গান হতে পারে সবচেয়ে ভালো বন্ধু
খন্দকার এনামুল হক || রাইজিংবিডি.কম
আমরা সবাই কম-বেশি গান শুনি। গান পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কম আছেন।
যুগ যুগ ধরে মানুষ গান গাইছে, শুনছে। কিছু গান অমর হয়ে রয়ে গেছে। কিছু গান সময়ের আবর্তে হারিয়ে গেছে।
উন্নত বিশ্বে ‘সাউন্ড থেরাপি’ নামক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। সাউন্ড বা সুরের মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় হচ্ছে সাউন্ড থেরাপি। এটা বিজ্ঞানসম্মত এবং পরীক্ষিত চিকিৎসা পদ্ধতি।
গান কীভাবে আপনার মন ও শরীর ভালো রাখতে পারে এবং কোন ধরনের সমস্যায় কোন গান শুনতে হবে—আসুন, জেনে নেই তার বিস্তারিত।
মন যখন খুব খারাপ: মনটা খুব খারাপ। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না করা যাচ্ছে না। নেতিবাচক চিন্তাগুলো ঘুরে-ফিরে আসছে। আর দেরি নয়, কম্পিউটারে কিংবা মুঠোফোনে নিমিষেই খুঁজে বের করুন একটি কষ্টের গান। মন দিয়ে গানটি শুনতে শুনতে অশ্রুগুলো ঝরিয়ে ফেলুন। দেখবেন, খুব হালকা লাগছে।
অবসাদ: সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় ব্রেনের ওপর অনেক চাপ পড়েছে? কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে। মাথাটাও ঝিমঝিম করছে? শুনুন কোনো মানদালা হিলিং মিউজিক। তবে তা যেন রাগপ্রধান হয়। চোখ বন্ধ করে ফেলুন। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকুন আর ভাবতে থাকুন—আপনি হেঁটে যাচ্ছেন কোনো গভীর বনের ভিতর দিয়ে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। সামনেই পাহাড় বেয়ে ঝর্ণার জল পড়ছে। ৩০ মিনিট পর চোখ খুলে বেরিয়ে আসুন কল্পনার জগৎ থেকে। এবার দেখুন, কেমন চাঙ্গা লাগছে।
নিচের দুটো মিউজিক আপনাকে খুব দ্রুত অবসাদ থেকে বের করে আনবে।
১।
২।
ঘুমের সমস্যা : নিদ্রাহীনতা। বিছানায় শুয়ে এ পাশ-ও পাশ করতে করতে বিরক্ত। রাত যেন শেষ হয় না। আপনার যে ঘুম আসছে না, তা ভুলে যান। ভুলে যান যে, আপনার ঘুমাতে হবে। কানে হেডফোন লাগিয়ে নিচের লিংকটিতে ক্লিক করুন। মিউজিক চলা অবস্থাতে চোখ বন্ধ করুন। প্রাণ ভরে শ্বাস নিন। আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়ুন মুখ দিয়ে। এভাবে শ্বাস নিন আর ছাড়ুন। দশ বার এমনটি করুন। যে মিউজিকটি বাজছে তাতে মনযোগ দিন। ভাবুন আপনার শরীরটি পুরোটাই অনেক হালকা হয়ে গেছে। আপনি বাতাসে উড়ছেন। আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর ওপর আপনার আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কখন যে ঘুমিয়ে যাবেন, টেরই পাবেন না।
ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় একটি ট্র্যাক:
কাজের চাপ: অফিসে প্রচণ্ড কাজের চাপ। ডেস্কে কাজ জমে গেছে। কখন কাজ শেষ করতে পারবেন, এ দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে? তখন আপনি দেখবেন, আপনার কাজ আরো ধীর গতিতে চলছে। কিছুতেই কাজ এগুচ্ছে না। সবার আগে ভুলে যান, আপনার অনেক কাজ জমে আছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে হেভি মেটালের কোনো গান ছাড়ুন। হতে পারে কোনো হিন্দি গান কিংবা ইংরেজি। তবে গানটা অবশ্যই হেবি মেটাল হতে হবে। এক্ষেত্রে সহজেই বেছে নিতে পারেন ইনিগমা অ্যালবামের ‘দি ভয়েস অব ইনিগমা’। মিউজিকের তালে ডেস্কে মন আনুন। এবার জমে থাকা কাজগুলোর মধ্যে যেটি সহজ, সেটি বের করুন। সেরে ফেলুন। এভাবে অপেক্ষাকৃত ছোট ও সহজ কাজগুলো আগে সেরে ফেলুন। দেখবেন আপনার সব কাজই শেষ।
