ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বছরজুড়ে মানহীন, বস্তাপঁচা সিনেমার জোয়ার

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বছরজুড়ে মানহীন, বস্তাপঁচা সিনেমার জোয়ার

ডিজিটাল এই সময়ে ঢাকাই চলচ্চিত্র নাজুক অবস্থা কাটিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু ব্যবসাসফল সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কম। চলতি বছরে আমদানি ও যৌথ প্রযোজনাসহ ৫২টি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। আরো দুটি সিনেমা মুক্তি পাবে। এগুলোর মধ্যে দু’একটি বাদে কোনো সিনেমাই ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়নি। এছাড়া দর্শক হৃদয় স্পর্শ করেছে এমন সিনেমার সংখ্যাও হাতে গোনা। সারা বছর আলোচনায় ছিল কিছু সিনেমা। কিছু সিনেমা নিয়ে দর্শকের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বি। কিন্তু মুক্তির পরে সেগুলো আশা জাগাতে পারেনি।

এছাড়া মুক্তি পাওয়া অধিকাংশ সিনেমা ছিল মানহীন। ডিজিটালের নামে বস্তাপঁচা প্রায় ১৫টি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এ বছর। এসব সিনেমা দেখে দর্শক বিরক্ত হয়েছে। হলবিমুখও হচ্ছে। দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহ থাকায় চলতি বছর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘রাজমণি’ ও ‘রাজিয়া’ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে প্রযোজকও তাদের লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত পাননি।

চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে মুক্তি পায় মাত্র একটি সিনেমা-‘আই অ্যাম রাজ’। নবাগত নায়ক রাজ ইব্রাহিমকে নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়। এ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিচিত মুখ নেই। যদিও সেটি বড় কথা নয়। মূল হলো অভিনয় দক্ষতা। সেই জায়গাটি ছিল না বলেই দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেনি সিনেমাটি। 

মার্চ মাসে মুক্তি পায় মুকুল নেত্রবাদী পরিচালিত ‘বউ বাজার’। এতে অভিনয় করেন শাহরিয়াজ, রাহা তানহা, রেহানা জলি। সিনেমাটির নির্মাণ খুবই দুর্বল। ফলে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২২ মার্চ মুক্তি পায় ‘কারণ তোমায় ভালোবাসি’। গোলাম মোস্তফা শিমুল পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেন সাব্বির আহমেদ, বিথী রানী সরকার, নাজিফা চৌধুরী। সিনেমাটি দু-একটি হলে মুক্তি পায়। স্বাভাবিক কারণেই দর্শকদের কাছে সিনেমাটি পৌঁছায়নি।

জুনে মুক্তি পায় আমীরুল ইসলাম পরিচালিত ‘আলোয় ভুবন ভরা’। এতে অভিনয় করেন সাইফ খান, মিষ্টি মারিয়া, অরুণা বিশ্বাস ও শহীদুল আলম সাচ্চু। সিনেমাটি কয়েকটি হলে মুক্তি পায়। এরপর টেলিভিশনে দেখানো হয়। এটিও দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়।

জুলাইয়ে মুক্তি পায় তাপস কুমার দত্ত পরিচালিত ‘অনুপ্রবেশ’। এতে অভিনয় করেন আনোয়ার সায়েম, সানজিদা ইসলাম, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সিনেমাটিতে ওপার বাংলার কয়েকজন শিল্পী বাদে নতুনদের নিয়ে নির্মাণ করা হয়। এছাড়া প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে থাকায় সিনেমাটি দর্শক দেখেননি। আরো মুক্তি পায় কবি নির্মলেন্দু গুণের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘কালো মেঘের ভেলা’। মৃত্তিকা গুণ পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেন আপন, রুনা খান, সুমন বিশ্বাস।

আগস্ট মাসে মুক্তি পায় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘আকাশ মহল’। এতে অভিনয় করেন ইমন, আইরিন, ড্যানি সিডাক। সিনেমাটি খুবই কম বাজেটে নির্মাণ করা হয়। স্বাভাবিক কারণে সিনেমাটি দর্শক দেখেনি। একই মাসে মুক্তি পায় বশির আহমেদ পরিচালিত ‘ভালোবাসার জ্বালা’। এই সিনেমায় অভিনয় করেন শাকিল খান, অর্পা, শবনম পারভীন, আফজাল শরীফ। নতুন মুখ নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় নির্মাণ কারিশমা দেখাতে ব্যর্থ হয় নির্মাতা।

সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পায় কমল সরকার পরিচালিত ‘পাগলামী’। এতে অভিনয় করেন বাপ্পি চৌধুরী ও শ্রাবনী রায়। সিনেমাটি বেশ কিছু হলে মুক্তি পেলেও মুখ ফিরিয়ে নয় দর্শক। নভেম্বর মাসে মুক্তি পায় মোহাম্মদ আসলাম পরিচালিত ‘বেগম জান’। এতে অভিনয় করেন ইমন ও শিরিন শিলা। স্বল্প বাজেটের এই সিনেমাটি দর্শক গ্রহণ করেনি। ডিসেম্বরে মুক্তি পায় নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবু পরিচালিত ‘গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ’। এতে অভিনয় করেছেন কাজী মারুফ, অরিন, রুবেল, অমিত হাসান। মুক্তি পেয়েছে ডায়েল রহমান পরিচালিত ‘ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২’।

নাসিম সাহনিক পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘গোয়েন্দাগিরি’। এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শম্পা হাসনাইন, কল্যাণ কোরাইয়া, মিম চৌধুরী, সীমান্ত আহমেদ, কচি খন্দকার, তারেক মাহমুদ, টুটুল চৌধুরী, শিখা খান, তানিয়া বৃষ্টি, ইশরাত চৈতি, প্রিন্স প্রমুখ। সিনেমা হলেও টেলিফিল্মের আদলে নির্মাণ করায় দর্শক প্রত্যাখান করেছে। এছাড়াও এই তালিকা বেশ লম্বা। নামেমাত্র চলচ্চিত্র। টেলিফিল্মে কয়েকটি গান জুড়ে দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করায় দর্শক হতাশ হয়ে হলবিমুখ হয়েছে।

মানহীন এসব সিনেমায় নামেমাত্র কিছু শিল্পী অভিনয় করেছেন। এদের কেউ কেউ নায়ক হওয়ার বাসনা থেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। অভিনয় দক্ষতা নেই এমন শিল্পীদের নিয়ে এসব সিনেমা নির্মাণ করা হয়। তবে মানহীন এসব সিনেমার মধ্যে কয়েকটিতে সময়ের আলোচিত শিল্পীরা অভিনয় করলেও নির্মাণ দক্ষতা ও স্বল্পবাজেটের কারণে সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পায়নি।   

ঢাকাই চলচ্চিত্র শিল্পে বক্স অফিস না থাকায় সিনেমা বোদ্ধা, দর্শকদের সমালোচনা ও ব্যবসায়িক ব্যর্থতার ভিত্তিতেই এসব সিনেমার নাম উঠে আসে। মানহীন সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে দর্শক ধীরে ধীরে হলবিমুখ হবেন। দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহ দিনদিন আরো কমে যাবে বলে মনে করেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। মানসম্পন্ন নতুন সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে দর্শক আবার হলমুখী হবেন। ফলে হল মালিকদের লোকসান গুনতে হবে না, প্রযোজকরাও ফিরে পাবেন তাদের লগ্নিকৃত অর্থ- নতুন বছরে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা।   

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়