ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আগস্টে তরুণ সমাজের ডাক

মোতাহার হোসেন প্রিন্স || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ৩১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আগস্টে তরুণ সমাজের ডাক

মোতাহার হোসেন প্রিন্স : জাতির পিতার স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলেছে আজকের বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্ন যত বেশি বাস্তবায়ন হচ্ছে, দেশও তত এগিয়ে চলেছে। একই ধারাবাহিকতায় সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতিতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের নিকষ কালো ষড়যন্ত্রের জাল আরো বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। কিন্তু আমরা যে সকল তরুণেরা এ দেশটাকে নিয়ে শুধু সম্ভাবনা আর স্বপ্ন দেখি তাঁরা বিশ্বাস করি, সব বাধা পেরিয়ে বিশ্ব মানবতাবাদের অন্যতম মানবতাবাদী নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসম্ভব ত্যাগ ও মানব কল্যাণে নিবেদিত জীবনাদর্শ নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত লাখো কোটি বাঙালির চেতনা শক্তির কাছে পরাজিত হবে সকল অপশক্তি। তরুণ সমাজকেই জেগে উঠতে হবে। মেধায়, তথ্য প্রযুক্তির যে বিপ্লব সারা দেশে ঘটেছে সেই প্রযুক্তির সাথে প্রতিটি তরুণ আজ সংযুক্ত। আর এই তথ্য প্রযুক্তিকে অবশ্যই আমাদের মানব কল্যাণে নিয়োজিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে ও সেটা অব্যাহতভাবে ধরে রাখতে হবে।

আমরা দেখেছি স্বাধীনতাবিরোধী মানসিকতা থেকে হোক, আর দেশবিরোধী তৎপরতা থেকে হোক- এই তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তরুণদের, এই দেশের জনগণকে প্রতারিত করা হয়েছে। আজ গুজব সমাজে আলোচিত শব্দ। আজ আমরা দেখেছি গুজব রটিয়ে, ছেলে ধরা সন্দেহে একাধিক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। সমাজে আমাদের বিবেকবোধ কতটুকু লোপ পেয়েছে? কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি গুজব রটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাতক্ষীরা, বগুড়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও ঢাকার জিগাতলায় নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টি হতে। আর এরপর আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের পথে বাধা দিতে একটি মহল মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে- পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে! আর এরই প্রেক্ষাপটে সারা দেশে হাজারো জায়গায় যাচাই বাছাই ছাড়া অনেক নিরীহ নর-নারী এমনকি রাস্তার মস্তিষ্ক বিকৃত পাগলও গণ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছে।

এক সময় দেশের অনেকেই ধরে নিয়েছিল হয়তো ছেলে ধরার বিষয়টি সমাজে আছে। কিন্তু ঢাকার বাড্ডায় ছোট্ট স্কুল ছাত্রীকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে তার মা রেনু নির্মম গনধোলাইয়ের শিকার হয়েছে, অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছে। আজও ছোট্ট সেই স্কুল ছাত্রীটি বিশ্বাস করে- তার মা বেঁচে আছে, তার মা একদিন ফিরে আসবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের যে ফাঁদে আমরা সাধারণ মানুষ পা দিচ্ছি, মিথ্যা তথ্যে প্রতারিত হয়ে ছড়ানো গুজবের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছি, আমরা কি সেই ছোট্ট শিশু সন্তানের মাকে ফিরিয়ে দিতে পারব? যে মা বিধবা হয়ে ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল। নিরাপরাধ সেই মায়ের মৃত্যুর পর সারা দেশে আর কোথাও ছেলে ধরা বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। কেন ঘটেনি? আমাদের বুঝতে হবে। সমাজের মানুষকে প্রতারিত করা দেশবিরোধী চক্রের একটা বড় কৌশল। শোকাবহ আগস্টের এই দিনে বাংলার ৪.৫-৫ কোটি তরুণ সমাজের ডাক হোক- মুক্ত চিন্তা আর চেতনা। যে চিন্তা কখনো এই গুজব সৃষ্টিকারীদের দিয়ে আর প্রভাবিত হবে না। আগস্ট মাসে তরুণ সমাজের প্রতি আরেকটি আহ্বান সমসাময়িক বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণকেই রাজনীতি সচেতন থাকতে হবে। শুধু দেশীয় চক্রই নয় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে কি ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে সে সম্পর্কে দেশের তরুণ সমাজকে অবশ্যই অবহিত থাকতে হবে।

এক সময় আমরা দেখেছি দেশের মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে সরকারবিরোধী তৎপরতা করা হতো, এক সময় দেখেছি উচ্চ শিক্ষিত কিছু মুসলিম পরিবারের সন্তানেরা নিজেদের বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করে অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা করে ৫২ জন বিদেশি ও এ দেশীয় নাগরিককে হত্যা করতে। সেই সময় আমরা লক্ষ্য করেছি বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রসমূহের মতামত।

বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক শান্তিকামী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধীতে ভূষিত হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর মানবতাবিরোধী জঘন্য হত্যাযজ্ঞের পর তাদের স্থান দিয়েছেন শরণার্থী হিসেবে দেশে থাকার জন্য। কিছু দিন আগে পার্শ্ববর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থেকে শিক্ষা নিতে বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ পাঠাবেন। অথচ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ মাইনরিটি সম্প্রদায়কে আজ অনেকেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

কিছুদিন আগে বাগেরহাটে আইসিস পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী গ্রেপ্তার হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে, দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা ধর্ম নিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ এই সরকারের সময়ে মারাত্মক মিথ্যাচার করেছে। এ সময়ে প্রিয়া সাহার সাথে উপস্থিত ছিল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডাকাত দলের সর্দার মুহিবুল্লাহ খাঁন। কিছুদিন পূর্বেই যার ডাকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ সব কিছু নিয়ে তরুণ সমাজকে ভাবতে হবে, যথাযথ ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যে দূরদর্শীতার পরিচয় দিচ্ছে তরুণদের যথাযথ রাজনৈতিক জ্ঞান দেশের সেই অগ্রযাত্রার পথকে আরো মসৃণ করবে। আমি বিশ্বাস করি, ছাপ্পান্ন বছরের ছোট্ট জীবনে জাতির পিতা দেশ মা মাটি আর মানুষের প্রয়োজনে ১৪ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে সময় কাটিয়েছেন। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সকল দুঃখ আর কষ্টকে তিনি হাসি মুখে সহ্য করতেন। দেশ ও মানবতার জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পিতা মুজিবের এই ত্যাগের শিক্ষা, হাজার বছর ধরে কোটি বাঙালির হৃদয়ে রুধির ধারার মতো প্রবাহিত থাকবে। পিতার আপোষহীন আর সংগ্রামী জীবনাদর্শ নিয়ে তার তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে। আর আমরা তরুণেরা দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বপ্ন সারথি। আমাদের চোখে আর বুকে থাকা স্বপ্ন আর চেতনা নিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেগুলো বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখে চলেছি অবিরত।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ আগস্ট ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়