করোনা আতঙ্কের সময়ে কিছু ঘটনা
মহামারি করোনাভাইরাসে নাকাল গোটা বিশ্ব। বিশ্বে স্বাধীন দেশ ১৯৫টি, তার চেয়েও বেশি দেশ আক্রান্ত এই ভাইরাসে। কোভিড-১৯ ভাইরাসটি চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়ার ৮৮ দিনের মধ্যে বিশ্বের ১৯৯টি দেশের ৬ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
ইতিমধ্যে ৩০ হাজার ৪৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছে এই ভাইরাসে। থমকে আছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বের অর্থনীতি, পর্যটন, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য সব স্থবির হয়ে আছে। ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ গৃহবন্দি দশা বরণ করে নিয়েছে।
এই স্থবিরতাকে সঙ্গী করে কখনোই বিশ্ব এগিয়ে যেতে পারে না। ভয় আর বন্দিদশা- এভাবে মানুষের জীবন চলতে পারে না। মানুষের মৃত্যু কখনোই কাম্য হতে পারে না। তারপরও করোনাভাইরাসের মহামারি আর আতঙ্কের এই সময়ে স্বস্তিদায়ক কিছু ঘটনা ঘটছে। চলুন সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
কমেছে বায়ু দূষণ
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে আছে। বিশ্বের অধিকাংশ কল, কারখানাগুলো বন্ধ আছে। গণপরিবহন বন্ধ আছে। তাতে বিশ্বের বায়ুদূষণ কমে এসেছে। স্যাটেলাইট থেকে চীনের তোলা দুটি ছবিতে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চলতি বছরের ১ থেকে ২০ জানুয়ারি চীনের বায়ুদূষণ যে পর্যায়ে ছিল ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি সেটা কমে আসছে। লকডাউন অবস্থায় ইউরোপের বড় বড় শহরেও একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ইতালির মিলান শহর, যেখানে অধিকাংশ শিল্প কারখানা রয়েছে, সেখানকার বায়ুদূষণ গেল চার সপ্তাহে ২৪ শতাংশ কমে এসেছে। একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোতেও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে স্পেনের বার্সেলোনা শহরে বায়ুদূষণ কমেছে ৪৬ শতাংশ। আর মাদ্রিদ শহরে কমেছে ৫৬ শতাংশ!
স্বেচ্ছাসেবায় মানুষের স্বতস্পূর্ত অংশগ্রহণ
যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বুধবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল ২ লাখ ৫০ হাজার সেচ্ছাসেবী আহব্বান করেন বাসায় বাসায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঔষুধ পৌঁছে দিতে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ব্যবধানে সেখানে ৪ লাখ মানুষ নিজেদের নাম নিবন্ধন করে। বিবিসি’র দেওয়া তথ্যমতে অল্প সময়ের ব্যবধানেই সেটা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। যা দেশটির স্বশস্ত্র বাহিনীর চেয়েও বড়। যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ১ লাখ ৯২ হাজার সৈন্য রয়েছে।
শুধু সেচ্ছাসেবী নয়, যে যেখান থেকে যেভাবে পারছে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। স্বাস্থসেবার সঙ্গে যারা জড়িত- নার্স, মেডিক তারা এগিয়ে আসছে। যারা অবসরে চলে গিয়েছিল, তারা অবসর ভেঙে করোনা রোগীদের সেবার জন্য আসছে। বিভিন্ন মেডিকেলে পড়ুয়া চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসছে। এই সংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি!
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার তৎপরতা
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দারুণ তৎপর রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ সংখ্যা (হু)। ইতিমধ্যে হু চারটি ঔষুধ নিয়ে কাজ করছে। যেগুলো অন্যান্য ভাইরাস ও অসুস্থ্যতায় ব্যবহৃত হয়েছে। তারা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করতেও শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার রোগীকে এই ঔষুধের ট্রায়ালের আওতায় আনা হচ্ছে। এরপর সেগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে, চলছে পর্যবেক্ষণ। এই ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, কানাডা, ফ্রান্স, ইরান, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন ও সুইজারল্যান্ড।
করোনার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্মা’র ব্যবহার
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস জেকে বসেছে। লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে সেখানে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শতবর্ষী পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতি প্লাস্মা (রক্তরসের ব্যবহার) অনুসরণ করছে। টিকা আবিস্কারের পূর্বে যেটা ফ্লু ও হামের চিকিৎসায় সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইবোলা ও সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এটা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও কাজ করবে।
রক্তরস কিভাবে কাজ করে? যখন কোনো ব্যক্তি ভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন সেটার বিরুদ্ধে লড়তে শরীর বিশেষ গড়নের প্রোটিন উৎপাদন শুরু করে। যেটাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়। ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে ব্যক্তিটি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর এই অ্যান্টিবডি তার রক্তে মাসের পর মাস ভেসে বেড়ায়। বিশেষ করে রক্তরসে। এই রক্তরস নিয়ে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দিলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে তার শরীর অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করে। জটিলতা কমিয়ে আনে।
কিউবার দৃষ্টান্ত স্থাপন
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল শুক্রবার একদিনে রেকর্ড ৯১৯ জন মারা গেছে সেখানে। ইতালির লোম্বার্ডি অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে কিউবা ৫২ সদস্যের একটি ব্রিগেড (মেডিকেল পার্সোনেল) পাঠিয়েছে। যাদেরকে ‘আর্মি’স অব হোয়াইট রোবস’ বলা হয়। কিউবা অবশ্য ১৯৫৯ সাল থেকেই বিশ্বের নানা বিপর্যয়ের সময় এই ব্রিগেড পাঠিয়ে আসছে।
ইতালিতে আর বাড়বে না আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা!
গেল শনিবার থেকে ইতালিতে প্রতিদিন ৬০০ এর উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে। গেল শনিবার রেকর্ড ৭৯৩ জন মারা গিয়েছিল একদিনে। গতকাল শুক্রবার সেই রেকর্ড ভেঙে একদিনে ৯১৯ জন মারা যায়। তবে আশার কথা হচ্ছে এরপর থেকে ইতালিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দুটোই কমবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার সহকারি মহা-পারিচালক রানিয়েরি গুয়েরা।
ঢাকা/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন