ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চাকরিজীবন চাকরজীবন

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চাকরিজীবন চাকরজীবন

চাকরিজীবনে আমরা যত পরিশ্রমই করি না কেন, কখনো মালিকের চাহিদা পূরণ করতে পারবো না। সাথে কখনো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের চাহিদাও পূর্ণ করতে পারবো না। যত কোটি টাকা, যত সম্পদই আমরা অর্জন করি না কেন, আমাদের প্রতি সবার চাহিদা অপূর্ণই থেকে যাবে।

অন্যদিকে আমরা যদি নিজেই কাজের ক্ষেত্র তৈরি করি, তাহলে বিষয়টি হবে একদম বিপরীত। জীবনে কোনো ক্ষেত্রেই পিছুটান থাকবে না। নিজেকে, পরিবারকে, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সেবা এবং সময় দিয়ে যেতে পারবো সন্তুষ্ট চিত্তে।

আমরা অনেকেই ভাবি, কাজ না খুঁজে নিজের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে নেব, আসলে এমন সামর্থ্য কত জনের আছে? নিশ্চয় এমন সামর্থ্য সবার সমান নয়। কিন্তু নিজের জীবন-জীবিকার উদ্যোগটি তো আমরা নিজেই নিতে পারি। এবার আমরা ভাববো, কেন নিজে এত কষ্ট করতে যাব, আশপাশের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানে একটি কাজ নিলেই তো আরামদায়ক একটি জীবন পাই। কিন্তু এটি আমাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। চাকরের জীবন কোনো আরামদায়ক জীবন হতে পারে না। যে যত বড় চাকরি করেন, সে ওই প্রতিষ্ঠানের তত বড় চাকর। চাকরি জীবনে আমার জীবন আর আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জীবনের সঙ্গে তুলনা করলেই আরামদায়ক জীবনের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবো।

কোনো একটি উদ্যোগ নিতে প্রথমে একটু সাধনা করতে হবে। কিন্তু অন্যের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের যত বড়োই কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তা হই না কেন, তখন আমাদের পুরো জীবনই পরাধীনতার শৃঙ্খলে কাটাতে হবে। কোনো একটা সময় আমাদের যখন নিজেদের সময় দিতে ইচ্ছে করবে, তখন আমরা সময় পাবো, কিন্তু ভালো লাগার মুহূর্তগুলো আর থাকবে না। আমরা যখন মা-বাবা হবো, তখন তো নিজের সন্তানকে আমাদের সময় দিতে হবে। তখন কর্মস্থলের পিছুটান আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলবে। জীবনকে করে দেবে অতিষ্ঠ।

আমরা অনেকেই চাকরিজীবনকে অত্যন্ত নিরাপদ মনে করে থাকি। বিশেষ করে সরকারি চাকরিকে। কিন্তু এটি আসলে কতটুকু নিরাপদ? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, সেখানে নিরাপত্তার চেয়ে অস্তিত্বহীনতার সম্ভাব্যতা প্রকট। সরকারি চাকরি হয়তো খুব সহজে যাবে না, কিন্তু একঘেয়ে জীবনে শান্তির চেয়ে অশান্তিই বেশি।

চাকরি সেটা যেমনই হোক, চলে গেলে প্রথমেই একটি দিশেহারা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। পেটে লাথি খেলে কার ভালো লাগবে? বেশির ভাগ সময় চাকরি চলে যায় হুট করেই। তাতে হতাশাও আসে। কে জানে, কখনো হয়তো এই চাকরি চলে যাওয়াতেই আপনার জীবনের সম্ভাবনার নতুন কোনো দুয়ার খুলে যেতে পারে। হয়তো এক জায়গার ব্যর্থতাই আপনাকে একসময় পৌঁছে দেবে সাফল্যের চূড়ায়। তবে, তার জন্য নিজেরও কিছু কসরত করতে হবে। আমরা সে কসরতকেই কিন্তু ভয় পাই। মনে রাখতে হবে, সে কসরতের যন্ত্রণা জীবনে একবার। কিন্তু চাকরি জীবনের কসরত জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে আমাদের পীড়া দেয়।

স্ব-উদ্যোগী কোনো কাজে প্রথমবার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দ্বিতীয়বার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা বেশি কঠিন নয়। প্রকৃত উদ্যোক্তারা নিজেদের ভুল অকপটে স্বীকার করেন এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষার প্রয়োগ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সফল উদ্যোক্তা তাদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্তি ও অসীম আনন্দ পান।

আমরা যারা কোনো না কোনো চাকরি করি, তারা কি জানি আমাদের জীবনের সীমা পরিসীমা কতটুকু? ভাববো এখন তো আমি নিচু পদে আছি। আমার পদোন্নতি হয়ে যাবে একসময়। তখন স্বস্তির জীবন ফিরে পাবো। কিন্তু কখনোই তা হবে না। সে স্বস্তির সময় কখনো আসবে না। জীবন হয়ে থাকবে সমান্তরাল আমৃত্যু। আমরা হয়তো ব্যয়বহুল জীবনযাপন করবো, কিন্তু জীবনের গতি থাকবে সমান্তরাল।

তবে হ্যাঁ, আমরা যদি নিজেই একটি প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠতে পারি, তখন অন্য কেউ যদি তাদের সেবা দেয়ার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে সে আমন্ত্রণ আমরা অবশ্যই গ্রহণ করতে পারি। কারণ, এমন জীবনকে পরাধীনতা স্পর্শ করতে পারে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


ঢাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়