ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

‘পালাবে কোথায়?’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পালাবে কোথায়?’

জেলিম খান খানগোশিভিলি জীবনের দীর্ঘ একটা সময় যুদ্ধে কাটিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে চেচনিয়া রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসিতে গুপ্তঘাতকের গুলি থেকে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে যান জেলিম। সুস্থ হওয়ার পর ইউক্রেন চলে যান তিনি। তবে সেখানেও তার ওপর হামলা হতে পারে জানতে পেরে লুকিয়ে জার্মানি চলে যান জেলিম।

জার্মানি চার সন্তান নিয়ে বসবাসরত জেলিমের স্ত্রী মানানা তিসাতিভা বলেন,‘আমরা মনে হয় তিনি এখানে অনেক নিরাপদ বোধ করেছিলন। তিনি কেবল জার্মানিতে নিজের উজ্জল ভবিষ্যত গড়ে তোলার কথা ভাবতেন।’

তবে ইউরোপের একেবারে কেন্দ্রস্থলে বাস করেই ২০১৬ সালে জেলিমকে নিজের শেষ পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়। গত মাসে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বার্লিনে তার মাথায় দুটি গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে মারা যায় জেলিম।

সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে পুলিশ অবশ্য দ্রুত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। ধরা পড়ার আগ মুহূর্তে হামলাকারী তার পরচুলা ও পিস্তলটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল নদীতে। এখনো হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তার মুখ খোলাতে পারে নি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, রুশ নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা ক্রেমলিনের সমর্থনপুষ্ট চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভের নির্দেশেই হত্যা করা হয় জেলিমকে।

প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভের বিরোধীদের হত্যার শিকার হওয়া অবশ্য এটাই প্রথম নয়। প্রাক্তন দেহরক্ষী উমর ইসরাইলভ প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কাদিরভ তার ওপর ব্যক্তিগতভাবে নির্যাতন চালাতেন। ২০০৯ সালে ভিয়েনায় গুলিতে নিহত হন উমর। একই বছর কাদিরভের রাজনৈতিক বিরোধী সুলিম ইয়ামাদায়েভ দুবাইতে গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় দুবাই পুলিশ জানিয়েছিল, কাদিরভের ঘনিষ্ঠ এক রাজনৈতিক নেতা হত্যাকাণ্ডের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আবু মুসলিমভের ছোট ভাই আপতিকে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির সঙ্গে শালি শহর থেকে অপহরণ করা হয়। পরে ওই প্রতিবেশী জানান, তাদেরকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আপতিকে তার থেকে আলাদা করে রাখা হয়। এরপর সে কখনো আপতিকে দেখেনি। রুশ সংবাদমাধ্যম নোভেয়া গ্যাজেটা বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার যে ২৭ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছিল তার মধ্যে আপতির নামও ছিল।

২০০৪ সালে গুপ্তহত্যার শিকার হয় সাবেক চেচেন প্রেসিডেন্ট আকমদ কাদিরভ। এরপর ক্ষমতায় আসেন তার ছেলে রমজান কাদিরভ। সমালোচকেরা বলেন, কাদিরভের শাসনে চেচনিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের দেশ। পুতিনের সমর্থনপুষ্ট কাদিরভের নিরাপত্তা বাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাইকারি হারে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সন্দেহভাজন জঙ্গি, সরকারের সমালোচক কেউ রেহাই পায়নি তাদের কাছ থেকে। এমনকি কেউ নিয়মের বাইরে দাড়ি রাখলে তাকে কাদিরভ বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে।

গত এক দশকে অন্তত ছয় জন বিশিষ্ট চেচেন রাজনীতিবিদ গুপ্তঘাতকের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তুর্কি কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে রুশ গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশ আছে। যে বা যারাই কাদিরভের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করেছে তাদের প্রত্যেককেই হত্যা না হয় নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কোনোভাবে বিদেশে পালিয়ে গেলেও খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছে বিরোধীদের। কাদিরভের তার বিরোধীদের এটাই বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, সমালোচনা বা বিরোধিতা করলে পালিয়েও নিস্তার নেই।


ঢাকা/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়