ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যে নদীতে স্বপ্নের বসবাস

মাথিয়া ঐশী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ২৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে নদীতে স্বপ্নের বসবাস

মানব মন একই সঙ্গে আনন্দ ও জ্ঞান পিপাসু। ভ্রমণ সবার কাছেই প্রিয় এবং আনন্দদায়ক। তবে, ভ্রমণ করে শুধু আনন্দই পাওয়া যায় না, সঙ্গে চারপাশের জগৎ সম্পর্কে বিচিত্র সব তথ্য জানা যায়।

আমাদের বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। প্ৰকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে এই নদীগুলোতে। সৌন্দর্যমণ্ডিত নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ এবং গঙ্গার শাখা নদী হচ্ছে কুষ্টিয়ার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াই নদী। একসময়ের খরস্রোতা এই নদী আজ শান্ত রূপ ধারণ করেছে। অধিকাংশ গতিপথেই ধীরগতিতে একেবেঁকে নদীটি বয়ে চলেছে। আঁকাবাঁকা নদীতে নৌকাভ্রমণ যেন এক অন্যরকম আনন্দদায়ক মুহূর্তের সৃষ্টি করে। নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারে।

তাই একদিন পড়ন্ত বিকেলে দল বেঁধে চলে গেলাম গড়াই নদীর নৌকাভ্রমণে। এই ভ্রমণ এখনও আমার মনকে আবিষ্ট করে রেখেছে। নৌকায় ভাসতে ভাসতে গ্রামীণ নিসর্গ দৃশ্য আজও আমার মনে ঢেউ তোলে। গালিচার মতো বিছিয়ে থাকা চর ও শ্যামল প্রকৃতির ব্যঞ্জনা ভেতরটাকে মুগ্ধ করে আজও। মাথার উপর বিশাল আকাশ, চারদিকে হু হু করা বাতাস আর ঢেউখেলানো শব্দে নৌকার সাথে সাথে আমাদের মন হারিয়ে গিয়েছিল বহুদূর।

সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গড়াই নদীর এক পারের কিছু অংশে একটি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। জায়গাটির ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সড়ক এবং নদী পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অচিরেই পার্কটি স্থানীয় ও ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে।

নদীর অপর পারে খেলার মাঠ, দু’একটা ঘর এবং বাজারের সমাহার। আমাদের নৌকা কখনো মাঝনদী আবার কখনো তীর ঘেঁষে এগিয়ে চলছিল। নৌকা যখন মাঝনদীতে, তখন দূরের গাছপালা আর ঘর-বাড়িগুলোকে মনে হচ্ছে কোনো শিল্পীর নিপুণ হাতের চিত্রকর্ম।

চারদিক শান্ত, নিশ্চুপ। কেবল পানির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। আমরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নদীর সৌন্দর্য দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম, সৃষ্টিকর্তা কত অপরূপ করে এই নদী তৈরি করেছেন।

ভ্রমণের সবথেকে আকর্ষণীয় অংশ ছিল সূর্যাস্ত। গোধূলির আবিরে রাঙা অস্তায়মান লাল সূর্য। চরাচরে সর্বত্রই বিরাজ করছিল এক নৈসর্গিক নীরবতা। বিস্তৃত নদী তীর, কল্লোলিত নদী, স্বর্গীয় আভায় রাঙানো আকাশ—এই শোভা, এই রূপের মাধুরী দেখে দু’চোখের তৃষ্ণা যেন মিটছিলো না।

একসময় মনে হল, নদী আর আকাশ যেন মিশে গেছে দিগন্ত রেখায়। সূর্য যেন কান পেতে শুনছে পৃথিবীর গোপন বিষাদের সুর। এভাবেই একসময় সূর্য যেন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পৃথিবীকে অন্ধকার করে চলে গেল। এই সৌন্দর্য হয়তো লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মাঝনদীতে নৌকায় বসে সূর্যাস্তের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটা যেন স্বর্গসুখের মতো মনে হচ্ছিল। ভাবছিলাম, স্বপ্নরা মনে হয় এই নদীতেই বসবাস করে।

এরই ফাঁকে ফাঁকে কিছু কিছু দৃশ্য আমরা ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সবসময়ই আনন্দের। নদীমাতৃক আমাদের এদেশে নৌকাভ্রমণ বিচিত্র কিছু না হলেও আমাদের সবার মনেই এই ভ্রমণের স্মৃতি চির অম্লান হয়ে আছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়