‘এখনো নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে নেয়া
সমাজে এখনো একজন পুরুষ যেভাবে ঘরে-বাইরে স্বাধীনভাবেতার চলতে পারে, একজন নারী সেভাবে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ।
তিনি বলেন, ‘নারী এগিয়ে যাচ্ছে সত্য। তবে, এখনো তার নিরাপত্তাহীন নিশ্চিত হয়নি।’ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাইজিংবিডিডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
রাইজিংবিডি: নারীদের অগ্রগতিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: নারী এগিয়ে যাচ্ছে, এটা যেমন সত্য, তেমনি ভাবে নারীর নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও সত্য। বিষয়টি আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তোলে। সেটা কেবল আমাকে নয়, সারা দেশের সব মানুষকেও ভাবিয়ে তোলে।
রাইজিংবিডি: নারীরা তো এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব সব কাজে অংশ নিতে পারছেন...
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: সেটা ঠিক আছে। তবে, একটা ৬ বছরের শিশুকে যখন একজন ষাটোর্ধ্ব পুরুষ ধর্ষণ করে, তখন আমাদের ধরে নিতে হয়, সব নারী এখনো নিরাপদ নয়। যখন দেখি, লোকাল বাসে একজন নারী দাঁড়িয়ে আছেন, আরেকজন পুরুষ নারীর সংরক্ষিত আসনে বসে আছে, তখনই মনে হয় নারীরা এখনো পূর্ণ অধিকার পাচ্ছে না।
রাইজিংবিডি: অফিস বা অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর সঠিক মুল্যায়নে ঘাটতি দেখেন?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি অবশ্যই আমাকে দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত মনে করেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যখন দেখি একজন নারী তার দায়িত্বে বসার পর সমমানের একজন পুরুষের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হচ্ছে, নারীকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।
রাইজিংবিডি: নারীর স্বাধীনভাবে চলতে বাধা কোথায়?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: প্রশ্ন সেখানেই। একজন নারীর স্বাধীনভাবে চলাচলের সব সুযোগ রাষ্ট্র যেখানে দিয়েছে, সেখানেও একজন নারীর সেই স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারছে না। আমার কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আমি নিরাপত্তার অভাবে একা সে জায়গায় যেতে পারছি না। যেখানে আরেকজন ছেলে বন্ধু সে কিন্তু ঠিকই যেতে পারছে। এটি সত্যিই দুঃখজনক।
রাইজিংবিডি: কিন্তু এখনো নারীরা পুরোপুরি সাহস করতে পারে না কেন?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: ওই যে 'হয়তো' কথার মাঝেই আটকা থাকে। আমি হয়তো খুব সাহস করেই বেরিয়ে পড়লাম কিন্তু আমার এই সাহস করে বেরিয়ে পড়ার মাঝে ইনসিকিউরিটি কাজ করে। হয়তো সেখানে আমার বিপদ হতে পারে। এ 'হয়তো' শব্দটিই একজন নারীর জন্য বড় বাধা। আমার মেয়েও যদি কোথাও একা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়, আমি তাকে দিতে পারছি না। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিবন্ধকতা।
রাইজিংবিডি: আগে নারীরা নির্যাতিত হতো। এখনও হচ্ছে। কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণে এসব নির্যাতনের বিষয় বেশি বেশি ফোকাস হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই নির্যাতনের মাত্রা আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। কিন্তু কমছে না কেন?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: একেবারেই যে কমছে না বিষয়টি তা নয়। তবে নারীদের প্রতি নির্যাতন তো সামাজিকভাবেই হচ্ছে। কারণ সামাজিকভাবে একজন নারীকে ধরে নেওয়া হয় যে, সে পুরুষের নিচে থাকবে। একটা মেয়ের সবেমাত্র বিয়ে হয়ে নতুন ঘরে এলো কিন্তু তাকে যেভাবে দেখা হচ্ছে, সেই বয়সের আরেকটি ছেলেকে সেভাবে দেখা হচ্ছে না। এটাই সমস্যা।
রাইজিংবিডি: সবই ঠিক আছে। সম্প্রতি যে কোটা আন্দোলন হয়েছে, সেখানে নারীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। নারীদের কোটা থাকার পরেও তারা কেন কোটা বাতিল চায়?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: সত্যিকার অর্থে এই যে কোটাপ্রথার যে পদ্ধতিটা, সেখানে সবকিছুই একটু বেশি বেশি ছিল। যেখানে একটা লিমিট থাকা দরকার ছিল। আপনি দেখেন একটা যে কোটা পদ্ধতি ছিল সেখানে প্রায় ৫৬ শতাংশ কোটার প্রয়োগ ছিল। যেখানে একটা চাকরির মাধ্যমে দেশের কর্ণধারদের দেশের দায়িত্ব নেবে বা সরকারের রাষ্ট্রপরিচালনার মূল দায়িত্বে যাবে। তাদের অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে জায়গায় যেতে হবে। সেখানে বিভিন্ন কোটার মাধ্যমে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দেওয়া সত্যিকার অর্থে একজন মেধাবীকে বঞ্চিত করার শামিল।
রাইজিংবিডি: ব্যক্তিজীবনে আপনি সফল। অন্য নারীদের প্রতি আপনার কী পরামর্শ?
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে জরুরি নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা।
রাইজিংবিডি: আপনার এগিয়ে আসার অভিজ্ঞতা জানতে চাই। অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ: আমি আসলে কখনো কোনো বাধা দেখিনি। আমার পরিবার আমাকে সব সময় সাহস দিয়েছে। উৎসাহ দিয়েছে। আমাকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছে। আমার জীবনের প্রথম লক্ষ্য, আমি শিক্ষক হবো। আমি শিক্ষক হয়েছি। শিক্ষক হওয়ার পর ধাপে ধাপে আমার আজকের এই অবস্থানে আসা। আমার দক্ষতা দেখে হযতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন মনে করে, আমাকে প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর বানিয়েছে। গত আট বছর ধরে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা করে আসছি। এই কাজে ও দায়িত্ব পালনে আমি কখনো কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। কারণ, এখানে যে কাজটি করছি, সেটি শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গেই করছি।
ঢাকা/ইয়ামিন/হক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন