ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গরমে তালের রসে সজীবতা

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৮ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গরমে তালের রসে সজীবতা

প্রতীকী ছবি

খালেদ সাইফুল্লাহ : কথায় আছে, ‘তালগাছের আড়াই হাত।’ অর্থাৎ তালগাছের সবটুকু উঠতে পারলেও একদম শেষের আড়াই হাত ওঠা সবচেয়ে কষ্টকর। কিন্তু কিছু মানুষ জীবিকার তাগিদে দিনে অন্তত দুবার ওই আড়াই হাত জয় করেন। কারণ গাছে উঠে তাদের রসের ভাঁড় নামিয়ে আনতে হয়।

গ্রীষ্ম শেষে এসেছে বর্ষা। কিন্তু দেখা নেই বৃষ্টির। গরমের তীব্রতায় জীবন অতিষ্ঠ। এই গরমে পথেঘাটে চলাফেরা করা প্রায় দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড গরম থেকে সৃষ্টি হয় পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতা পূরণ করে শরীর সতেজ রাখতে প্রয়োজন পানি পান করা। এছাড়াও গরম থেকে বাঁচতে নানা ধরনের পানীয় যেমন- ডাবের পানি, আখের রস প্রভৃতি বেশ জনপ্রিয়। এসব ছাড়াও জনপ্রিয় আরো একটি পানীয় তালের রস। যদিও বর্তমানে এই প্রাকৃতিক পানীয় খুবই অপ্রতুল। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে এখনো তালের রসের দেখা মেলে। আকাশের পানে চেয়ে থাকা সারি সারি দীর্ঘদেহী তালগাছগুলো থেকে প্রতিদিন নামানো হয় তালের রস।

গ্রীষ্মকালের শুরুতেই রস সংগ্রহের জন্য তালগাছ প্রস্তুত করা হয়। যেসব গাছে তাল ধরে না সে গাছগুলোতে হয় লম্বা লম্বা জট। সেই গাছগুলোকে বলা হয় ‘জটা তালগাছ’। এই ধরনের গাছ থেকেই মূলত রস সংগ্রহ করা হয়। তবে যেসব গাছে তাল ধরে সেসব গাছ থেকেও রস সংগ্রহ করা যায়। বৈশাখ মাসের শুরুর দিকে গাছ পরিষ্কার করা হয়। তালগাছ দীর্ঘদেহী হওয়ায় তাতে ওঠার জন্য বাঁশ ব্যবহার করা হয়।

জটা গাছের জটের একদম নিচের দিকে একটু অংশ কাটা হয় যেন সেখান থেকে রস বের হতে পারে। আবার যেসব গাছে তালের মোচা বের হয় সেই গাছগুলোর মোচার একদম নিচের অংশ কাটা হয়। তালগাছ কাটতে পাতলা ছোট ধরনের দা ব্যবহার করা হয়। তালগাছের রস সংগ্রহের জন্য যে হাড়ি বা ভাঁড় রাখা হয় তা আকারে কিছুটা ছোট। এগুলোর উপরের অংশ বেশ প্রশস্ত। একটি গাছে চারটি বা তার বেশি পাত্র রাখা হয়। পাত্রগুলোর ভেতরে দেয়া হয় চুন। চুন রস পরিষ্কার করে। কতগুলো জট একসঙ্গে করে পাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। জট বা মোচাগুলোকে পাতলা কাপড়ে আবৃত করে দেয়া হয় যেন কোনো প্রকার ময়লা পাত্রের মধ্যে ঢুকতে না পারে। প্রতিবারই পাত্র রাখার সময় জট বা মোচার অগ্রভাগ থেকে কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। এভাবে সকাল-বিকাল দিনে দুবার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিবার রস সংগ্রহের পর একইভাবে রসের পাত্র রাখা হয়।

সকালের রস সাধারণত চুলায় জ্বাল দিয়ে রাখা হয়। বিকেলের রস নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে। তবে বাজারে নেয়া কিংবা জ্বাল দেয়ার আগে খুবই সাবধানতার সঙ্গে রসগুলো ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হয় যাতে চুন মিশে না থাকে।

যশোর সদর উপজেলার ছোট গোপালপুর এবং এর আশেপাশের গ্রামের গাছিরা রস নিয়ে যান শহরের উদ্দেশ্যে। এ গ্রাম থেকে শহর প্রায় ৬ কিলোমিটার। রসের বাক কাঁধে এই ৬ কি.মি. পথ তারা হেঁটেই পাড়ি দেন। ছোট গোপালপুরের গাছি আব্দুল হাকিম জানান, শহরে প্রতি গ্লাস রস বিক্রি হয় ১০ টাকা। প্রতিদিন তিনি প্রায় ৪০-৫০ গ্লাস রস নিয়ে বাজারে যান। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে রস বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন। তবে বর্তমানে তাল গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মতো এখন আর তালের রস পাওয়া যায় না। রস সংগ্রহের কাজটি বেশ কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে তালের রসের মতো সুস্বাদু পানীয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়