ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রাণের বইমেলায় প্রাণ কোথায়?

অরিত্র দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাণের বইমেলায় প্রাণ কোথায়?

ভাষার মাস। প্রাণের মাস। বাঙালির পবিত্র রক্তে রঞ্জিত গর্বিত ইতিহাসের মাস। ‘ম’ একটি অতীব অর্থবহ শব্দ, যেন গোটা বাঙালি ভাষাভাষীদের কাছে। ‘ম’ মানে মা, মাটি এবং মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় রচিত হয় সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি। আর এই মা, মাটি, মাতৃভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির ছাঁচে ফেলে প্রত্যেক মানুষকে ভেঙেচুরে তৈরি করে দেয় দেশ।

জীবন দিয়ে সে কাজটি অত্যন্ত সহজ করেছেন শহীদেরা। তারা জীবন দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশ হয়েছে। হয়েছে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা। অতঃপর স্বাধীনচিত্তে সাহিত্য রচনা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনে অলঙ্কৃত করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। অন্যদিকে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা এনে দিয়েছে হাজার বছরের বাঙালি জাতির দামাল সন্তানেরা। নয়তো পরাধীনতার শিকলে বন্দি জীবনে দাসত্বে কাটাতে হত ১৬ কোটি বাঙালিকে। সেই অর্থে রবীন্দ্রনাথ এবং বাঙালি জাতি একই বৃন্তে দুটি ফুল।

শত শত বছরের শোষণ ও দাসত্ব থেকে মুক্তির এ বারতা এনে দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে ৫২’র ভাষা আন্দোলন। কেননা ভাষা আন্দোলনের জলন্ত স্ফুলিঙ্গ ৭১ এনে দিয়েছে। আর ৭১ দিয়েছে স্বাধীনতা। ভাষা একটি শক্তিশালী এবং স্পর্শকাতর আগ্নেয়াস্ত্র। ভাষা নিমিষে একটি জাতিকে আলাদা করে দিতে পারে, ভাগ করে দিতে পারে অঞ্চল, যা ধর্ম-বর্ণ বা গোষ্ঠী কখনো পারে না। সেই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দীর্ঘ সময়ব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। ১৯৮৪ সাল থেকে এই মেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা।’

একুশে গ্রন্থমেলার সাথে যে নামটি তরু-লতার মতো আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে, তিনি হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রয়ারি তিনি বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সাথে স্থির দন্ডায়মান বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। বইগুলো প্রকাশিত হয় তাঁরই হাতে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে। যে বইগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শরণার্থীদের লেখা।

১৯৭৬ সাল অব্দি তিনি একাই এই বইমেলা এগিয়ে নিয়ে যান। তারপর সেই ছোট্ট পরিসরের বইমেলা আস্তে আস্তে আজ বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাড়ানো হয়েছে মেলার পরিধি। ২০১৪ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়। চলতি বছরে মেলায় আটশোর অধিক প্রকাশনী সংস্থা স্টল পেয়েছে, স্টল পায়নি তাদের সংখ্যাও কম নয়। সেই পরিসংখ্যানে প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাজারের বেশি। ভবিষতে আরো বাড়বে। বইমেলার বিস্তৃতি, লেখক পাঠকের উপচে পড়া সমাগম ও চেক-ইন দেখে অনেকে বলেন, বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে বইমেলা। পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়, লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের মহামিলন মেলায় আবর্তিত বইমেলা। সত্যি কি তাই? প্রাণের বইমেলায় প্রাণ কি আদৌ আছে? প্রাণ কেড়ে নেয়া কি হয়নি?

