যেভাবে হবে অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীবান্ধব
তাজমিন নাহার || রাইজিংবিডি.কম
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাহত শিক্ষাকার্যক্রম। লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ স্থবির হয়ে রয়েছে। তাই সেশন জটের ছোবল থেকে রক্ষা করতে চালু করা হয়েছে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম।
স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালু করা হয়েছে সংসদ টিভিতে। অন্য দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। কিন্তু সব শিক্ষার্থী কি অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে?
অনলাইন ক্লাস ইতিবাচক হলেও এতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ জন। শতকরা হারে ৫০ ভাগেরও কম। এদিকে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে। তারা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ক্লাস পরিচালনা করে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখলে সেশন জটের শঙ্কা থেকেই যায়। যা দেশের অর্ধশতাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে আট লাখ শিক্ষার্থীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় শিক্ষার বাতিঘর। অনলাইন ক্লাসে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করায় বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসে গ্রাম বা মফস্বল থেকে। এসব শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসের প্রধান অন্তরায় মন্থর গতির ইন্টারনেট।
এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটক না থাকা, চড়া মূল্যের ইন্টারনেট প্যাক। এসব শিক্ষার্থী বুঝতেও পারছে যে, অনলাইন ক্লাসের বিকল্প নেই। তবুও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ক্লাসে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৪০ লক্ষের বেশি শিক্ষার্থী যাতে ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা করতে পারে সেজন্য ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া গ্রামীণ পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য সরকার ইডিসি প্রকল্প গ্রহণ করছে। এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া অনেক শিক্ষক এ শিক্ষা পদ্ধতির সাথে পরিচিত নয়, এ শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে অনলাইন ক্লাস সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথবা উভয়ের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে শিক্ষার্থীবান্ধব অনলাইন ক্লাস উপহার দিতে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
ইবি/মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন