ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘রঙিন স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় উনিশ-বিশ’

আল আমিন ইসলাম নাসিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘রঙিন স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় উনিশ-বিশ’

ক্যাম্পাসে এবার সবচেয়ে জুনিয়র (১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। মাত্র কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। হাজারো কল্পনা-জল্পনা, বুকভরা স্বপ্ন আর বাবা-মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে ক্যাম্পাসের নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে শুরু করেছিল তারা মাত্রই।

এর‌ই মধ্যে পাঁচ বছর যাদের সঙ্গে কাটাবে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতেও শুরু করেছিল। নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবী, বয়ঃসন্ধিকালের শেষ প্রান্ত, নতুন চিন্তাধারার উদঘাটন, পরিবর্তন সবমিলিয়ে যেন নতুনত্বের সঙ্গে সন্ধি করতে যাচ্ছিল উনিশ-বিশ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অদেখা এক করোনার মতো মহামারি সবার সব আয়োজন ভঙ্গ করে দিয়েছে।

রঙিন স্বপ্ন চোখে এঁকে ক্যাম্পাসে এসেছিল দেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত এসব শিক্ষার্থীরা। নানা জনের নানা রকম বৈশিষ্ট্য বা সংস্কৃতি (যেমন- আঞ্চলিক ভাষা, খাবারের ধরন, পোশাক পরিচ্ছদ, আচার-আচারণ, চলাফেরা ইত্যাদি)। এসব বৈশিষ্ট্য বা সংস্কৃতি যেন মোহনার মতো ক্যাম্পাসে এসে এক হয়ে যায়। এই নানা রকমের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত থাকা সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় হ‌ওয়া থেকে শুরু করে কুশল বিনিময় পর্যন্ত তাদের এই বিষয়টির প্রতি যেন একরাশ ক্লান্তি নেই, রয়েছে যেন ভীষণ কৌতূহল ও আগ্রহ।

তাছাড়া অধিকাংশ ক্যাম্পাসে রয়েছে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হল, যা শিক্ষার্থীদের হাজারো স্মৃতি বহন করে  থাকে। রয়েছে হলের ভিন্ন রকম‌ খাবার‌ও, খেলার মাঠ, লাইব্রেরি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, গিটারিস্ট বন্ধুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছেড়ে ভাঙা কণ্ঠের গান, রয়েছে ভালোবাসার বড়ো ভাই ও আপুরা, রয়েছে তাদের কাছে ট্রিট নামক খাওয়া-দাওয়ার আবদার , চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া, অ্যাসাইমেন্ট, প্রেজেন্টেশন নামক প্যারা, রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্কের ন্যায় ছোট ছোট ছাউনী ও সুবিশাল স্থাপত্য। এ সব কিছুর স্বাদ তারা এখন যেন এখন ভুলতেই বসেছে প্রায়। কেননা এই ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের ক্রান্তিলগ্নে নেই এর স্বাদ গ্রহণের কোনো সুযোগ।

অনেকেই ভেবেছিল সীমিত সময়ের জন্য হয়তো ছুটি পাচ্ছে। সবাই বেশ খুশিও ছিল। কেননা ভর্তি যুদ্ধ নামক এই মহাযুদ্ধ শেষ করে এই প্রথম তারা ছুটি পেয়েছে। সবাই বাড়ির দিকে খুশিতে র‌ওনা দিয়েছিল, অনেকে নতুন মেসে আংশিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র রেখেই চলে গিয়েছে এই আশায় যে, আবারও হয়তো ফিরবে তারা এই মেসে, এই ক্যাম্পাসে।  কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আর ফিরে আসতে পারছে না তারা এই রঙিন ক্যাম্পাসে নতুনত্বের অমৃত সংগ্রহ করতে।

চোখ মেললেই যেন ঊনিশ-বিশ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নিকট প্রিয় নব্য ক্যাম্পাস ভেসে উঠে। ক্যাম্পাসের কথা ভাবতেই যেন হার্টের স্পন্দন দ্রুত গতি লাভ করে। সবাই যেন ভীষণভাবে মিস করছে লাল বাসে সিট ধরা, বাসে অনেক সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া, বাসের উইন্ডো সিট। আবার অনেকেই যেন ক্যাম্পাসের প্রিয় স্থান- ডায়ানা চত্বর, ঝাল চত্বর, বটতলা, লেক, প্যারাডাইস রোড, টিএসসিসি, কার্জন, ইবলিশ চত্বর, ফরেস্ট রোড, মুক্তমঞ্চগুলো মিস করছে। কেউ বা এসময়ে ক্যাম্পাসের আম, লিচু কিংবা অন্যান্য ফলাদি মিস করছে, আবার কেউ বা মিস করতেছে হলের বেলকনিতে টবে লাগানো ফুল গাছগুলো, ক্যাম্পাসের প্রিয় দোকানদারদের বা কেউ ক্যাম্পাসের পশু-পাখিদের।

কতো মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যরা আশাব্রত হয়েছিল সন্তানদের নিয়ে। তারা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকরি করে যেন সব অভাব-অনটন দূর করে দেবে। কিন্তু এ যেন শুরু না হতেই শেষ। তবে কি এখানেই থেমে থাকবে ঊনিশ-বিশ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুনত্বের স্বাদ আহরন, তাদের স্বপ্ন পূরণ, তাদের রঙিন স্বপ্ন, তাদের যত্তসব কল্পনা-জল্পনা, বুকভরা আশা।

সত্যি বলতে, বাস্তবে এসব থেমে থাকলেও তাদের অন্তরাল যেন এখনো কালো মেঘের আড়ালে সূর্যের ন্যায় হাসে। তারা বিশ্বাস করে ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’। কেউই চায় না এই করোনার শেষ প্রান্তে কোনো সহপাঠী হারিয়ে তারা ক্যাম্পাসে যাক। এখনো আশায় বুক বাঁধে এসব রঙিন স্বপ্ন পূরণের জন্য।

ইমিডিয়েট সিনিয়র হ‌ওয়া, নিজ ক্যাম্পাসে জুনিয়রদের ভর্তি পরীক্ষা দেখা, তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, এসব‌ ইচ্ছেগুলো যেন তাদের মনে সর্বদা ঘুরপাক করে। একদিন ভোর হবে, নতুন সূর্য উঠবে, ক্যাম্পাসের বাস ছাড়ার ১০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত বাস ধরা হবে। বেলকনিতে নতুন নতুন ফুল ফুটবে। ফল খাওয়া হবে ক্যাম্পাসের, একসাথে পহেলা বৈশাখ, স্বরসতী পূজা উদযাপিত হবে, মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে সহপাঠী ও বড়ো ভাই-আপু, শিক্ষকদের সঙ্গে। তবে সেবার থেকে মিস যাবে না আর কোনো উৎসব!

এবারের ঊনিশ-বিশ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যেন অন্যান্য সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের ইচ্ছা, স্বপ্ন, ক্যাম্পাসের নতুনত্বের স্বাদ আহরন যেন এখনো পূর্ণতা পেলো না, কবে পূরণ হবে তার‌ও নেই নিশ্চয়তা। তবুও যেন ঊনিশ-বিশ আশায় বেঁধে আছে বুক, রঙিন স্বপ্নগুলো পূরণের অপেক্ষায়...।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়