ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিভিন্ন স্থানে ১০ টাকা কেজি দরের চাল উদ্ধার, জরিমানা

ডেস্ক রিপোর্ট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিভিন্ন স্থানে ১০ টাকা কেজি দরের চাল উদ্ধার, জরিমানা

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে দেশে অবরুদ্ধ অবস্থায় কর্মহীন, অসহায়, দুস্থ মানুষের মধ্যে সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করছে। গ্রামাঞ্চলে ডিলারের মাধ্যমে এই সব চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এই চাল নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও চাল উদ্ধার ও জরিমানা করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আমাদের প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা এ সংক্রান্ত খবর পাঠিয়েছেন।

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় বিতরণ না করে গুদামে রেখে দেওয়া ১০ টাকা কেজি দরের ২১ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের ওএমএস’র ডিলার আব্দুল গণির গোডাউন থেকে চাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গণি পালিয়ে যান।

তবে আব্দুল গণির ছেলে সবুজ মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ বিশ্বাস।

তিনি জানান, তাদের কাছে খবর আসে- ডিলার আব্দুল গণি ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি না করে তার ভাদুরীচরের গোডাউনে মজুদ করে রেখেছেন। বিকেলে অভিযান চালিয়ে ওই গোডাউন থেকে ২১ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।

এ সময় ডিলার আব্দুল গণির ছেলে সবুজকে জরিমানার সত্যতা নিশ্চিত করেন তিনি।

নরসিংদী
নরসিংদীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৩০০ কেজি চাল অন্যত্র বিক্রির দায়ে ব্যবসায়ী মিস্টার মিয়ার ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।

একই সঙ্গে তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার (০৯ এপ্রিল) ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম তাকে জরিমানা করেন।

মিস্টার মিয়া রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে ১০ টাকা কেজি ধরের চালের অনুমোদিত ডিলার ছিলেন।

বরিশাল
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধ। তবে তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মৎস্য অফিসার শিমুল রানী পাল।

মেহেন্দীগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (ইউপি মেম্বার) জামাল খান জানান, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি কার্ডধারী জেলেকে দুই মাসের ফিজিএফের চাল বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

সেই হিসেবে একজন জেলে ৪০ কেজি করে দুই মাসের জন্য মোট ৮০ কেজি চাল পাওয়ার কথা রয়েছে। দুই দিন পূর্বে আন্ধারমানিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম সকল মেম্বারদের ফোন করে বলেন- ওয়ার্ডের অধীনস্ত  জেলেদের কার্ড সংগ্রহ করে গণজমায়েত না করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল পৌঁছে দিতে।

চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী ১, ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড ব্যতিত অন্য ছয়টি ওয়ার্ডের সদস্যরা বৃহস্পতিবার চাল উত্তোলন করতে যান। এ সময় তাদের নির্ধারিত ৮০ কেজি চাল না দিয়ে দুই মাসের জন্য ১৫ কেজি করে মোট ৩০ কেজি চাল বিতরণ করেন চেয়ারম্যান।

ইউপি সদস্যরা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল ইসরাম জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল সঠিকভাবে বিতরণ না করে প্রতি জেলের ভাগের ৫০ কেজি করে চাল আত্মসাত করেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। মেম্বার এবং সুবিধাভোগী জেলেরা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে কাজীরহাট থানার ওসি আনিসুল ইসলাম ও উপজেলা মৎম্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

তবে চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ই্সলাম বলেন, তার ইউনিয়নে ৭২৩টি কার্ড রয়েছে। কিন্তু এর রিপরীতে ৩৮৫টি কার্ডের চাল এসেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় সকল জেলেকে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিজন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দিতে বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী  একজন জেলেকে আপাতত ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। বাকি ১০ কেজি চাল পরবর্তী সংকট মোকাবেলার জন্য রাখা হয়েছে। তাছাড়া এখনো সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। যা সবই গোডাউনে সংরক্ষণে রয়েছে।

জামালপুর

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দেড় টন চাল উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চরবাণী পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বেতমারী গ্রামের আব্দুল জব্বারের গোডাউনে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে চাল উদ্ধার করে।

হতদরিদ্রের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে বরাদ্দকৃত এই চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশে রাখা আছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট তামিম আল ইয়ামীন।

তিনি বলেন, চাল উদ্ধার হলেও চোরাই কাজে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। চাল চোরাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে খাদ্য বিভাগকে  নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানাধীন এলাকায় এক চাল ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারি চাল উদ্ধারের ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর) আবু বকর সিদ্দিক গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে ডবলমুরিং থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী ঝর্ণাপাড়া বিসিক গোডাউন এলাকায় চাল ব্যবসায়ী ফারুক টেডিংয়ের  মালিক ওমর ফারুকের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ২১ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, অবৈধভাবে বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারি চাল সংগ্রহ করে এই ব্যবসায়ী বাণিজ্যিক বস্তায় ভর্তি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে আসছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই গোডাউনে অভিযান চালায় পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আরাফাত মোস্তফা (২৭) এবং আবদুল আজিজ (২২)। তাদের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং মডেল থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।

 

সিফাত/হানিফ/স্বপন/সেলিম/রেজাউল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়