ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

করোনাভাইরাস রোধে সারা দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। এ অবস্থাতেও  নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ থেমে নেই।

কিছু দিন আগে জামালপুরে এক গার্মেন্টসকর্মীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।  ময়মনসিংহের ভালুকায়  নয় বছরের  শিশুকে ধর্ষণসহ  সারা দেশ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর  আসছে।

সর্বশেষ বুধবার (৮ এপ্রিল) বরগুনার তালতলী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের বিরুদ্ধে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

এই সঙ্কটময় পরিস্থিতে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মানবাধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অপরাধীদের দিকেও দৃষ্টি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায়   সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব শ্রেণি পেশার মানুষ কাজ বাদ দিয়ে এখন ঘরে বা বাসায় অবস্থান করছেন। অল্প জায়গায় দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে। আবার দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষের পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। কবে মানুষ  স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাও অজানা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‍দৃষ্টিও অন্যদিকে। এমন অনিশ্চিত  পরিস্থিতে ধর্ষণ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা  বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে  মানবাধিকারকর্মী  শিপা হাফিজা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা অতীতে  প্রাকৃতিক ‍দুর্যোগ যেমন বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের সময় নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন বাড়তে দেখেছি। করোনাভাইরাস তো তার থেকেও ভয়ঙ্কর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মানুষ এখন সব কাজ বাদ দিয়ে ঘরে অবস্থান করছে।  নারীর ওপর চাপ বেড়েছে। পুরুষ মানুষ সব সময় ঘরের মধ্যে থাকলে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ে । এছাড়া, শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে অনেক পরিবার নারীর উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখনতো তারা কাজে যেতে পারছেন না। আবার অনেক পরিবারে অভাব বেড়েছে।  এমন অবস্থায় নারী নির্যাতন বাড়তে পারে। মানুষের দৃষ্টি  এখন করোনাভাইরাসের দিকে থাকায় হয়তো আমরা নারী নির্যাতনের সব খবর জানতে পারছি না। মিডিয়াতেও খবরগুলো সেভাবে আসছে না।  আমি এ বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উপপরিচালক অ্যাডভোকেট নীনা গোস্বামী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  দৃষ্টি  করোনাভাইরাস মোকাবিলার দিকে। রাস্তা ঘাটে লোকজন নেই। সব কিছু নিরব। কিছু খারাপ চরিত্রের  মানুষ সুযোগ খোঁজে। কিছু দিন আগে কুমিল্লায় এক প্রতিবন্ধী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া, এখন তো স্বল্প জায়গার মধ্যে সবাইকে থাকতে হচ্ছে। পরিবারে অভাব-অনটন দেখা  দিলে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে এ বিষয়েও ওপরও দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করছি।’

নারী ও শিশু নির্যাতনের সর্বশেষ তথ্য জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কর্মকর্তা ফয়জুল ফরিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান আমাদের অফিসে রয়েছে। এখন অফিস বন্ধ থাকায় এ তথ্যগুলো আপাতত দিতে পারছি না।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম (এনডিসি) রাইজিংবিডিকে বলেন,  ‘প্রথমেই বলবো, দেশের এম ক্রাইসিস মুহুর্তে যারা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মত জঘন্য অপরাধে জড়িত তাদের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে কি না, শাস্তির আওতায় তাদের আনা হচ্ছে কি না, সে  বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকার পদক্ষেপ নেবে। আমি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমি নিজেও এই মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। দেশের  সঙ্কটময় মুহুর্তে এটাকে ছোট করে দেখলে চলবে না।’

 

ঢাকা/মেহেদী/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়