ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বড় বাবুই বাটানের খোঁজে

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বড় বাবুই বাটানের খোঁজে

শামীম আলী চৌধুরী: বাংলাদেশের পাখির রাজ্য রাজশাহী থেকে অনিক মাঝির ফোনে জানতে পারলাম নতুন একটি পাখির সন্ধান সে পেয়েছে। সময়টা ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ। সতীর্থ জাহাজের চীফ ইঞ্জিনিয়ার সাদাত আমিন খানকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে রওনা হয়ে রাতে রাজশাহী পৌঁছলাম। রাতের খাবার খেয়ে দুজনই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন ভোরে অনিক আমাদের হোটেল রুমে এলো। সকালের নাস্তা শেষে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আমরা তিনজন বের হলাম। তানোর যাবার জন্য বাসে উঠলাম। কিছুটা পথ বাসে, কিছুট পথ ভ্যানে করে তানোর পৌঁছলাম। যেখানে পাখিটি দেখা গেছে সেখানে  যাওয়ার জন্য কৃষি জমির আইলের উপর দিয়ে হাঁটছি, আর দুই ধারের প্রকৃতির সবুজাভ নয়নাভিরাম শোভা দেখছি। পাশেই একটি নদী। নদীতে জেলেরা মাছ ধরছে। হরেক রকমের জলজ পাখি নদীর পাড়ে খাবার খুঁজছে। প্রকৃতি থেকে পাখিদের খাবার খোঁজার দৃশ্য আমাকে পুলকিত করে তুলল।

এক ঝাঁক পাখি মাথার উপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। অনিক বললো, ওগুলোই বড় বাবুই বাটান। পাখিগুলো উড়ে এসে ধান ক্ষেতের উপর বসলো। নতুন পাখি দেখা ও ছবি তোলার আনন্দ আমার চিরদিনের। পাখিগুলো আমার কৌতূহল আরো বাড়িয়ে দিলো। অনেক দূর থেকে কয়েকটি ছবি তুললাম। এরই মধ্যে পাখিগুলো উড়ে গেল বহু দূরে। অপেক্ষা করছি আবার ফিরে আসার। কয়েক মিনিট পর পাখিগুলো ফিরে এসে আবারও ধান ক্ষেতে বসলো। আমরা নিজেদের আড়াল করার জন্য শুয়ে পড়লাম। আস্তে আস্তে পাখিটির কাছে যাবার চেষ্টা করছি আর ছবি তুলছি। খুব একটা কাছে যেতে পারলাম না, তার আগেই আবার উড়ে গেল। উড়ন্ত অবস্থায় কিছু ছবি নিলাম। তারপর যতক্ষণ ছিলাম পাখিগুলোর আর দেখা পাইনি।

Oriental Pratincole বা বড় বাবুই বাটান Glareolidae পরিবারের ২৪ সে.মি. দৈর্ঘের গলায় মালা পরা সুদর্শন একটি পতঙ্গভূক পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বাদামি ও লালচে বাদামি। দেহের নিচের অংশ সাদা। চোখ থেকে নেমে গলা পর্যন্ত কালো ফিতা মালার মতো নেমে গেছে। এর ডানা কালচে বাদামি। কোমর সাদা। বুক ও পেটের উপরের অংশ লালচে। মুখের সঙ্গমস্থল লালচে। ঠোঁট কালো। চোখ কালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালচে-কালো। পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। বাচ্চা পাখির পিঠের কালচে বাদামি পালকের কিনারা পীতাভ। পূর্ণ বয়স্ক পাখি দেখতে খুবই সুদর্শন।

বড় বাবুই বাটান নদীর পাড়, জলা, কাঁদাচর ও নদীর ধারে ধানখেতে সচারচর বিচরণ করে। এরা কখনই একা বা জোড়ায় বিচরণ করে না। এরা দলবদ্ধ পাখি ও ঝাঁকে থাকে। একটি ঝাঁকে ৪০-৫০টি পাখি থাকে। মাটিতে দাঁড়িয়ে বা দৌড়ে এরা খাবার খায়। অনেক সময় উড়েও এরা পোকা খায়। খাদ্য তালিকায় রয়েছে উড়ন্ত পোকা, মথ, গুবরে পোকা, উইপোকা ও বড় পোকা। ভোর বেলা ও সূর্যাস্তের মুহূর্তে এদের খাবারের চঞ্চলতা বেশি থাকে। দুপুরের তপ্ত গরমে এরা নদীর পাড়ে মাটিতে বুক লাগিয়ে বসে থাকে।

এপ্রিল থেকে জুন মাস এদের প্রজননকাল। প্রজনন সময়ে  তৃণভূমির মাটিতে তৃণ দিয়ে পেঁচিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ৩-৪টি ডিম দেয়। ডিম থেকে ২০দিন পর বাচ্চা ফুটে বের হয়। বড় বাবুই বাটান বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। তবে শীত মৌসুমে পরিযায়ী বড় বাবুই বাটান আমাদের দেশে এসে আবাসিক পাখির সঙ্গে যোগ দিয়ে বিচরণ করে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের নদীর পাড়ে ও উপকূলে দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া, সাইবেরিয়া, চীন, মোঙ্গলিয়া ও ফিলিপাইনসহ এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি রয়েছে।

বাংলা নাম: বড় বাবুই বাটান

ইংরেজি নাম: Oriental Pratincole/Large Indian Pratincole.

বৈজ্ঞানিক নাম: Glareola maldivarum Forster.

লেখক ছবিগুলো রাজশাহীর তানোর থেকে তুলেছেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়