ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চীন থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর অনন্য মানবিকতা

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চীন থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর অনন্য মানবিকতা

চীন থেকে দেশের জন্য মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত দেখালেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের কারণে চীনসহ বিশ্ব যখন টালমাটাল অবস্থা, চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কট, ঠিক তখনই নিজ দেশের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন চীনের নানথোং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র মিজানুর রহমান সরকার। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর সরকারপাড়া গ্রামের আবু জাফর সরকারের ছেলে তিনি।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানতে পারেন দেশে তার নিজ জেলা জয়পুরহাটে মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কোনো টেস্ট কিট নেই। এ জন্য তিনি যোগাযোগের কোনো উপায় না পেয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন মনের আকুতির কথা জানিয়ে।

গত ২০ মার্চ মিজানুর তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘জয়পুরহাটে যারা দায়িত্বশীল আছেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি মিডিয়া মারফত জানতে পারলাম, জয়পুরহাটে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোনো কিট নেই। তাই আমি চায়না থেকে করোনাভাইরাস টেস্ট করার জন্য কিছু কিট ডোনেট করতে চাই। এ বিষয়ে করণীয় প্রক্রিয়া জানার জন্য জয়পুরহাটে যারা স্বাস্থ্য বিভাগে জড়িত আছেন, তাদের সাহায্য কামনা করছি।’

তার এই পোস্ট চোখে পড়ে জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদের। পরে পুরো বিষয়টি জানিয়ে বুধবার বিকেলে হুইপ নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেন।

তিনি লেখেন, একটি ছেলে চায়না থেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে যে, সে জয়পুরহাটে কিছু করোনা টেস্টিং কিট পাঠাতে চায়। জয়পুরহাটের দায়িত্বশীল কেউ যেন যোগাযোগ করে। আমার চোখে পড়ায় আমি তাকে তার ফোন নম্বর দিতে বলি। সে নম্বর দিলে আমি ফোন করি।

সে চায়নার নানথোং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে প্রায় গৃহবন্দি। বাইরে বেরুতে পারে না। কিন্তু দেশের জন্য, এলাকার জন্য তার হৃদয়ের আকুতি অনুভব করে আমি অভিভুত। সে মানুষের জন্য কিছু করতে ছটফট করছে। সে কিছু করোনা টেস্টিং কিট পাঠাতে চায়। কোনো উপায় পাচ্ছে না, রাস্তা পাচ্ছে না।

আমি তাকে পুনরায় ফোন করার প্রতিশ্রুতি দিলাম। রাত পোহালে বিমান প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতা নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়ে তাকে ফোন দিলাম।

আমার ফিরতি ফোন পেয়ে আনন্দে তরুণটির চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে তা একজন পিতা হিসেবে হাজার মাইল দুরে বসেও অনুভব করলাম।

তাকে ঠিকানা দিলাম, চায়নার গোয়াংজুতে ইউএস বাংলার জিএসএ অফিসে মালামাল পৌঁছানোর জন্য। সে যে কি খুশি। এই খুশি মিলিয়ন ডলারে কেনা সম্ভব নয়। সে তার বৃত্তির টাকা বাঁচিয়ে অনেক কষ্ট করে ১০০টি টেস্টিং কিট, টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় এসিড ও ড্রপ কিনে কুরিয়ারে করে গোয়াংজু পৌঁছে দিয়েছে।

খুব লজ্জা নিয়ে বলেছে, আমি ছাত্র মানুষ, মাত্র ১০০টি দিতে পারলাম, ইচ্ছে ছিল কমপক্ষে ৫০০ দেবার। আমি বললাম, তোমার এ ১০০ আমাদের কাছে ১ লাখের সমান। আশা করছি ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ওগুলো দেশে আনবে।

ছেলেটির মানবিকতা আমাকে অভিভুত করেছে। এরই নাম দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ।

তোমাকে অভিবাদন
মিজানুর রহমান সরকার।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ওই কিটগুলো দেশে আসার কথা রয়েছে।


ঢাকা/আসাদ/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়