ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাছমুরালের শিকার ধরার ভয়ঙ্কর কৌশল

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাছমুরালের শিকার ধরার ভয়ঙ্কর কৌশল

জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ। বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ এবং অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা ও ফটোগ্রাফার ফারজানা রিক্তাসহ রাত দেড়টায় রওনা হলাম ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী বাঁধে। ভোর ৬টায় মুহুরী পৌঁছলাম। ছোট্ট একটি বিল। বিলের পানি নিয়ন্ত্রণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বাঁধ। বাঁধের মাধ্যমে শীতকালে বিলে মাছ চাষের জন্য পানি আটকে রাখা হয়। বলা যায় মাছের অভয়ারণ্য মুহুরীর বিল।

শীতকালে খাবারের জন্য প্রচুর পরিযায়ী পাখি  আসে মুহুরী বাঁধে। আমরা নৌকা ভাড়া করে বিলে রওনা হলাম। দুই ধারে জলজ উদ্ভিদে কালিম, বালিহাঁস, ঘুরঘুরি প্রজাতির পাখি খাবার খাচ্ছে। বিলের উপরে হরেক প্রজাতির পাখি উড়ছে। ৮-১০ প্রজাতির হাঁস পাখির বিচরণ এই বিলে। বক প্রজাতির পাখিরও বিচরণ করছে। ছবি তুলছি আর বিলে জেলেদের মাছ ধরার কৌশল দেখছি। আকাশে পাখি ও বিলে মাছ শিকার। এই দুইয়ের মিলনে প্রকৃতি তার স্বভাবজাত খেলা খেলছে। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে বাঁশের খুঁটিতে বসা একটি ঈগল জাতীয় পাখির দেখা পেলাম। নৌকা নিয়ে ধীরে ধীরে সামনে গেলাম। পায়ের নখে মাছ আটকানো। বুঝতে কষ্ট হলো না এটি মাছমুরাল পাখি। দূর থেকে আমাদের দেখামাত্র উড়ে গেল। পায়ে মাছসহ বেশ কিছু ছবি তুললাম।

Osprey বা মাছমুরাল Pandionidae পরিবারের ৫০-৫৬ সে.মি. দৈর্ঘ্যের মাঝারী আকারের ভয়ঙ্কর শিকারী পাখি। পূর্ণবয়স্ক পাখির মাথা সাদাটে। পিঠ কালচে বাদামি। ঘাড়ের পিছনের টিকি আছে। ডানা লম্বা। লেজ কালচে ডোরা ও বর্গাকার। ঠোঁট কালো। ঠোঁটের ওপর-পাটির আগা লম্বা ও বড়শির মত বাঁকানো। নাকের ছিদ্র ছোট। পা খাটো। চোখ হলদে ও চোখের পাতা সবুজে-হলদে। আঙুল লম্বা ও খুব শক্ত। লম্বা আঙুলের তলায় কাঁটার মতো আঁশ থাকে। নখ বেশ লম্বা ও বাঁকানো। ধারালো নখের সাহায্যে বড় বড় মাছ শিকার করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারায় ভিন্নতা দেখা যায়। ৪টি উপপ্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে একটি উপপ্রজাতির মাছমুরাল পাওয়া যায়।

মাছমুরাল বড় নদী, উপকূল ও মোহনায় বিচরণ করে। এরা একা থাকতে পছন্দ করে। একা শিকার ধরে ও নিজেই খায়। মাঝে মাঝে জোড়া দেখা যায়। পানির উপর কোনো খুঁটিতে বসে বা আকাশে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে পানিতে শিকার খোঁজে। পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পায়ের নখের মাধ্যমে সহজেই শিকার ধরে ফেলে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে শুধুমাত্র মাছ। মাছ ছাড়া অন্য কোনো খাবার এরা খায় না। মাছমুরাল নিজের দেহের ওজনের চেয়েও বেশি ওজনের মাছ শিকার করতে পারে। শিকার ধরে খুঁটিতে বসে প্রথমেই মাছের চোখ নষ্ট করে এবং দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে।

মূলত এরা উত্তর আমেরিকায় বসবাস করে। সেখান থেকে আমাদের দেশে উড়ে আসে খাবারের জন্য। আমাদের দেশে প্রজনন করে না। এদের প্রজননের সময় মার্চ-এপ্রিল মাস। প্রজননকালে এরা সাইবেরিয়া ও তিব্বতে হ্রদের পাশে পাতাওয়ালা গাছে ডালপালা দিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় ২-৪টি ডিম পাড়ে। মেয়েপাখি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।

মাছমুরাল বাংলাদেশে বিরল পরিযায়ী পাখি। শীতে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের নদী ও বিলে পাওয়া যায়। মাছের জন্য বিলে এদের বেশি দেখা যায়। এ ছাড়াও আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বিচরণ দেখা যায়।

বাংলা নাম: মাছমুরাল

ইংরেজি নাম: Osprey.

বৈজ্ঞানিক নাম: Pandion heliaetus.

লেখক ছবিগুলো ফেনীর মুহুরীর বাঁধ থেকে তুলেছেন।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়