাত ১১টায় বাসায় ফেরেন। প্রায় ১৫ঘণ্টা তিনি ছাত্রদের সেবা দিয়ে থাকেন। ফলে ছাত্রদের সাথে তার একটি অসাধারণ মেলবন্ধন রয়েছে। লাইব্রেরি থেকে ছাত্রদের বই দেয়া ও সংগ্রহ করা এবং সান্ধ্যকালীন রুমে ছাত্রদের উপস্থিতি নেয়া ও মশার কামড় থেকে ছাত্রদেরকে রক্ষা করার জন্য মশার কয়েল দেয়া ইত্যাদি কাজ করে থাকেন তিনি।

নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সান্ধ্যকালীন পাঠকক্ষে পড়ে অনেকে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। তারা ঢাকা আসলে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। এই কলেজে আমার জন্ম, আমি এই কলেজকে ভালোবাসি কলেজের ছাত্রদের ভালোবাসি। ছাত্ররাও আমাকে খুব ভালোবাসেন। আ এই কলেজকে ঘিরেই আমার জীবন। যখন কোনো ছাত্র এসে বলে, ভাই আমার চাকরি হয়েছে, তখন খুব আনন্দ লাগে। কিন্তু যখন কোনো ছাত্র এসে বলে ভাই এখনও কোনো চাকরি পাচ্ছি না, তখন খুব কষ্ট লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অবসর সময় ইসলামিক বই পড়ি। যত কষ্টই হোক আমি আনন্দের সাথে দায়িত্ব পালন করি এবং আমার সহকর্মীরাও খুব আন্তরিক। ঢাকা কলেজের সান্ধ্যকালীন পাঠকক্ষের ছাত্র ছিলেন মামুন ভাই। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করেছেন। ঢাকায় যখন আসেন, তখন আমার সাথে দেখা করেন ও যোগাযোগ রাখেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের রফিক স্যার ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় এই সান্ধ্যকালীন কক্ষে লেখাপড়া করেছেন এবং তিনি বর্তমান শেখ কামাল ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন। তিনিও খুব আন্তরিক মাঝেমধ্যে তিনি আমার খোঁজখবর নেন।’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি নিয়মিত সান্ধ্যকালীন পাঠ করতে আসি, নাসির ভাই আমাদের জন্য যে কষ্ট করেন, তা অতুলনীয়। মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট তার জন্য দোয়া করি, তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন এবং আমাদেরকে সেবা দিয়ে যেতে পারেন।’

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল শুভ বলেন, ‘আমরা কলেজের ছাত্রাবাসে থাকি না, বাহির থেকে সান্ধ্যকালীন পাঠকক্ষে পড়তে আসি। নাসির ভাই সবসময়ই ছাত্রদের সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলেন, যেটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তাছাড়া আমাদের মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি নিয়মিত মশার কয়েল জ্বালিয়ে দেন, ফলে আমরা মনোযোগের সাথে লেখাপড়া করতে পারি।’

সান্ধ্যকালীন পাঠ কক্ষের প্রতিষ্ঠার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব আনোয়ার মাহমুদ স্যার। তিনি বলেন, ‘ঢাকা কলেজে সবসময় মেধাবী ছাত্ররাই ভর্তি হয়ে থাকেন। তাদের বিকাশ করা আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ছাত্রদের দাবিগুলো আমি তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ্দীন আহমেদের নিকট তুলে ধরি এবং তিনি ছাত্রদের একটি সান্ধ্যকালীন পাঠকক্ষের ব্যবস্থা করে দেন।’

 

ঢাকা কলেজ/রায়হান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়