ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বিষাক্ত নারী’র রহস্যময় মৃত্যু

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ২২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বিষাক্ত নারী’র রহস্যময় মৃত্যু

আপনার আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যার সঙ্গে আপনার কখনও সখ্য হবে না। এমনকি তার মুখোমুখি আপনি দাঁড়াতে পর্যন্ত চান না। হতে পারে সে আপনার সহকর্মী, সহপাঠী বা বাজে প্রতিবেশী। মানুষগুলোকে আপনার ‘বিষাক্ত’ মনে হতে পারে। এমনই একজন নারী গ্লোরিয়া রামিরেজ। ইতিহাসে তিনি ‘বিষাক্ত নারী’ হিসেবে পরিচিত। 

দুই শিশুসন্তান এবং স্বামীর সাথে ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইডে বাস করতেন গ্লোরিয়া। স্বজনদের মতে, তিনি এমন একজন মহিলা যার সঙ্গে সবার খুব দ্রুত সখ্য হয়। তিনি সবাইকে আনন্দ দিতেন। কিন্তু অবস্থা পাল্টে যায় তার ক্যানসার ধরা পড়ার পর।  

১৯৯৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি গ্লোরিয়াকে দ্রুত রিভারসাইড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল এবং রক্তচাপ দ্রুত কমে যাচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না। অসংলগ্ন ভাষায় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। হাসপাতালে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক তার চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু কিছুতেই অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন গ্লোরিয়াকে ডিফিব্রিলিটর ইলেক্ট্রোড প্রয়োগ করবেন। এজন্য যখন তার জামা খুলে ফেলা হয় তখন শরীরে অদ্ভুত একরকম তৈলাক্ত জিনিস দেখা যায়। তার মুখ থেকেও বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছিল। তার রক্তের মধ্যেও এমোনিয়ার বিকট গন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও রামিরেজের রক্তে ম্যানিলার মতো অসংখ্য কণা ভাসছিল।

সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হঠাৎ করেই রামিরেজের চিকিৎসায় নিয়োজিত একজন নার্স অজ্ঞান হয়ে যায়। আরেকজন নার্স মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে। তৃতীয় নার্স এই অবস্থা দেখে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। জানা যায়, পরদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর সেই নার্স হাত-পা নাড়াতে পারছিল না।

রামিরেজ এবং তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটছিল তখন কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাসপাতালে আনার ৪৫ মিনিট পরেই রামিরেজ মারা যায়। তার মৃতদেহ সরানোর জন্য বিশেষ পোশাক পরে একটি টিম হাসপাতালের ওই কক্ষে যায়। তারা সেখানে বিষাক্ত গ্যাস, টক্সিন এবং ক্ষতিকারক বস্তুর সন্ধান করে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো তারা সন্দেহজনক কিছুই খুঁজে পায়নি। তারা তখন রামিরেজের মরদেহ বিশেষ উপায়ে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই সময় তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এরপরই বিভিন্ন পত্রপত্রিকার শিরোনামে ‘টক্সিক-লেডি’ বা ‘বিষাক্ত নারী’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত পেয়ে যায় রামিরেজ।

তবে মারা যাওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর লাশের ময়নাতদন্ত করা হলে রিপোর্টে উঠে আসে অদ্ভুত এক তথ্য। তার দেহে টাইলনল, লিডোকেন, কোডাইন এবং টিগানের মতো অদ্ভুত সব পদার্থ ছিল। এজন্য ‘ডিএমএসও’ নামক একটি ক্রিমকে দায়ী করা হয়। ষাটের দশকে ব্যাথা উপশম করতে এবং মানসিক উদ্বেগ হ্রাস করতে এই ক্রিম ব্যাপকভাবে ব্যবহার করত মানুষ। এমনকি নামীদামি এথলেটরাও পেশীর ব্যথা নিরাময়ের জন্য এই ক্রিম ব্যবহার করতো। পরবর্তী সময়ে ক্রিমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কারণ, গবেষণায় জানা গিয়েছিল, ডিএমএসও মানুষের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রামিরেজ ক্যানসারের কারণে সৃষ্ট ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই ক্রিম ব্যবহার শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার পরিবারের ভাষ্যমতে, তিনি কখনো ডিএমএসও বা এ জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করেননি। রামিরেজের পরিবারের কথা সত্য হলে, এই ঘটনাটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সত্যি এক অদ্ভুতুরে ঘটনা। আর যদি ময়না তদন্তের রিপোর্ট সত্য ধরা হয়, তাহলে রামিরেজের এই রহস্যময় মৃত্যুর পেছনে মোটামুটি একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। তবে এই ময়নাতদন্ত নিয়েও অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন।



ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়