ছোটখাটো অভ্যাস যখন ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ (শেষ পর্ব)
লাইফস্টাইল ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
হাত মেলানো, কেনাকাটা, সেলফি- এসব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হতে পারে। কিন্তু ছোট ছোট এসব অভ্যাস আদতে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই প্রকাশ করে। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।
সময়ানুবর্তিতা: এক গবেষণায় দেখা গেছে, সময় মেনে চলা ইতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। গবেষণাটিতে একদল মানুষকে গবেষকগণ ব্যক্তিত্ব মূল্যায়ন বিষয়ে একটি বাড়ির কাজ দেন এবং তাদের পরের দিন আসতে বলেন। গবেষকগণ তাদের আসার সময়গুলো লক্ষ্য করেন। দেখা যায় যে, যারা সময়মত এসেছেন তারা বেশ বিবেকবান এবং অমায়িক স্বভাবের, যারা সময়ের আগে এসেছেন তারা বেশ পাগলাটে স্বভাবের এবং তুলনামূলকভাবে দেরীতে আসা মানুষগুলো বেশ শান্ত স্বভাবের।
খাবার খাওয়ার ধরন: বিজ্ঞানের মতে, আমরা যা খাই আমরা তাই। বিজ্ঞান এটাও বলে, আমরা যেভাবে খাই, আমরা তাই। গবেষক এবং একজন মনোবিজ্ঞানী জুলিয়েট বোঘোশিয়ানের মতে, খাদ্যবিষয়ক নানান অভ্যাস এবং খাবার খাওয়ার ধরনের মাধ্যমে একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়। যারা ধীরে ধীরে খাবার খায় তারা সাধারণত অনুগত স্বভাবের হয়ে থাকে এবং জীবনকে উপভোগ্য মনে করে, যারা দ্রুত খাবার খায় তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং ধৈর্যহীন হয়ে থাকে, যারা একটু অদ্ভুতভাবে খাবার খায় তারা রোমাঞ্চকর স্বভাবের হয় এবং খাবার বিষয়ে যারা খুঁতখুঁতে তারা বেশ আবেগপ্রবণ এবং পাগলাটে স্বভাবের হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকে আছেন যারা একই প্লেটে বিভিন্নরকম খাবার সাজিয়ে খেতে পছন্দ করেন। তারা সাধারণত বেশ সচেতন এবং বিশদ চিন্তাভাবনার অধিকারী হয়ে থাকেন।
কেনাকাটার ধরন : কাউকে ভালোভাবে চিনতে চাইলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে যান। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ধরনের ক্রেতা আছে। কেউ আছেন- একটি শ্যাম্পুর বোতল কিনতে গিয়ে সে আপনার জন্য সারা দোকানের শ্যাম্পু যাচাই করে দেখবে। আবার অন্য ধরনের যারা, তারা খুব তাড়াতাড়ি একটা আপনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়তে চাইবে। দেখা যায় যে, প্রথম শ্রেণীর মানুষেরা বিবেকবান, অমায়িক এবং বিনয়ী হয়ে থাকেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষেরা সাধারণত ধূর্ত, সুবিধাবাদী এবং আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। তাছাড়া আপনার খরচ করার স্বভাব থেকেও আপনার সম্বন্ধে অনেক কিছু আন্দাজ করে নেওয়া সম্ভব।
সেলফি তোলার ধরন: ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে আপনার প্রকাশিত নানান ছবির মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিত্বসম্পর্কিত অনেক তথ্য বের করা সম্ভব, যা আপনি হয়তো কখনো চিন্তাই করেন না। একটি গবেষণায় চায়নার একটি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ১২৩টি সেলফি সংগ্রহ করা হয়। তারপর ছবিতে থাকা সেই ব্যক্তিদের তাদের স্বভাবসম্পর্কিত একটি প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখা যায় যে, অমায়িক স্বভাবের মানুষগুলো নিচের দিক থেকে সেলফি তোলে, বিবেকবান মানুষেরা কোনো ব্যক্তিগত একটা জায়গা ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সেলফি তোলে এবং খোলা মনের মানুষেরা হাসি খুশি একটা চেহারা বানিয়ে সেলফি তোলে। কিছু পাগলাটে স্বভাবের মানুষ আছে যারা উদ্ভট সব সেলফি তুলে বসেন।
হাতের লেখা: অ্যারিস্টটলের সময় থেকেই গ্রাফোলজি নামক পদ্ধতিতে হাতের লেখা দেখে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করার মতো কাজ প্রচলিত ছিল। ক্যাথি ম্যাকনাইট নামে এক গবেষকের মতে, হাতের লেখা দেখে ৫০০০ এরও বেশি ব্যক্তিত্ববিষয়ক বৈশিষ্ট্য বের করা সম্ভব। যাদের হাতের লেখার আকৃতি বড় তারা মানুষপ্রিয় এবং মনোযোগ আকৃষ্ট করার চেষ্টায় থাকে, লেখার আকৃতি যাদের ছোট তারা আত্মকেন্দ্রিক এবং খুব মনোযোগী হয়ে থাকে। তাছাড়া ডান দিকে একটু কাঁত করে যারা লেখে তারা বন্ধুসুলভ এবং আবেগপ্রবণ হয় বেশি। অন্যদিকে যাদের লেখা একটু বাম দিকে কাঁত করা হয় তারা বেশ রক্ষণশীল স্বভাবের হয়। স্বাভাবিক লেখা যাদের তারা বেশ যুক্তিবাদী এবং কর্মতৎপর হয়ে থাকে। তাছাড়া যারা কলমে খুব চাপ দিয়ে লেখে তারা বেশ আবেগী এবং যারা কলমে কম চাপ দেয় তারা সহজসরল স্বভাবের হয়।
ব্যাগ বহন করার ধরন: দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে আপনি আপনার ব্যাগ বহন করে নিয়ে বেড়াচ্ছেন কিন্তু কখনো ভেবেছেন কি আপনার ব্যাগ ধরা বা বহন করার ধরনের মধ্যেও আপনার ব্যক্তিত্বের ছাপ আছে। আপনার হাতের ভাঁজে ব্যাগ রাখা মানে আপনি বেশ পরিচ্ছন্ন স্বভাবের এবং সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন। কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো মানে আপনি সুরক্ষাপ্রবণ। ব্যাগ পেছনের দিকে ঝুলিয়ে নেওয়া মানে আপনি শান্ত এবং গোছালো স্বভাবের। ব্যাকপ্যাক ব্যবহারকারীরা স্বাধীনচেতা এবং আশেপাশের মানুষগুলোর প্রতি খুব যত্নশীল হয়, অন্যদিকে হাতে করে যারা ব্যগ বহন করেন তারা বেশ জেদী, গোছালো এবং দক্ষ হয়ে থাকে।
ঢাকা/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন