হাসপাতাল হোক, তবে…
ছবি : শাহীন ভূঁইয়া
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির খবরে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে সে বাধা কেটেছে। তবে স্থানীয়দের এ বিক্ষোভ হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয়।
রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আশপাশে বাসাবাড়ি ও কারখানাবেষ্টিত আকিজ গ্রুপের প্রায় ২ বিঘা জায়গা খালি রয়েছে। ভেতরে প্রবেশের পথ বন্ধ করে নিরাপত্তায় আছেন মোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
দরজার ফাঁকা দিয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুদিন ধরে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য বড় বড় লোহা দিয়ে অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার (২৮ মার্চ) স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করায় কাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের বিদায় করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার।’
নিরাপত্তা প্রহরী রাইজিংবিডির প্রশ্নে বলেন, ‘হাসপাতাল হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ কারণে পাহারায় আছি।’
সামনে জটলা করে ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। প্রশ্ন করা মাত্র শেখ মশিউর রহমান নামে একজন জানান, ‘এখানে হাসপাতাল না হোক তা আমরা চাই না। তবে তা করোনা রোগীর জন্য হতে পারবে না। কেননা এই এলাকায় বিভিন্ন মিল ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে অনেক বাসাবাড়িও রয়েছে। করোনা একটি ছোঁয়াচে রোগ। সেক্ষেত্রে এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হলে এলাকায় মহামারি দেখা দিতে পারে।’
তবে এলাকার চিন্তা করে অন্য কোনো হাসপাতাল হলে প্রয়োজনে আমরাই সহযোগিতা করবো বলে এ সময় অনেকেই মন্তব্য করেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল্লহ শফিকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল না হওয়াই ভালো। কেননা এটি একটি মহল্লা। ভাইরাসটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
আর এলাকায় হাসপাতাল হওয়া ভালো মন্তব্য করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখানে যে হাসপাতাল হচ্ছে তা জানতাম না। শনিবার লোকজন জড়ো হলে বিষয়টি জানতে পারি। হাসপাতাল হলে আমরাও এখন সহযোগিতা করবো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন আমাদের না জানিয়ে গোপনে করলো তা বোধ্যগম্য নয়। তারা এক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে করা হবে। আগে হাসপাতাল হোক তারপর বলা যাবে সেটি করোনার জন্য না অন্য কোনো রোগের হাসপাতাল হবে।’
এ বিষয়ে আকিজ গ্রুপের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য না পাওয়া গেলেও হাসপাতাল নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণে বাধার কথা শুনেছি। আকিজ গ্রুপের লোকেরা জানিয়েছেন। তবে এতটুকু বলতে পারি করোনা রোগীর জন্য হাসপাতাল করা হলেও সবকিছু মেনেই করা হবে। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না।’
জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৩০১ শয্যার হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারের পেছনের নির্মাণাধীণ এই হাসপাতালে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ খবরে শনিবার সেখানে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন।
ঢাকা/মাকসুদ/জেডআর
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন