ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘একুশের অঙ্গিকার হোক প্রমিত বাংলা’

ইকবাল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘একুশের অঙ্গিকার হোক প্রমিত বাংলা’

বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা এই দুটোই কেনা শোষকের কাছ থেকে। নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে যখন বাধাগ্রস্ত হলো বাঙালি জাতি, তখন সব বাধা অতিক্রম করে শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিধ্বনি করে বলেছিল, ‘না না’। বাঙালি জাতি হিসেবে সমৃদ্ধ। তাদের কাছে আছে একটি দেশ ‘বাংলাদেশ’, একটি ভাষা যার নাম ‘বাংলা’। আরেকটি জিনিস আছে যার নাম ‘আবেগ’।

এই তিনটি জিনিসের কোনোটির দাম নেই অর্থ মূল্যে। ভাষা থেকে শুরু করে সব জায়গায় পাকিস্তানিরা আমাদের দমাতে চেয়েছিল, কিন্তু বাঙালির অদম্য ইচ্ছা শক্তি কখনো তা হতে দেয়নি। ১৪৪ ধারা ভেঙে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের এই মাতৃভাষা। এই সুন্দর, শ্রুতিমধুর ভাষা নিয়ে অনেক ধরনের ভাবনা আছে তরুণ সমাজে। আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেই সব ভাবনার কথা লিখেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবাল হাসান।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ রাসেল বলেন, ফেব্রুয়ারি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অনন্য এক সাক্ষী। সারা বিশ্ব যখন ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে, তখনে স্বগর্বে মস্তক ছুঁয়ে যায় হিমালয় পর্বতকে। কারণ, সারা বিশ্বের বুকে আমরাই একমাত্র জাতি, যারা কিনা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, নিজের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করে মায়ের মুখের ভাষার যথার্থ মূল্য আদায় করে নিয়েছে। এ কৃতিত্ব আমাদের পাশাপাশি সারা বিশ্বের মানুষ এখন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাজিন আখন্দ মীম বলেন, মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ভাষা যোগাযোগ এবং আবেগ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা হোক মুখের বুলি হয়ে, লিখিতরূপে কিংবা সংকেত আকারে।

প্রত্যেক জাতির কাছেই তার মাতৃভাষা অন্যতম গর্বের একটি বিষয়। তেমনি বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষা প্রতিটা বাঙালির গর্বের কারণ। শুধু মাতৃভাষা হিসেবেই নয় বরং এই বাংলা ভাষার রয়েছে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৫২-তে বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের এই উৎসর্গের কথা স্মরণ রেখে নিজেদের ভাষার প্রতি আরো সচেতন হওয়া জরুরি।

প্রত্যেক নাগরিককে বাংলা ভাষার সঠিক ইতিহাস জানাতে পারলে ভাষা সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া সম্ভব। তরুণ প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষা নিয়ে উদাসীনতা দেখা যায়। তাই তরুণদের বোঝাতে হবে যে, বিদেশি ভাষা কখনোই নিজের মায়ের ভাষার চাইতে বড় হতে পারে না, এটা বুঝতে পারলেই স্বদেশি ভাষা চর্চা আরো বেড়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ আশিক বলেছেন, ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই সময়টা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় ধর্মের ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র করা কতটা বোকামি ছিল। এই বোকামির চরম খেসারত পূর্ব পাকিস্তানিদের (বর্তমান বাংলাদেশি) দিতে হয়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে, স্বাধীনতা, নিয়োগ, অর্থনীতি এছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে শুধু আঘাত মিলেছে বাঙালিদের। সকল আঘাতের বড় আঘাত ভাষার উপর। এই আঘাতে বাঙালি সেদিন ফুঁসে উঠেছিল ন্যায্য দাবির উদ্দেশ্যে। সেদিনকার আন্দোলনের ফল ভোগ করছে আজকের বাংলাদেশ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, ভাষার কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে বাংলা ভাষার কথা। জন্মের পর থেকেই আমরা আমাদের মায়ের কাছ থেকে বাংলা ভাষা শুনে আসছি। জীবনের এই পর্যায়ে এসেও আমরা বাংলা বলতে বা লিখতে ভুল করে থাকি, যা লজ্জার কথা। আমাদের ভাষা বাংলা হলেও আমরা ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ফলে অন্য ভাষায় আমরা ঠিক থাকলেও আমাদের আপন ভাষায় আমরা অদক্ষ, যা জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। আমাদের উচিৎ প্রমিত বাংলা বলা, লেখা শেখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটি ভাষা উপহার দেয়ার চেষ্টা করা।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুন্নবী রিসল বলেন, বাংলাদেশি এবং বাঙালির গর্ব করার মতো বিষয়গুলোর মধ্যে ভাষা অন্যতম।

যদিও বিষয়টা কতটুকু অনুভব করি, তা ভাবার বিষয়। অনুভব করলে হয়তো নিজের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষাকে যথাযথ সম্মানের সাথে বলার চেষ্টা করতাম। বাংলায় কথা বলার সাথে যে কতটা আবেগ জড়িত, সেটা বুঝতে একটি শব্দই যথেষ্ট, সেটি হল মা। মা, মাটি এবং বাংলা ভাষা সব একই সুতোয় গাঁথা। ভালো থাকুক আমাদের মা, মাতৃভূমি সর্বোপরি প্রাণের বাংলা ভাষা।

সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ আব্দুল্লাহ বলেন, মাতৃভাষা তথা বাংলায় শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণে কথা বলাও যে একটা শিল্পকর্ম, এটি উপলব্ধি করতে হলে হৃদয়ে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসাকে লালন করতে হবে। শুধু উৎসব বা দিবস পালন নয় বরং মাতৃভাষা চর্চায় ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগে সবার আন্তরিকতা ও মমত্ববোধ প্রয়োজন। আর একুশের অঙ্গিকার হোক সর্বত্র প্রমিত বাংলার ব্যবহার।


কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়