ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এক দানশীল জমিদারের কথা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
এক দানশীল জমিদারের কথা

বিষ্ণুপদ শাহ্ এক দানশীল জমিদারের নাম। জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা এবং তার আশপাশের অঞ্চলগুলো ছিলো তার জমিদারীর আওতাধীন। এখানেই প্রাসাদসম বাড়িতে বাস করতেন তিনি। এলাকায় এখনও রয়েছে তার হাতে তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং দাতব্য চিকিৎসালয়। এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে তার নাম।

বিষ্ণুপদ শাহ্‌ প্রজাবৎসল ছিলেন। গরিব, অসহায় প্রজাদের জন্য তার আলাদা ভাবনা ছিলো। মেহনতী মানুষদের ভালোবাসতেন। বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গোলাবাড়ি স্থাপন করেন। যেসব প্রজা খাজনা দিতে পারতেন না তাদের কাছ থেকে তিনি ফসল খাজনা হিসেবে নিতেন। সেই ফসল সংরক্ষণ করতেন গোলাবাড়িতে। নিজের জন্য নয়, প্রজাদের জন্যই তিনি এ কাজ করতেন। যখন এলাকায় তীব্র খাদ্যসংকট, অভাব-অনটন দেখা দিতো তখন তিনি গোলাবাড়ির ফসল গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। যতদূর জানা যায় তিনি প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ে খুব বেশি উৎসাহী ছিলেন না। যতটুকু আদায় হতো তার সিংগভাগ বিভিন্ন স্থানে দান করে দিতেন।

বিষ্ণুপদ শাহ্ এলাকার শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি ১৮৯৯ সালে আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি আমলায় তার পিতা নবদ্বীপ শাহ্‌’র নামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখান থেকেই প্রজাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। তার জমিদার বাড়ি বর্তমানে আমলা সরকারী ডিগ্রি কলেজ। বাড়ি সংলগ্ন বিশাল পুকুরটিও এখন কলেজের নামে রয়েছে।

১৯৪৭ সালে যখন দুই বাংলা বিভক্ত তখন বিষ্ণুপদ শাহ্‌ জমিদারী ছেড়ে ওপার বাংলায় চলে যান। পরে জমিজমার কিছু অংশ তিনি আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। চলে যাওয়ার পর তিনি আর কখনও ফিরে আসেননি। তবে তার ছেলে সরোজ কুমার শাহ্ ২০১০ সালে একবার এসেছিলেন বাবার স্মৃতিবিজড়িত অঞ্চল ঘুরে দেখতে।

বিষ্ণুপদ শাহ্ আর নেই, নেই তার জমিদারী। কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে তার দানকৃত জমিজমা, প্রতিষ্ঠানগুলো। তার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমলা সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহব্বত হোসেন জানান, বিষ্ণুপদ শাহ্ চলে যাওয়ার পর মিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মারফত আলী তার জমিদার বাড়িতে আমলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কলেজটি জাতীয়করণ করেন।

তিনি জানান, জমিদার বিষ্ণুপদ শাহ্‌’র অবিশ্বাস্য অবদানের কথা এই অঞ্চলের মানুষ কখনও ভুলবে না।

 

কাঞ্চন কুমার/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়