এই যে অজস্র প্রকাশনী, অথচ বই বের করার সময় কোনো প্রকাশনী পাওয়া যায় না। প্রকাশনী পেলেও বই প্রকাশিত হয় না। কারণ কি? কারণ হলো অর্থ। ফেলো কড়ি, মাখো তেল। পাণ্ডুলিপিতে কী লেখা আছে, আদৌ কিছু লেখা আছে কিনা, ধাতব্যের বিষয় নয়। ধাতব্যের বিষয়- কোমরে কড়ি বেঁধে এ পথে নামতে হবে, সঙ্গে নিতে হবে তেল, জল, ঘি, মাখন ও মিডিয়া।

বাঙালিদের মধ্যে যাদের টাকা হয়েছে তারাই এখন বই বের করছে। কারণ টাকা থাকলে বই করা ও বইয়ের দামি দামি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন দেয়া আজকাল দুধভাত। তাছাড়া বই বের করা এ যুগে একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ধরুন, একজন বাঙালির বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, যশ-খ্যাতি, প্রতিপত্তি সব আছে, নিজের লেখা একটা বই নেই- এটা যেন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মেনে নিতে পারে না, তাই যেনতেন বই লিখে প্রকাশককে রয়্যালটি দিয়ে বই বের করছেন। ফলে, প্রকাশকরা রয়্যালটি পাওয়ার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। তাই এখন আর প্রকাশকরা লেখককে রয়্যালটি দেন না। বরং লেখকরা প্রকাশককে রয়্যালটি দেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলেব্রেটি, তবে-তো কোনো কথাই নেই। পাণ্ডুলিপি নেয়ার জন্য শতশত প্রকাশক মুখিয়ে আছেন। কেননা, প্রকাশক চায় বইয়ের কাটতি। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা স্ট্যাটাস একত্রিত করেও বই প্রকাশ করতে দেখেছি, সেই বইয়ের হাজার হাজার কপি বিক্রি হতে দেখেছি। রাতারাতি তারা লেখক উপাধি পেয়েছেন। অতঃপর বই রিভিউতে পাঠকদের বলতে শুনেছি, ‘আমার অর্থ ফেরত দেন।’ অথচ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফ.র. আল সিদ্দিকের বই ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’ বিক্রি হতে দেখিনি।

২০০০ সালে পরমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে পাঠক জানতে পারে ২০২০ সালের বইমেলায়, তাও সম্ভব হয়েছে তাঁর বই প্রচারের একটি করুণ ছবি ভাইরাল হওয়ার কল্যাণে। অর্থাৎ ভাইরাল শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এদেশের সাহিত্য পাড়ায়। ভাইরাল হওয়ার জন্য ভদ্রলোককে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিশটি বছর।

কিছু প্রকাশনী অবশ্য আছে, যারা অর্থ নয়, সেলেব্রেটি নয়। লেখার মানের উপর ভিত্তি করে বই প্রকাশ করেন। তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। ফলে, বাংলা সাহিত্যের মান বাড়ছে না। বাড়ছে লেখকের সংখ্যা, প্রকাশকের সংখ্যা। লেখক হতে গিয়ে অর্থলোভী প্রকাশকের লালসার শিকার হচ্ছেন তরুণ লেখকেরা। প্রতারিতও হচ্ছেন। প্রকাশক তাদের পাণ্ডুলিপি নিয়ে বই ছাপাচ্ছেন না। লেখকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও বই প্রকাশ করছেন না। অনেক প্রকাশক আগ্রহভরে পাণ্ডুলিপি জমা নিয়ে, বই বের করবেন বলে আশ্বাস দিয়েও বই বের করছেন না। কারণ, যারা টাকা দিয়েছে তাদের বই আগে বের করতে হবে। তাদের বই বইমেলায় আনতে আনতে আশান্বিত লেখকের বই আর আলোর মুখ দেখে না। পাঠকের কাছে বই তুলে ধরতে পারেন না। ফলে হতাশার কালগ্রাসে, ব্যর্থতা প্রত্যাখানের কড়াঘাতে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রতিভাবান লেখক।

এর মূল কারণ, এদেশে প্রকাশকরা সেলেব্রেটি ও পয়সাওয়ালা নিয়ে কাজ করতে অতিমাত্রায় আগ্রহী। একটা সময় লিখতে লিখতে একজন ব্যক্তি লেখক হয়ে উঠত, এখন সেলেব্রিটি থেকে লেখক হয়। হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে বইয়ের বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দিয়ে লেখক হওয়া যায়। বাংলাদেশের লেখক বলতে এখন ধনী সম্প্রদায়। অর্থ, মিডিয়া ও  সামাজিক জনপ্রিয়তা এখানে লেখক প্রসব করে।

অন্যদিকে বাঙালিদের চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তারা চিন্তার চেয়ে বলতে চায় বেশি, তাদের লেখার চেয়ে প্রচারণায় ঝোঁক থাকে বেশি। অন্যদিকে এ প্রজন্মের পাঠকের কাছে মোটিভেশনাল বই অধিক পছন্দের লক্ষ্যবস্তু। এ থেকে প্রতিয়মান যে, বাঙালির এক বিশাল শ্রেণি অতিমাত্রায় হতাশাগ্রস্ত। যে বীরের জাতি রক্ত দিয়ে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। সেই জাতি হঠাৎ করে মোটিভেশনাল বইয়ের বাজারে ভিড় জমাচ্ছে কেন- সেটা গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়। উদ্বেগের জন্ম দেয়, এদেশের নতুন প্রজন্ম ভালো বই ও ভালো লেখক থেকে কেন বঞ্চিত হচ্ছে?

আমাদের প্রকাশকরা বই প্রকাশকে বাণিজ্য ছাড়া খুব বেশি দূর ভাবতে শেখেননি। ফলে বইয়ের বাজার বাণিজ্যিক এবং মানহীন বইয়ে ঠাসা। যার কারণে কাঁধে ঝুলি ব্যাগ নিয়ে বইমেলার একটি স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে বেড়াতে হয় শিক্ষিত-মেধাবী লেখকদের। ঘুরতে হয় প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে। এটা এ জাতির জন্য লজ্জার। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহের কথাটা মনে পড়ে গেল, যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না। আসলেই জন্মায় না। জন্মায় আমলা এবং আমলাদের সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।

ফিরে যাই পূর্বের কথায়- ভাইরাল হওয়ার পর একদিন খবরের কাগজে এলো ফ.র. আল সিদ্দিকের বই ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’ প্রকাশে আগ্রহী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এতে অনেকেই দেখেছি উচ্ছ্বসিত, আমি তখন বিব্রত। এখানে সার্থকতার তো কিছু নেই। বাহবা পাবারও কিছু নেই। বরং লজ্জিত হওয়ার, ঘৃণা করার এবং পরিহাস করার অনেক কিছু আছে। নিগূঢ় সত্য হলো, এই যে প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে, তার পেছনে অন্যতম কারণ প্রবীণ বিজ্ঞানী ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকের এখন পাবলিসিটি হয়েছে। একটি ছবি ভাইরাল হয়ে তাকে রাতারাতি সেলেব্রিটি বনে পাঠিয়েছে। তাঁর বই বিক্রি হওয়ার এখন সম্ভাবনা বেশি। তিনি এখন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোতো তাঁর পেছনে ছুটবেই। সোনার ডিম পাড়া হাঁসের পেছনে ছুটে বেড়ানোই তাদের ধর্ম।

এদেশে যারা লেখালেখি করেন, তারা জানেন- এখানকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন। এ চরিত্র যে নতুন তা কিন্ত নয়। অনেক পুরনো। তবে পুরনো হলেও ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রকাশক মহাদয়েরা লেখার মান বিচারের উপর ভিত্তি করে অর্থ নির্ধারণ করতেন বা করতেন না, বিংশ শতাব্দীর সিংহভাগ প্রকাশকরা অর্থের মানদণ্ড বিচার করার পর লেখার মান নির্ধারণ করেন। তারা সাহিত্য বোঝেন না, কবিতা বোঝেন না, প্রবন্ধ বোঝেন না; বোঝেন অর্থ! তারা লেখকের কষ্ট বোঝেন না, পরিশ্রম বোঝেন না; বোঝেন লেখকের পাবলিসিটি। ফলে প্রকাশনী সংস্থাগুলো রীতিমত একটা লাভজনক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ধনকুবের ব্যবসায়িক নবাগত হাইব্রিড রাজনৈতিক নেতার কাছে তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতারা যেমন অবমূল্যায়িত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি পয়সাওয়ালা সস্তা মৌসুমি লেখকের কাছে মেধাবী লেখকেরা হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে হচ্ছে নেতৃত্বশূন্য দেশ, অন্যদিকে মেধাশূন্য সাহিত্য জগৎ।

প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’ কথাটা পাঠকদের বেলায় সত্য হলেও লেখকদের বেলায় সত্য নাও হতে পারে। কেননা, বই প্রকাশ করে বাংলার অনেক লেখকরা হারিয়ে গেছে বা দেউলিয়া হয়েছে। এখনো যাচ্ছে। হয়তো ভবিষতেও যাবে। নয়তো অর্থাভাবে মৃত্যুবরণ করছে এবং ভবিষতেও করবে। কারণ, এদেশে প্রকাশকরা লেখকদের রয়্যালটি দিতে চান না এবং সাধারণত রয়্যালটি দেন না।

যদিও বইমেলাকে বাঙালির উৎসব বলা হয় আজকাল। কিন্তু উৎসব কি কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে? উৎসব তো সার্বজননীন। উৎসব মানে হইহুল্লোড়। উৎসব মুক্তি ও উদারতার কথা বলে। অথচ কিনা বইমেলাকে বলা হয় উৎসব! ধর্মান্ধগোষ্ঠী, গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী পরাজিত শত্রুরা বইমেলাকে দখলে নিয়ে গেছে। শুধু বইমেলা নয়; ব্যবসা, শিক্ষা, প্রশাসন, মন্ত্রণালয়, শিল্প, সংস্কৃতি সব দখল করে নিচ্ছে।  মেলায় কি কি বই আসবে তারা ঠিক করে দেয়। ওদিকে বই নিষিদ্ধ করার জন্য মহাব্যস্ত সরকার। বইয়ের বিরুদ্ধে লিখতে হবে আরেকটি বই। নিষিদ্ধ হবে কেন? যুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে হবে আরেকটি যুক্তি। হত্যা বা হুমকি থাকবে কেন? প্রতিবাদ প্রতিরোধের ভাষা হবে কলম ও কালি। তবেই না সাহিত্য, দেশ, লেখক ও পাঠক উদ্বেলিত হবে। কিন্তু তা না হয়ে, হচ্ছে উল্টো। বইমেলায় কোনো বই নিয়ে আলোচনা নেই, সমালোচনা নেই, নেই তর্ক-বিতর্ক। জাঁদরেল লেখক নেই, আলোচনা-সমালোচনা হবে কার বই নিয়ে? বইমেলায় হইহুল্লোড় নেই। বইমেলা ঘুমায়।

বইয়ের শব্দ মানব হৃদয়ে দাগ কাটুক। মনুষ্যত্ব হোক শব্দের আধার। এই আশায় বুক বাঁধি, আশা করতে কোনো পাপ নেই, ভয় নেই। তাই আশা করি, এদেশে কোনো একদিন একটা সাহিত্য বিপ্লব ঘটবে। মেধাবীদের মূল্যায়ন হবে। শব্দের প্রতিবাদ হবে শব্দ দিয়ে। প্রকাশক এবং লেখকের মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে।

প্রতিক্রিয়াশীল বই ও প্রতিক্রিয়াশীলেরা দমে যাবে। পাঠকরা ভালো বইয়ের স্বাদ ও সন্ধান পাবে। হুমায়ুন আজাদ যেমনটি বলেছিলেন, তাঁর ‘বই’ নামক কবিতায়, যে-বই তোমায় দেখায় ভয়, সেগুলো কোনো বই-ই নয়। সে-বই তুমি পড়বে না। যে-বই তোমায় অন্ধ করে, যে-বই তোমায় বন্ধ করে। সে-বই তুমি ধরবে না।

লেখক: প্রবন্ধলেখক, কলামিস্ট এবং শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়