মান-অভিমানে: স্বামী-স্ত্রী কিংবা ভালোবাসার মানুষের সাথে মনোমালিন্য হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে গান খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ। বেশ সময় পেরিয়ে গেছে। আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারলেন? এবার স্ত্রী কিংবা স্বামীর মান ভাঙানোর পালা। এক্ষেত্রে বাসায় যদি সাউন্ডবক্স থাকে, তাহলে আপনার স্ত্রী কিংবা স্বামীর খুব প্রিয় একটি গান একটু উচ্চ শব্দে ছাড়ুন। আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না, দেখবেন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। এবার সুযোগ বুঝে দুজন দুজনেক ‘সরি’ বলে ফেলুন। বন্ধুর সাথে ভুল বোঝাবুঝি? কিছুতেই প্রেমিকার মান ভাঙাতে পারছেন না? তাকে রিকোয়েস্ট করুন অন্তত একবার আপনার সাথে কোনো রেস্টুরেন্টে বসতে। এবার যে রেস্টুরেন্টে বসবেন, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, সেটিতে যেন সাউন্ড সিস্টেম থাকে। আজকাল সব রেস্টুরেন্টেই সাউন্ড সিস্টেম থাকে। আপনার প্রিয় মানুষটি আসার পূর্বেই রেস্টুরেন্টে হাজির হোন। সাথে পেনড্রাইভে কিংবা মোবাইল ফোনে আপনার প্রিয় মানুষটির সবচেয়ে প্রিয় গানটি লোড করে নিয়ে যান। এমন কোন গান বাছাই করুন, যাতে দুজন দুজনকেই আর মুখ খুলে সরি বলতে না হয়। এবার রেস্টুরেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্তকে রিকোয়েস্ট করুন, আপনার প্রিয় মানুষটি আসলে যাতে সেই মিউজিকটি ছাড়ে।
যাত্রাপথে: দূরের জার্নি। দীর্ঘক্ষণ বাস কিংবা ট্রেনে বসে থাকতে হবে? কীভাবে পার করবেন এ বোরিং সময়টা? না একদমই বোরিং লাগবে না। বরং কীভাবে সময় পেরিয়ে যাবে, বুঝতেই পারবেন না। জার্নির আগের দিন মোবাইলে ভরে নিন প্রিয় গানগুলো। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো গানগুলো যাতে একই ধাঁচের না হয়। এমন ধরণের গান বাছাই করুন, যাতে আপনার মুড সুইং করে? সাধারণত, জার্নিতে খুব ঠান্ডা ধরণের গান বাজালে কিছু সময় পর আপনার বোরিং মুড চলে আসতে পারে। তাই কিছুটা মেটাল, রক মেটাল গান বাছাই করা ভালো। এক্ষেত্রে পুরনো স্মৃতিমাখা গানের বিকল্প নেই। গাড়ি চলবে, ছোট্টবেলার স্মৃতিময় গানে হারিয়ে যাবেন সেই দিনগুলোতে।
ছুটির দিনে: ছুটির দিন। আকাশ মেঘলা। পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বহু বছরের পুরাতন গানগুলো ছাড়তে পারেন। এমনও হতে পারে, যে গানগুলো আপনার বাবা, মা কিংবা আপনার কোন প্রিয়জনের প্রিয় গান ছিল। এতে ভালোবাসা, আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হয়।
সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনায়: আপনি একজন আর্টিস্ট, লেখক বা ডিজাইনার। রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস। সেক্ষত্রে পুরো রাত আপনার নিঃসঙ্গতা কাটাতে মিউজিকের গুরুত্ব বলে বোঝানো দায়। খুব ক্রিয়েটিভ একটা কাজে বসেছেন। হঠাৎ দেখলেন, মাথায় ক্রিয়েটিভ আইডিয়াগুলো ঠিক আসছে না। মনটাকে কাজে ডোবাতে পারছেন না। এলোমেলো ও বিক্ষিপ্ত লাগছে? এক্ষেত্রে মাত্র ১৫ মিনিটেই আপনার মনটা শান্ত করে কাজে ডুবিয়ে দিতে পারে মিউজিক। মন যখন শান্ত হবে, তখন দেখবেন আপনি যা করতে চাচ্ছিলেন, তার সমাধান আসছে চারপাশ থেকে।
ঝটপট মন ও মস্তিষ্ককে শান্ত করতে নিচের ট্র্যাকটি শুনুন।
এভাবে গান আপনার জীবনকে অনেকটা সহজ করে দিতে পারে, যদি উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত গানটি খুঁজে পান। তবে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো, আপনার গান শোনার ব্যবস্থা যদি ক্রটিপূর্ণ থাকে, সেক্ষেত্রে গান আপনার চিকিৎসার পরিবর্তে বিরক্তির কারণ হতে পারে। বাসায় গান শোনার ব্যবস্থা করলে অবশ্যই সারাউন্ডেড স্টোরিও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করুন। আর যদি হেডফোনে গানশোনার অভ্যাস থাকে তাহলে একটু বেশি দামে ভালো ব্র্যান্ডের হেডফোন ব্যবহার করুন। ইদানিং সস্তায় অনেক রকম হেডফোন পাওয়া যায়, যেগুলো আপনার শ্রবণশক্তির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
লেখক: ক্রিয়েটিভ গ্রাফিক্স ডিজাইনার।
ঢাকা/রফিক/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন