ও কী গাড়িয়াল ভাই...
নিয়ামুর রশিদ শিহাব || রাইজিংবিডি.কম
‘ও কী গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে’। গ্রামবাংলার সেই চিরচেনা গান এখন আর শোনা যায় না। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী সেই গরুর গাড়ি। কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার ছোয়ায় গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি।
একসময় গ্রামীণ জনপদে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিলো এটি। মাত্র তিন/চার যুগ আগেও পণ্য পরিবহন ছাড়াও বিয়ের বর-কনে বহনে গরুর গাড়ি ছাড়া বিকল্প কোনো বাহন কল্পনাও করা যেত না। প্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীণ জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির বহুল প্রচলন পরিলক্ষিত হতো। আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে গেছে গাড়িয়াল পেশাও।
অনুমান করা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ১৬ শ’ থেকে ১৫ শ’ সালের আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিলো, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন জনপ্রিয় উপন্যাসেও দক্ষিণ আফ্রিকার যাতায়াত ও মালবহনের উপায় হিসেবে গরুর গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘এইচ রাইডার হ্যাগার্ড’-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কিং সলোমনস মাইনস’ নামক উপন্যাসেও গরুর গাড়ি সম্বন্ধে বর্ণনা রয়েছে।
সরেজমিনে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরেও গরুর গাড়ির সন্ধান মেলেনি। গলাচিপা উপজেলার রতনদী গ্রামের এক বৃদ্ধ জানান, আগেকার দিনে গ্রামে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিলো গরুর গাড়ি। কয়েক যুগ আগেও এ গাড়িতে চড়ে বর-কনে যেত। এছাড়া মালামাল পরিবহনের একমাত্র বাহন ছিলো এটি। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে নানা রকম গাড়ির ভিড়ে এ গাড়ির প্রচলন নেই।
এ গাড়ি দেখেছেন এবং চড়েছেন এমন কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরুর গাড়িও ছিলো একটি পরিবেশবান্ধব যান। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ছাড়া চলা বাহনে নেই কোনো শব্দ দূষণও। গরুর গাড়ি ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে না। গরুর গাড়ি সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু বইতে পেলেও বাস্তবে আর দেখতে পাবে না।
লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
বরিশাল/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন