ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আতিকের ত্রিমুখী ইশতেহারে যা প্রাধান্য পেল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আতিকের ত্রিমুখী ইশতেহারে যা প্রাধান্য পেল

মেয়র হিসেবে নয় মাস দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা- এই তিন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ইশতেহার সাজিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

ইশতেহারে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন উন্নত বিশ্বের মতো বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নারীদের জন্য নিরাপদ নগরী, দখলমুক্ত নগরী, দূষণ রোধ, আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, নিরাপদ সড়ক, ছিন্নমূল পুনর্বাসন, অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যা সমাধান, অনলাইনে সেবা প্রদান, ঢাকাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জনতার মুখোমুখি হওয়ার মতো বিষয়গুলো।

রোববার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, একটি শহরের প্রাণ হচ্ছে শহরের পাড়া ও মহল্লাগুলো। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে গেলে প্রতিটি এলাকা, পাড়া, মহল্লাকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এই এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনই নগরীর সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যার ফলে এই নগরীতে বসবাস করা মানুষগুলো সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।’

‘আমার প্রধান লক্ষ্য, এই নগরীকে কেবল বসবাস উপযোগী নয়, বরং নগরবাসীর জীবনমানের উন্নতি সাধন করা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ-নির্বাচন ২০১৯- এ প্রদত্ত নির্বাচনী ইশতেহারের অধিকাংশ কাজই শুরু হয়ছে। আমার গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্য অর্জনে পেশ করছি আমার ত্রিমুখী ইশতেহার।’

তিনি বলেন, ‘নগরীর সার্বিক উন্নয়নে আমি কথা দিচ্ছি, আমাকে পুনরায় পূর্ণমেয়াদে নির্বাচিত করলে, লক্ষ্য অর্জনে সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো। সব উন্নয়ন অগ্রগতির সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে ঢাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লার সমস্যা  সমাধান করে গড়ব সবার প্রিয় ঢাকা, যে ঢাকা আপনাদের সবার প্রাপ্য৷’

সুস্থ ঢাকা

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই নগরী কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল। এই শহরে নাগরিকদের সুস্থতা নির্ভর করে শহরের সুস্থতার ওপর। একটি সুস্থ ঢাকা নিশ্চিত করতে হলে অতি দ্রুত কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা জরুরি, যা বাস্তবায়িত হলে ঢাকাবাসী আবারও গর্বের  সাথে বলতে পারবে ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম সুস্থ শহর। একটি সুস্থ ঢাকা গড়ার জন্য আমার প্রস্তাব হলো-

১. উন্নত বিশ্বের মতো আইভিএম পদ্ধতিতে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সাথে নিয়ে বছরব্যাপী মশা নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

২.টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরআরএফ স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারণ ও জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর।

৩.তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রতি বাড়াতে শহরের সব ওয়ার্ডে পাড়া উৎসব উদযাপন।

৪.বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরন।

৫.প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া।

৬. ডিএনসিসির বর্ধিত এলাকায় নারীবান্ধব সিআরএইচসিসি এবং পিএইচসিসি নির্মাণ।

৭.মিরপুরের ডিএনসিসির নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ অনুরাগীদের জন্য বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিজ নির্মাণ।

৮.সবার জন্য নানা সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন এলাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ।

৯.নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পশু জবাইকেন্দ্র স্থাপন।

১০.ডিএনসিসির প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ।

১১.বিশেষভাবে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবার  জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

১২.ঢাকা উত্তরের উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় mist blower এবং অন্যান‌্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো।

১৩. ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে নানাবিধ সুবিধা সম্বলিত ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি।

সচল ঢাকা

সচল ঢাকা গড়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইশতেহারে আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের বাসিন্দারা তাদের পাড়া-মহল্লাসহ সব রাস্তাঘাটে চলতে গেলেই নানারকম বাধার সম্মুখীন হন। রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিত ফুটপাত, ফুট ওভারব্রিজ, জেব্রাক্রসিং, সাইকেল ও মোটরসাইকেল লেন, আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল না থাকাশ নগরবাসীর অবাধ চলাচল ব্যাহত হয়। তাই ঢাকাকে একটি সচল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করেছি।

১.ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

২.যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

৩.নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ঢাকা উত্তরে বিভিন্ন জেব্রাক্রসিংয়ে digital push button signal স্থাপন করা।

৪.আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ডিজিটাল ই-টিকেটিং সেবাপ্রদান, অ্যাপ-নির্ভর সময়সূচি প্রবর্তন এবং সুনিয়ন্ত্রিত ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ।

৫.স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তন।

৬.বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণস্থাপনা এবং গণ পরিবহন নিশ্চিতকরণ।

৭. নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ।

৮. হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

৯. প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত পরিকল্পনা-ঢাকা বাস রুট র‌্যাশনাইলাইজেশনের কাজ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা।

১০. নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।

১১. সাইকেলের জন্য আলাদা লেন এবং সাইকেল পার্কিং তৈরি করা।

১২. নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট বাস স্টপ ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।

১৩. প্রতিটি মহল্লায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান ট্র্যাক করে সমাধান করা।

আধুনিক ঢাকা

আধুনিক ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার কতা জানাতে গিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের রাজধানীগুলোর মতো ঢাকার আধুনিকায়ন না হলে বর্তমান বিশ্বের সাথে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারব না। কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বর্তমান সময়ে শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্য। ঢাকা আধুনিকায়ন হলে নগরীর সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন যাত্রা বদলে যাবে। স্বপ্নের আধুনিক নির্মাণের জন্য আমার পরিকল্পনা হচ্ছে-

১. সবার ঢাকা- এর মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকিসহ সকল নাগরিক সুবিধার নিশ্চিতকরন, যেখানে মেয়রের সাথে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।

২.ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা প্রদান।

৩.ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না করে,   ডিএনসিসির মালিকানাধীন কাঁচা বাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য চলছে স্ট্রাকচারাল আপগ্রেডেশেন।

৪. একটি সার্বক্ষণিক digital command center তৈরি,  যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, Smart Neighbourhood পরিচালনা ইত্যাদি সম্পন্ন।

৫. নাগরিকের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ।

৬. সব লেক-খালের সংস্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক স্পেস  বৃদ্ধি করা, টেকসই পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

৭. বায়ুদুষণ রোধে ইলেক্ট্রনিক বাস সারভিস চালু করা।

৮. ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তৈরি হবে হেল্প ডেস্ক।

৯. উত্তর ঢাকাকে একটি স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি এলাকাকে smaet neighbourhood   হিসেবে গড়ে তোলা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি পাড়া-মহল্লাকে এই উদ্যোগের আওতায় আনা।

১০. তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সংস্কৃতি ও সেবা কেন্দ্র গঠন, যেখানে থাকবে হেল্প ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, স্টার্টআপ কো-ওয়ারকিং স্পেস, লাইব্রেরি,   সাংস্কৃতিক, কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য সুবিধা।

১১. প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন ও বহুমুখী ব্যবহার (আরট ক্লাস, গানের ক্লাস, ইয়োগা,  আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ) নিশ্চিতকরন।

১২. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জনতার মুখোমুখি মেয়র শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক  সমস্যার সমাধান।

ইশতেহার ঘোষণা শেষে আতিকুল বলেন, আমি জানি, শত সংকট, সীমাবদ্ধতা, নাগরিক যন্ত্রণাসহ নানাবিধ সমস্যা আছে এ শহরে। ঢাকা আপনার, আমার, সবার। আমাদের একটু সচেতনতা এবং কিঞ্চিৎ সহযোগিতা এই নগরীর প্রাপ্য। যদি আমরা সবাই একটু সচেতন, আন্তরিক, ও উদ্যোগী হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত রাখি: শহর বিনির্মাণে অংশ নেই- তবে অবশ্যই ঢাকা উত্তরে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবেই।

‘এই পথযাত্রায় আমি নগরবাসীর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়, স্বপ্নের ঢাকাকে বাস্তব করতে চলুন এগিয়ে যাই একসাথে। গড়ে তুলি সবাই মিলে সবার ঢাকা- একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা।’

 

ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়