ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সৌদিতে নারীকর্মীদের আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হয়েছে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৌদিতে নারীকর্মীদের আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হয়েছে

সৌদি আরবসহ মধ‌্যপ্রাচ‌্যে নারীকর্মীদের যে কোন বিপদের কথা চিন্তা করে আশ্রয়কেন্দ্র এবং দিন-রাত যেকোন সময় যোগাযোগের জন‌্য হটলাইনও চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বিদেশে নারীকর্মী নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। ওসব জায়গাতে শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বেশি। কোনো নারীকর্মী নির্যাতিত হলে ওই শেল্টারে তাদের নিয়ে আসা হয়। এটা তাদের জন্য উন্মুক্ত। ইদানিং ২৪ ঘণ্টা হটলাইন তৈরি করেছি যাতে তারা যেকোনো সমস্যার কথা জানাতে পারে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক নারী দেশে ফিরে বলেন, তার মনিব তাকে অত্যাচার করেছেন। তিনি যদি আমাদের শেল্টার হোমে ফিরে তথ্য দেন, তাহলে আমরা মামলা করতে পারি। কিন্তু তারা ওখানে না বলে দেশে ফিরে এ ধরনের অভিযোগ করেন। তথ্য দিলে সৌদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ভয় কিংবা অন্য কোনো কারণে আমাদের শেল্টার হোমে থাকার পরেও তারা সেখানে কিছু বলেন না। এ বিষয়ে কী করব এখনো ঠিক করা হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখ নারীকর্মী বিদেশে কাজ করেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারের মতো সৌদি আরবে আছেন। অভিযোগগুলো বেশির ভাগই সৌদি আরব থেকেই আসে।

তিনি বলেন, সৌদি আরবেই কাজ করা ২ লাখ ৭০ হাজার নারীর মধ্য থেকে ফিরে এসেছেন আট হাজারের মতো। শতকরা হার অনুযায়ী ৯৯ শতাংশ নারী মোটামুটি ভালো আছেন। দেশে টাকাও পাঠাচ্ছেন।

দেশটিতে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করছি। ’

তবে নারীকর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা আনা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকে নারীকর্মী পাঠানোর আগে তার নিবন্ধন করাতে হবে। রিক্রুটিং এজিন্সি নারীদের পাঠায় কিন্তু কোনো নিবন্ধন করে না। কারা বিদেশে যাচ্ছে এবং কোন বাড়িতে তাদের পাঠানো হচ্ছে- রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এসব তথ্য আমাদের জানায় না। আমরা এ জন্য সব এজেন্সীকে বলেছি, যাকে পাঠাবে তার একটা নিবন্ধন থাকতে হবে। এর ফলে আমরা তাকে খুঁজে পাব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আবার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে যে, সৌদি আরবে নারীরা যাক, সেটা তারা চায় না। কেননা নারীরা গেলে তাদের মাধ্যমেই নিকটাত্মীয়রা সৌদি আরব যেতে পারেন। এর ফলে রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসা হয় না। তাই তারা নারীদের যাওয়ার বিপক্ষে।

মন্ত্রী এ সময় আরো বলেন, ‘সৌদি আরব বা অন্য দেশে বাসাবাড়িতে কাজ করা নারীরাই বেশি নির্যাতিত হন। বাসাবাড়িতে কাজ করতে নির্যাতনের আশঙ্কা বেশি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নারীরা ওখানে তাদের ভাষা বোঝে না, তাদের খাদ্যাভাসের সঙ্গে পরিচিত না। প্রথম যাওয়ার পরে তারা ভাষার সমস্যায় পড়েন। মালিক যা আদেশ করেন, তিনি তা বোঝেন না। রান্না করতে বললে তার রান্না সৌদিদের মতো হয় না। এ ধরনের বহুরকম গ্যাপ আছে। তবে পাঠানোর আগে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন হতে পারে।’

নারীকর্মী বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বৈষম্য করতে চাই না। অনেকে আন্দোলন করছেন নারীকর্মী পাঠানো বন্ধের জন্য। এতে নারীদের সুযোগ কমে যাবে।’

‘সুতরাং কি করা হবে, এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। যারা দাবি করছেন নারী না পাঠানোর, তারা কি ওদের চাকরি জোগাড় করে দেবেন? দেশে কি ভাল চাকরি হবে তাদের? আমি জানি না। এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা দরকার,’- বলেন ড. মোমেন।

ভিডিও ভাইরাল কন্যা সুমি ফিরেছে:

নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করা গাজীপুরের মেয়ে সুমি দেশে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি সুমি নামে যে নারীকর্মীর দেশে ফেরার আকুতি জানানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, সেটি দেখে আমরা সংশ্লিষ্ট কনসাল জেনারেলের সঙ্গে কথা বলি তাকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু সমস্যা দেখা যায়, ওই মেয়েটি জানাননি তিনি কোন শহরে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তার লোকেশন পাওয়া যায়। কোনো শহর নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক বাসাবাড়িতে তিনি কাজ করেন। তাকে ফেরত আনা হয়েছে।’


ঢাকা/হাসান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়