ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সিনিয়র জুনিয়রে আপত্তি নেই : কেয়া

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিনিয়র জুনিয়রে আপত্তি নেই : কেয়া

২০০১ সালে হিট সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নেয়া ‘কঠিন বাস্তব’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় পা রাখেন সাবরিনা সুলতানা কেয়া। এতে রিয়াজ ও আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রে যখন কেয়ার অভিষেক হয়, তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। প্রথম চলচ্চিত্রে ৬৪ মাত্রায় নেচে রুপালি জগতের দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেন এই শিল্পী। এরপর মান্না, আমিন খান, শাকিব খানসহ জনপ্রিয় প্রায় সব নায়কের বিপরীতে দেখা গেছে তাকে। এ প্রজন্মের নায়ক আমান রেজা, সাইমন সাদিকের পর এবার শিপন মিত্রের সঙ্গে জুটি বাঁধছেন তিনি।

ক্যারিয়ার যখন সাফল্যের চূড়ায় তখন চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে আন্তরালে চলে যান কেয়া। অতীতের রাগ-ক্ষোভ ভুলে ২০১৫ সালে ‘ব্লাক মানি’ সিনেমার মাধ্যমে ফিরেন তিনি। তারপর আবারো বিরতি নেন কেয়া। সম্প্রতি ‘ইয়েস ম্যাডাম’ নামে একটি নতুন চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। রকিবুল আলম রকিব পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করবেন শিপন মিত্র। চলচ্চিত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয়ে রাইজিংবিডির বিনোদন প্রতিবেদক রাহাত সাইফুলের সঙ্গে কথা বলেছেন কেয়া। এ আলাপচারিতার বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

রাইজিংবিডি: চলচ্চিত্রে আপনার অনুপস্থিতির কারণ কী?

কেয়া: ২০১৫ সালে আমার বাবা স্ট্রোক করেন। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। আসলে এই সময় পরিবার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত কয়েক দিন ধরে মাকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। ২০০৪ সালে আমার পরিবার সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ সময় আমার ভাই মারা যায়। আম্মুও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর পরিবারে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। এত সমস্যা নিয়ে আসলে কাজ করা যায় না। তাই কিছুদিন সিনেমা থেকে দূরে ছিলাম। তাছাড়া ভালো গল্প ও কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই সিনেমার গল্প আমার ভালো লেগেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ করতে চাই।

রাইজিংবিডি: ‘ইয়েস ম্যাডাম’ সিনেমায় কেমন চরিত্রে অভিনয় করবেন?

কেয়া: ‘ইয়েস ম্যাডাম’ সিনেমায় আমার চরিত্র মহিলা পুলিশ অফিসারের। এবারই প্রথম পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করছি। আশা করছি, বিশেষ কিছু হবে।

রাইজিংবিডি: প্রায় দুই দশক আগে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। এখন কাজ করতে এসে নিজেকে কতটা উপযুক্ত মনে করছেন?

কেয়া: আমি যখন কাজ করতে আসি তখন আমার বয়স ছিল ১৪। এখন আমার যে বয়স এটাই সিনেমায় কাজ করার জন্য সঠিক সময়।

রাইজিংবিডি: দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে দেশের সুপারস্টার নায়কের বিপরীতে কাজ করেছেন। শিপন এই প্রজন্মের নায়ক। তার সঙ্গে আপনার কাজের রসায়ন কেমন হবে বলে মনে করছেন? 

কেয়া: আমি আমার জায়গা থেকে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব। বাকিটা দর্শক বিচার করবেন। এর আগে আমান, সাইমনের সঙ্গে কাজ করেছি। নতুনদের সঙ্গে কাজের রসায়নও ভালো। আমি কাজের শুরুটা অনেক আগে করে ফেলেছি। বয়সটা তখন অনেক কম ছিল, যে কারণে এখন আমার পারফেক্ট বয়স। আমি খুব লাকি। কারণ সিনিয়র ও জুনিয়রদের সঙ্গে কাজ করতে পারছি। মোট কথা, সিনিয়র জুনিয়রে আমার আপত্তি নেই। সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই।

রাইজিংবিডি: বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।

কেয়া: এখন প্রোডাকশন হাউসের অভাব। আমি যখন চলচ্চিত্রে পা রাখি তখন প্রোডাকশন হাউস ছিল প্রায় ১ শতর মতো। প্রত্যেক হাউস থেকে সিনেমা নির্মাণের প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু সেরকম হাউস এখন নেই। এখনকার শিল্পীদের জন্য শুভ কামনা। ফিল্ম কারো একার নয়। এটা সবার জন্য। এখানে যত বেশি শিল্পী তৈরি হবে ইন্ডাস্ট্রি তত বেশি বড় হবে। এখানে কারো নাম হয়ে গেলে তার পেছনে সবাই দৌড়ায়। এটা না করে নতুনদের সুযোগ দিয়ে শিল্পী তৈরি করা উচিত। এখন ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের হিরো-হিরোইনরা সিনেমায় অভিনয় করতে আসছেন। তারা ভালো ভালো কাজ করছেন। তবে প্রেক্ষাগৃহগুলোর কিছু সমস্যা আছে। আশা করছি, চলচ্চিত্র হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

রাইজিংবিডি: অভিনেত্রী হিসেবে কত দূর যেতে চান?

কেয়া : আমি সবসময় অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। এখনো ভালো অভিনেত্রী হতে চাই। শুধু নায়িকা নয়।

রাইজিংবিডি: আপনার জীবনের খারাপ সময় কোনটা বলে মনে করছেন?

কেয়া : চলচ্চিত্রে যখন উপরের দিকে উঠছি, তখন আমার পরিবার সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে। রাইজিং সময়ে হোঁচট খেতে হয়েছে। এটাই আমার জীবনে সবচেয়ে খারাপ সময়। যদিও এ নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। যতটা পেয়েছি ভালোই পেয়েছি।

রাইজিংবিডি: ২০০০ সালের দিকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অশ্লীল সিনেমা নির্মিত হয়েছে। ঠিক তখন আপনি চলচ্চিত্রে পা রাখেন। এর কোনো প্রভাব আপনার উপর পড়েনি?

কেয়া: তখন অভিনয়ের পাশাপাশি অশ্লীলতার প্রতিবাদ করতে হয়েছে। বিশেষ করে মান্না ভাই, শাকিব খানসহ আমরা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করেছি। আমরা অশ্লীল সিনেমা নির্মাণ করা বন্ধ করেছি। আমি সবসময় বাণিজ্যিক সিনেমায় রুচিসম্মত পোশাক পরে পর্দায় এসেছি। আমি কোনো অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করিনি।

রাইজিংবিডি: চলচ্চিত্রে আসার গল্প জানতে চাই…

কেয়া: একবার চিত্রনাট্যকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তারপর তিনি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমাকে পছন্দ করেন। এরপর আম্মুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি। পরবর্তীতে পরিচালক আকবর ভাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন তিনি। তাদেরকে দেখে আমি খাটের নিচে লুকিয়ে পড়ি। তখন আমি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। আম্মু আমাকে অনেক বোঝানোর পর তাদের সামনে আসি। তারা আমার নাচ দেখতে চান। আমি তাদের নাচ দেখাই। এরপর আকবর ভাই তার সিনেমায় আমাকে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করেন।

রাইজিংবিডি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কেয়া: রাইজিংবিডির পাঠক এবং আপনাকে ধন্যবাদ।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়