ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সাক্ষাৎকার

দুর্দিনের ত্যাগীরা আশায় বুক বেঁধেছেন: আব্দুর রহমান

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্দিনের ত্যাগীরা আশায় বুক বেঁধেছেন: আব্দুর রহমান

আব্দুর রহমান (ডানে), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ (ছবি : রাইজিংবিডি)

বিভিন্ন কারণে দলে কোণঠাসা হয়ে থাকা দুর্দিনের ত্যাগী নেতাদের এবার মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমার নেত্রীর ওপরে সেই আস্থা-বিশ্বাস সবই আছে। আমি মনে করি, তিনি তাদেরকে সেভাবে সেই জায়গা তৈরি করে দেবেন। বিগত দিনের ত্যাগ-তিতীক্ষা মূল্যায়ন করা এটি কিন্তু নেতৃত্বের একটি সাংঘাতিক গুণ এবং সেই গুণের পরিচয়টা বিগত সম্মেলনগুলোতে নেত্রী দিয়েছেন। আজকে ত্যাগী যারা দলের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাদের এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে যদি জায়গা করে দেয়া যায় আমার মনে হয়, তারা শেখ হাসিনার মূল যে পালস, রাজনৈতিক অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা, সেই বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে  পারবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ওই সমস্ত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা যারা বুক বেঁধে আছে তাদের আশা পূরণ হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে আব্দুর রহমানের রাজনীতিতে প্রবেশ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ফরিদপুর-১ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে এখন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি রাজধানীর পরিবাগে নিজের বাসভবনে রাইজিংবিডিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির প্রধান প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ

রাইজিংবিডি: অনেকগুলো জেলা সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। কাছ থেকে তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশার কথা শুনেছেন। আগামী সম্মেলন ঘিরে তাদের প্রত্যাশা কী?

আব্দুর রহমান: সম্মেলন ঘিরে তৃণমূলের আশা-প্রত্যাশা আগামীতে নেতৃত্বে একটি গুণ ও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা এবং যথাযথ অর্থেই দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা। দলে অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাবাদীরা নানা কারণে জায়গা করে নিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে হটানো এটাই তৃণমূলের চাওয়া।

একই সঙ্গে তৃণমূল চাইছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পুনরায় এই দলের হাল ধরা এবং তিনি হাল ধরলেই কর্মীরা আশ্বস্ত হতে পারবেন, তারা ভরসা পাবেন, উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে। আমরা মনে করি, আমাদের নেত্রী যদি আমাদের নেতৃত্বে থাকেন তাহলে আমরা স্বাচ্ছন্দ‌্যে  এই দল করে আমাদের একটা মনের কথা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হলেও বলতে পারব। সুতরাং তিনি আমাদের ঠিকানা, তিনি আমাদের আশ্রয়স্থল, তাকেই এই দলের হাল ধরতে হবে। উনি এই দলের জন্য একমাত্র অপরিহার্য। এর বাইরে নেত্রী যাকে দিয়ে যেখানে যে অবস্থায় কাজ করান, সেদিক থেকে নেতা-কর্মীদের কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা কিছুই থাকবে না। উনার সন্তুষ্টি ও সম্মতিতে যদি বাকি কমিটি করে দেন বা উনি যাদেরকে যেখানে যে অবস্থায় কাজ করাতে স্বাচ্ছন্দ‌্যবোধ করেন, নেতা-কর্মীরা তাতেই সন্তুষ্ট।

রাইজিংবিডি: দলে শুদ্ধি অভিযান নিয়ে তৃণমূলের ভাবনা কী?

আব্দুর রহমান: নেতৃত্বের গুণগত পরিবর্তনের কথা তারা যেটা বুঝাতে চায়, সেটা হচ্ছে উনি ঠিক সময়ে দলের মধ্যে যে একটি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে এটি অব্যাহত রাখা। এই দলের শক্তিকে, এই দলের ক্ষমতায়নকে মিস ইউজ করা অর্থাৎ সুবিধাজনকভাবে এটাকে ব্যবহার করা; এগুলো যারা করে থাকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। তারা যাতে ভবিষ্যতে আর বাড়তি এই সুবিধা নিয়ে দলকে মানুষের কাছে একটা প্রশ্নবোধক না করতে পারে সেই বিষয়ে একটা দৃঢ় অবস্থান তো উনি (শেখ হাসিনা) নিয়েছেন, সেটিকে আরো সচল রাখা।

রাইজিংবিডি: উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তৃণমূল। সেক্ষেত্রে দলের শক্ত সাংগঠনিক ভিতও দরকার। দলের বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি কেমন?

আব্দুর রহমান: দল যদি শক্তিশালী হয়, একটি মজবুত ভিত্তি ও আদর্শিকভাবে দাঁড়ায়, তাহলে দলের শ্রী বৃদ্ধি হবে। গতিশীলতা বাড়বে।  সম্মেলনে বা জনসভায় কত লোক হয়েছে তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দলে গুণগত একটা পরিবর্তন আনা। যেটা আনলে আদর্শিক ভিত্তির উপরেই এই দলের কাঠামো দাঁড়াবে এবং সেই কাঠামো মজবুত হবে। সেটা হতে পারলেই দল পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে।  দল যদি শক্তিশালী না হয়, যদি সেই আদর্শিক জায়গাটাকে সামনে জায়গা করে না দেয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করে যে, আসলে একটা বড় বেলুন দিয়ে অনেক বড় করা যায়। কিন্তু সেটা ফানুস বেলুন হবে। যদি যথার্থ অর্থেই এই দলকে সাজাতে হয়, তাহলে একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে বেছে ছে‌কে যাচাই-বাছাই করে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য কতগুলো মৌলিক কাজ আছে- সেগুলো করতে হবে।

একটি আড়ম্বরপূর্ণ সভা-সমাবেশ করলাম, প্ল‌্যাকার্ড-ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাত সরঞ্জাম করে সম্মেলন করলাম, এর ভেতর দিয়ে কিন্তু ওই জায়গাগুলোকে স্পর্শ করা যায় না। ওই জায়গায় স্পর্শ করতে হলে একদম শেকড়ের কাছে যেতে হবে। তৃণমূলের কাছে যদি যাওয়া যায় তাহলে যেকোনো রাজনৈতিক সংকটই আসুক না কেন তা মোকাবিলা করতে পারবে দল এবং আগামী দিনে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসবে।

রাইজিংবিডি: আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে আপনার নাম আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, দায়িত্ব পেলে কোন কাজকে অগ্রাধিকার দিতে চান?

আব্দুর রহমান: সাধারণ সম্পাদক হবো কি না আমি জানি না এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হবে কিনা সেটাও আমার জানা নেই। তবে যদি এটা কোনো কারণে হয়, যদি মনে করেন বা এরকম কোনো অবস্থা হয়, তাহলে আমি মনে করি আমার প্রধান চ্যালেঞ্জই হবে উনার (শেখ হাসিনা) যে ভাবনা, যে রাজনৈতিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, সেটিকে বাস্তবায়ন করা। নিজেকে নিবেদিত করা।

উনি চান যে, উনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি বাংলাদেশের মানুষের হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন এবং সেই সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। ভবিষ্যতে তিনি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চান এবং চূড়ান্ত লক্ষ্যে তিনি একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে চান। উনার যে আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার সেই দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রধানতম দায়িত্ব হওয়া উচিত হবে তার সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে যা যা করার, সেটাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া। সেটিকে সেভাবে নিয়ে তার স্বপ্ন রাজনৈতিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং তার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করাই হবে প্রধান কাজ। কোনো কারণে যদি আমি এই দায়িত্ব পাই তাহলে আমি এই কাজটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে করবো।

রাইজিংবিডি: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। নিজেকে মূল্যায়ন করবেন কীভাবে?

আব্দুর রহমান: একটা বিষয় বলে রাখি, নেতৃত্ব একটা সামগ্রিক দিক নির্দেশনা দেন বাকি নেতৃত্বের ওপরে এই কাজগুলো করার জন্য। সেই কাজকে ফরমুলেটেড করা, গুছিয়ে সাজিয়ে কাজগুলোকে আমাদের মতো নেতৃত্বের মধ্যে ভাগ বণ্টন করে যার যার দায়িত্ববোধের জায়গাটা তৈরি করে দেয়া সাধারণত দলের সাধারণ সম্পাদক করে থাকেন। আমি মনে করি বিগত তিন বছরে ব্যর্থ হয়েছি তা বলবো না, তবে যতটুকু সফল হয়েছি আমাদের এই ঘাটতিটুকু না থাকলে আমরা আরো বেশি সফল হতে পারতাম।

কারণ সাধারণ সম্পাদকের নিজের মুখেই বলেছেন যে ২২ দিনে ২৮টি জেলা সম্মেলন হয়েছে। তাহলে তিন বছরে সমস্ত জেলা সম্মেলন কেন হলো না? এই প্রশ্ন তো আসতেই পারে। একটা ইস্যু সামনে আসলেই এই ইস্যু ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই একটি রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। রাজনৈতিক দলের কাজ হল সার্বক্ষণিক কর্মকাণ্ডের ভেতরে থেকে দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত থাকা। সারাক্ষণ দলকে নিয়ে ভাবনা, নার্সিং করা। আমার মনে হয়, একদম সেজেগুজে দল বেঁধে একটা জায়গায় গেলাম, বড় বড় সভা-সমাবেশ হলো, মানুষ শুনলো, বক্তৃতায় হাততালি পেলাম- এটাই কিন্তু মূল রেজাল্ট নিয়ে আসা গেল না। দীর্ঘ ১০-১১ বছর একটা দল ক্ষমতায় আছে সেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির যে ব্যাপারটি থাকে এটা তো অস্বীকার করে লাভ নাই। কিন্তু দেখা গেছে, স্বার্থসিদ্ধির কথাটা প্রধানত তারাই বড় করে দেখে, যারা এই দলের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সেভাবে সম্পৃক্ত না। যারা এই দলের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে, লালন করে, এই দলের সংগ্রামমুখর ইতিহাসকে লালন করে, স্মরণ করে যারা এগোতে চায় এবং দলকে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত করে মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে, মানুষের মন জয় করেছে তারা কিন্তু এই ভোগবিলাস সুবিধা নেওয়া রাজনীতির পেছনে মরিয়া হয়ে ওঠে না। আর যারা ইতিহাসের সাথে জড়িত না বা আওয়ামী লীগের ইতিহাসতে আত্মস্থ করতে পারেনি, এই সুবিধার জায়গাকে বড় করে দেখে এবং লুফে নেয়। সুতরাং আমাদের কাজ হবে এই জায়গা থেকে নেতা-কর্মীদের বের করে আনা। দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে তাহলে এমনিতেই যে কর্মীর অবদান আছে, যে কর্মীর দলের প্রতি তার কর্তব্য পালনে যথেষ্ট, সেও কিন্তু চূড়ান্ত বিজয় লাভ করলো। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার প্রবণতা এটাকেই জাগ্রত করতে হবে। আমি একা ভালো থাকবো এই বলয় থেকে বেরিয়ে আসাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। যেটি আমাদের নেত্রী বারবার বলেন, অর্থ উপার্জন করা একটা রোগ, অর্থের পেছনে ছুটা একটা ব্যাধি। সুতরাং এই ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসবার একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।

রাইজিংবিডি: সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন আসছে কী?

আব্দুর রহমান: এ ধরনের বড় পরিবর্তন হচ্ছে না। ছোটখাটো বিষয়ে কিছু শাব্দিক পরিবর্তন বা কিছু শব্দ সংযোজন-বিয়োজন হবে। এটা ছাড়া বড় মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসছে না।

রাইজিংবিডি: সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন কেমন হতে পারে?

আব্দুর রহমান: সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে গুণগত একটা পরিবর্তন আসবে। ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কিন্তু একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন জেলায় যেসব কমিটি করেছি, সব কমিটির বিভিন্ন জায়গায় ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছি। এর মানে হলো, প্রকৃতপক্ষে যারা রাজনীতির ভেতর দিয়েই বড় হয়েছে, এই সংষ্কৃতির ভেতর দিয়েই বড় হয়েছে; অথচ আজকে তাদের অর্থকষ্টসহ নানা কারণে যারা দলের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তাদেরকে কিন্তু এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাদের যদি জায়গা করে দেয়া যায় আমার মনে হয়, তারা শেখ হাসিনার মূল যে পালস, রাজনৈতিক অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা; সেই বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে সহযোগিতা করতে পারবে।

রাইজিংবিডি: বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর উত্থান বাড়ছে। দেশে দেশে সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তও বাড়ছে। কিন্তু এসব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়। বিশ্ববাসীকে এবং দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে এই সময়ে এসে নতুন সম্মেলনে কী মেসেজ দিবে আওয়ামী লীগ।

আব্দুর রহমান: বাংলাদেশে ভিন্ন প্রেক্ষিত শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে। একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি দেশে বিদ্যমান থাকলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চাটা হতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতির পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারণ করা। এবং সেই কাজটি শেখ হাসিনা সঠিকভাবে করতে পেরেছেন এবং বাংলাদেশকে সে জায়গাটায় এখন পর্যন্ত রাখতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি রাখতে হলে সংগঠনের ওপরই ভরসা করতে হবে এবং সেই সংগঠনকে গতিশীল, বেগবান ও শক্তিশালী করার কোনো  বিকল্প নেই।

রাইজিংবিডি: সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন তার দুর্দিনের কর্মীরা সবথেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এবারের সম্মেলনে সেই নেতা-কর্মীদের কতটা তুলে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন?

আব্দুর রহমান: আমার নেত্রীর ওপর সেই আস্থা-বিশ্বাস সবই আছে এবং আমি মনে করি, তিনি তাদের সেভাবে সেই জায়গা তৈরি করে দেবেন। এমনকি বিগত কমিটিতে কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় তিনি...আমরা নামও শুনি নাই বা ভাবতেও পারেনি, তার ভেতর দিয়েও কিন্তু তিনি কমিটিতে তাদের এনেছেন। কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি সারা বছর হোমওয়ার্ক করেন। যেকোনো ইস্যুকে সামনে রেখেই তিনি তার হোমওয়ার্ক করেন। এটা করে তিনি তার সুচিন্তিত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন, যে সিদ্ধান্তটা আমি দেখেছি প্রশংসিত হয়ে আসছে। এটাকে কেউ অন্যভাবে নেয়নি। তাদের যে বিগত দিনের ত্যাগ-তিতীক্ষা মূল্যায়ন করা এটি কিন্তু নেতৃত্বের একটি সাংঘাতিক গুণ এবং সেই গুণের পরিচয়টা কিন্তু বিগত সম্মেলনগুলোতে নেত্রী দিয়েছেন। এবার আরো বেশি সতর্ক আছেন যেহেতু তিনি অশুভ রাজনীতির সকল শক্তির বিরুদ্ধে তার জিহাদ এবং আজকে বিএনপিৎ, জামায়াত এমনকি আমাদের দলের মধ্যেও অনুপ্রবেশকারী, মতলববাজ, ধান্দাবাজ, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু ওনার সংগ্রাম। সুতরাং সেই জিনিসটি হলে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ওই সমস্ত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা যারা বুক বেঁধে আছেন তাদের আশা পূরণ হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

রাইজিংবিডি: আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। দলের ছোটখাটো সিদ্ধান্তগুলোও তাকে দিতে হয় অনেক সময়। এগুলো কী তার ওপর অতিরিক্ত চাপ হয়ে যাচ্ছে না?

আব্দুর রহমান: এই মুহূর্তে আমাদের বিকল্প শেখ হাসিনা তৈরি না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রতি নির্ভরশীল থাকতে হবে। আর হ্যাঁ ওনার ওপর চাপ কমানোর জন্যই বাইরে যে নেতৃত্বগুলো উনি ঠিক করে দেবেন সেই নেতৃত্বের একটা সদিচ্ছা থাকতে হবে। একটা অনুভূতি থাকতে হবে। নেত্রীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকতে হবে, আমার নেত্রীকে আমি যতটা সম্ভব কম কষ্ট দেব। এই বোধটা থাকতে হবে। তার সেই প্রগাঢ় ভালোবাসা বা বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা না থাকলে তো এই বোধোদয়ের জাগরণ হবে না।

রাইজিংবিডি:  আওয়ামী লীগ যখন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে ব্যস্ত তখন বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

আব্দুর রহমান: একটা রাজনৈতিক দলের যে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে তা  বিএনপির নেই। আন্দোলন করার মতো ক্ষমতা বা শক্তি তাদের নেই। দু-একটা গাড়ি ভাঙচুর করা ছাড়া যথার্থ অর্থে মানুষকে পুল করে নেয়া এবং মানুষকে নিয়েই একটা মুভমেন্ট তৈরি করা; সেই জায়গাটা বিএনপির নেই। না থাকার যথেষ্ট কারণ আছে। আজকে ওই দলের মূল নেতৃত্বের একজন কারাগারে। আরেকজন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতম আসামি। দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদের মতামত ব্যক্ত করার পথ রুদ্ধ। তাদের একটা সিদ্ধান্তহীনতা, তাদের কি করা উচিত, কি না করা উচিত- এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব এগুলো একটা দলকে যেমন না আন্দোলনে, না সংগ্রামে, না ভোটে..কোনো কিছুতেই আগাতে পারে না। যার ফলাফল বিগত নির্বাচনে আমরা সবাই দেখেছি। আমাদের একটা কথা আছে আধা গাঙের সাঁতার দিতে নেই। অর্ধেক কাজ করলে যেটা হয় সেটা হয়েছে তাদের। আরেকটি বিষয় হচ্ছে তাদেরকে পরিষ্কারভাবে কিছু রাজনৈতিক ইস্যু ফয়সালা করতে হবে। যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা তারা কিভাবে দেখে এবং এই ঘটনাটি ঘটার জন্য তাদের আমলেই ঘটছে। সেই জায়গায় তাদের মতামত প্রকাশ্য হতে হবে মানুষের কাছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের প্রকাশ্য বক্তব্য থাকতে হবে। জামায়াত-শিবির ছাড়তে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে তাদের পরিষ্কার বক্তব্য থাকতে হবে। এই কতগুলো বিষয় আছে, যেগুলো ফয়সালা না করা পর্যন্ত এই দল কোমড় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এই আন্দোলন করার নামে তারা কিছু নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি হয়তো করতে পারে। কিন্তু সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমার মনে হয় আমাদের দল প্রস্তুত আছে এবং যথেষ্ট শক্তিশালী তাদের সেই ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য।

রাইজিংবিডি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আব্দুর রহমান: রাইজিংবিডির এবং পত্রিকাটির পাঠকদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

আরো পড়ুন :

 

ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়