'করোনা হলেও মরতে হবে না হলেও মরতে হবে'
করোনাভাইরাস আজ বৈশ্বিক সমস্যা। এই সংকটের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। বিভিন্ন জেলায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাসী যারা দেশে ফিরেছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী যাতে এ ভাইরাসে সংক্রমিত না হয়, সে জন্য সবাইকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার, হাত সাবান পানি দিয়ে ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল দিয়ে পরিষ্কার করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ এ সচেতনতা কতটুকু মেনে চলছেন গ্রামের মানুষ? খোঁজ নিতে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যাই।
বলিরপোল বাজারের চা দোকানি আবদুর রহমান (৫০)। একাকী বসে ছিলেন দোকানে। ভিড় নেই। গ্রহক নেই। কারণ জানতে চইলে বললেন, করোনাভাইরাসের কারণে দোকানপাটে মানুষ কমে গেছে।
মানুষ আতঙ্কে আছে। অথচ তারা সচেতনও না। শতকরা ৮০ জন মানুষও মাস্ক পরে না, সাবান দিয়ে হাত ধোয় না।
জানতে চাই, করোনা নিয়ে তাহলে কী ভাবে এলাকার মানুষ? রহমান বলেন, শুধু জানি, এইটা একটা খারাপ রোগ, এর চিকিৎসা নাই। এর নাম আগে কখনো শুনিও নাই। করোনা হলেও মরতে হবে, না হলেও মরতে হবে। আল্লার বান্দা আল্লা নিয়া গেলে যেই কোনোভাবে নিয়া যাইতে পারে। এই সব মাস্ক টাস্কে কাজ হবে না। এই রোগ খালি খ্রিষ্টান-ইহুদিগোর জন্য না, সবার জন্য। হয়তো একটা উছিলায় মানুষকে আল্লা নিয়া যাবে। তাই বইলা মসজিদ বন্ধ করার প্রয়োজন নাই। আল্লাহর দরবারে মানুষ দোয়া করলেই, রেহাই মিলবে।
স্থানীয়ভাবে মানুষকে সচেতন করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, ইউএনও সাব মানুষকে সচেতন হওয়র জন্য বলে গেছেন। হাট-বাজারে যেন না যায় বলে গেছেন। যারা বিদেশ থেকে আসছে, তারা যেন বাড়িতে থাকে, সেটা বলে গেছেন। যারা বিদেশ থেকে আসছে, তারা বাইরে বের হয় না। যদি বের হয়, তাহলে মানুষ পিটায়া মারবে। বলতে গেলে সবাই মোটামুটি একটা আতঙ্কের মধ্যে আছে।
একই এলাকার বাসিন্দা আমজাদ মোল্লা (৫৬)। করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে সবার মাঝে আতঙ্ক ঢুকে গেছে৷ শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ এখন সচেতন। সবাই না। যেমন, আজ আমার ক্ষেতে ১০ জন কাজ করেছে। আগে সবাই হাত-টাত না ধুয়ে নাস্তা করলেও আজ দেখলাম সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে। আশানুরূপ না হলেও এটাই অনেক কিছু। আমরা করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লার কাছে দোয়া, কান্না-কাটি করেছি। ইনশাল্লাহ আমি মনে করি শুধু করোনা নয়, অন্যান্য রোগ মুক্তি থেকেও মানুষ মুক্তি লাভ করবে।
চর কালকিনির মেঘনাতীরের মতিরহাট বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী রুহুল আমিন। বিকেলে কয়েকজনকে নিয়ে হোটেলে গল্প করছেন। এই সময়ে তার হোটেলে অনেক গ্রাহক থাকার কথা। কিন্তু আজ ফাঁকা। কথা বলে জানা গেল, করোনা নয়, নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার কারণে হোটেল ফাঁকা।
রুহুল আমিন বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ। করোনা ফরোনা কিছু বুঝি না। তবে হ্যাঁ, করোনার কারণে অনেক কাস্টমার কমেছে। যেমন স্কুলের পোলাপাইনও নাই। করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। কিন্তু যেভাবে সরকার মানুষকে সচেতন হতে বলেছে, তেমন কিছু দেখছি না। সরকার অবশ্যই ভালোর জন্য বলে। কিন্তু গ্রামের মানুষ এই সবের কিচ্ছু বুঝে না।
চর কালকিনি ইউনিয়নের রেড ক্রিসেন্ট (সিপিপি)'র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, আমরা মানুষের মাঝে করোনা নিয়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি। মাইকিং করেছি। সবাইকে সচেতন করেছি। এই এলাকা নদীকেন্দ্রিক। সবাই মোটামুটি সচেতন। ঘর-বাড়িতেই আছে।
চর মার্টিন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম পারভেজ বলেন, মানুষ এটা নিয়ে খুব নীরব হয়ে গেছে৷ একটা বিষয় মানুষকে বেশি আতঙ্কিত করেছে। সেটা হচ্ছে, কেউ কাউকে ছুঁতে পারবে না, মরার পর জানাজাও দিতে পারবে না। যেটা নির্দেশ দেয়া হয়েছে, মাস্ক পরে চলাচল করতে হবে। কিন্তু সবাই তো পরে না। তারপনও মানুষকে বুঝাই-শুনাই রাখি। কিন্তু সে আর কতদিন! উপর থেকে এখনো মাস্ক, স্যানিটাইজার বা এমন কিছু আসেনি। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নিরক্ষর। তাই তারা এই বিষয়ে তেমন সচেতন নয়। আমরা প্রত্যেক মসজিদের সভাপতি এবং সেক্রেটারিকে ফোন দিয়ে বলেছি, মানুষকে যেন এই বিষয়ে সচেতন করে।
ঢাকা/তারা/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন